তার মৃত্যুর কারণ ছিল এপ্লাস্টিক এনিমিয়া
কবি, স্থপতি রবিউল হুসাইন শেষ মুহুর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ট ফেইলিয়র ডিভিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হকের অধীনে ভর্তি ছিলেন। তার মৃত্যুর কারণ বর্ণনা করেন ডা. হারিসুল হক।
তিনি বলেন, তার মৃত্যুর কারণ ছিল এপ্লাস্টিক এনিমিয়া । যখন রক্তমজ্জা থেকে রক্ত তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন শরীরের সবগুলি কোষ কমে যেতে থাকে। প্লাটিলেট কমে যায়। হিমোগ্লোবিন কমে যায়। ডাব্লিউবিসি কমে যায়। সমস্ত রক্তকনিকা যায়। এক্ষেত্রে বয়স একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরও বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটাকে কেউ কেউ এক ধরণের ব্লাড ক্যানসারও বলে থাকেন।
রোগের প্রেক্ষিত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন ঢাকায় খুব ডেঙ্গু হচ্ছিল। সে সময় ঢাকা ক্লাবে সবার রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে ডেঙ্গুর জন্য। উনিও রক্ত পরীক্ষা করেছেন। তখন বলল যে ডেঙ্গু নেগিটিভ কিন্তু প্লাটিলেট কম। তখন তার প্লাটিলেট ছিল ৮৭ হাজার। তখন উনার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, উনি রিপোর্ট নিয়ে আমার কাছে চলে আসলেন। তখন রিপোর্টটা দেখে আমার ভিতরটা মুচড়ে উঠল। মনে হলো ব্যাপার কি! বয়স তো তার এখন ৭৬। তখনই আমি আবার টেস্ট করালাম।’
‘পরে দেখলাম, তখন তার প্লাটিলেট ৮২ হাজার। তখন দেখলাম তার প্লাটিলেট আরও কমে যাচ্ছে। তখন আমি বললাম, ভাই আপনার হেমাটোলজিক্যাল টেস্টগুলি দরকার। উনি বললেন না, আমার তো ইন্ডিয়া যেতে হবে। জরুরী কাজ। শিল্প, সাহিত্য বিষয়ক। তখন আমি হেমাটোলজির প্রফেসর মাসুদা বেগম উনার সঙ্গে কথা বললাম। উনি বললেন, উনি ইন্ডিয়া ভ্রমণ করতে পারবেন। উনার অনুমতি নিয়ে আমি যেতে বললাম। উনি তিনদিনের জন্য গেলেন। যাবার পর সেখানে সবাই বলল, যে তুমি এক কাজ করো ইন্ডিয়াতে যখন এসেছ রক্তবিদের একজন অধ্যাপককে দেখাও।’
‘কলতাকার বন্ধুদের পরার্মশে তখন উনি কলকাতার এপোলেতে গেলেন। গিয়ে একজন স্বনামধন্য হিমাটোলজিস্টকে দেখালেন। উনি দেখে বললেন ঠিক আছে। আপনার এটার কারণ হচ্ছে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি এর অভাব। কতগুলো ইনজেকশন দিলেন এবং বললেন ঢাকায় গিয়ে এগুলো চালান। তিন মাস পরে আসবেন।’
তিনি বলেন, ‘উনি এরপর লক্ষ্মী ছেলের মতো দেশে চলে এসেছেন। এরপর ১৫-২০ দিন পরে উনি আমাকে ফোন করে বললেন, ভাই আমার তো মলদ্বারে সমস্যা হচ্ছে। আমি একটু আসি। যেহেতু সব ডকুমেন্ট আমার কাছে আছে। আসার পরে আমি বললাম যে, আপনি যা বলছেন তা একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার ঠিক উল্টো পাশেই বসেন। তার কাছে দেখাতে বললাম। এরপর মাসুদা আপার সাথে কথা বললাম। আপা বললেন, তাকে কালকেই আমার কাছে আসতে বলেন। উনি গেলেন আপা দেখে বললেন বোনম্যারো বায়ােপসি করেন। বোনম্যারো বায়োপসি করা হলো। ধরা পড়ল এপ্লাস্টিক এনিমিয়া।
‘আমি বললাম ভর্তি হয়ে যান। ভর্তি হয়ে যাবার পরে এই রক্ত দেই, প্লাজমা দেই। সকালে হয়ত হয় ১৫, বিকেলে ৩৫, পরের দিন ৪৬। পরের দিন কমে আবার ১৫ আসে। উনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন ১৬ তারিখ। মেডিকেল বোর্ড হলো ১৮ তারিখ। ওষুদপত্র চলছে। পরশুদিন এগারটার দিকে কেমন খারাপ লাগছে বলল। পরে, স্ট্যাবল হলো। সব ডাক্তাররা দেখল। সবকিছু ঠিক আছে। ভোর রাত্রের দিকে উনি খারাপ হয়ে গেলেন। উনার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো। তারপরে আইসিইউতে যায়গা পাওয়া যায় না। তখন আমি বললাম যে, আমাদের কার্ডিয়াক আইসিইউতে নিয়ে আস। এরপর তাকে আইসিইউতে নিয়ে আসল। আমার ডাক্তাররা সবাই চেষ্টা করছে। আমিও ভোরে এসে উপস্থিত হলাম।’
‘প্লাটিলেট কমে গেলে যেটা হয় রক্তপাত। কারো মুখ দিয়ে যায়, কারো দাঁত দিয়ে যায়। উনার লাংসের মধ্যে ব্লিডিং শুরু হয়েছিল। আমরা বুঝতে পারি, চেষ্টা করলাম। সকাল সাতটা পঞ্চান্নর দিকে দেখলাম, উনার আর কোন ওষুধ কাজে আসছিল না। এরপর তার ডেথ ডিক্লায়ার করলাম।’
উল্লেখ্য, কবি রবিউল হুসাইন এবং কবি ও চিকিৎসক ডা. হারিসুল হক দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক অঙ্কনের বন্ধু।
আরও পড়ুন : স্থপতি রবিউল হুসাইন মারা গেছেন
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা