টিকাটুলিতে রাজধানী সুপার মার্কেটের আগুন সন্ধ্যায় ৬ টা ৩৮ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এর আগে সন্ধা ৫টা ১৫ মিনিটে আগুন লাগে। এটি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকাল সোয়া ৫টার দিকে অথাৎ মাগরিবের নামাজের সময় আগুনের সূত্রপাত ঘটে।এসময় চারপাশের ব্যবসায়ী ও মার্কেটের ক্রেতারা আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়।এসময় পুরো টিকাটুলি এলাকার রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে ঢাকা ওয়াসার বেশ কয়েকটি গাড়ি পানি নিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা চালায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪০ জন ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন। আর শতাধিক ব্যবসায়ীর দোকান পুড়ে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
এসব ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে বলে অনেকেই জানিয়েছেন। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, এই মার্কেটের যেখানে আগুনের সুত্রপাত হয়েছে। সেখানে স্বর্নের দোকান, কুকারিজ দোকান, প্লাষ্টিকের মালামাল, সিরামিক্স আইটেম ও কাপড়েরর দোকান র্ছিল। এসব দোকানগুলো পুরে ছাই হয়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ীদের সর্বস্ব হারিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। ব্যবসায়ীদের কান্না দেখে অনেক প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদেরকে শান্তনা দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আক্তার হোসেন জানান, রাজধানী মার্কেটে দোতলায় মাগরিবের নামাজের সময় আগুনের সুত্রপাত হয়। এরপর দোতালার একটি ইউনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীসহ ক্রেতারা ছোটাছুটি শুরু করতে থাকে। আর মার্কেটের দোতলায় যে পাশে আগুন লাগছে, সেখানে বেডশিট, কাপড়, টেইলার্সের ৩০-৩৫টি দোকান ছিল। এজন্য অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কেটের অন্য ইউনিটগুলোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
আগুনের খবর পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। এরপর ঘটনাস্থল থেকে আরও কয়েকটি ইউনিট চাওয়া হয়। এরপর আরো ৬ এবং পরে ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভানোর কাজ করে। পরে আরও তিনটি ইউনিট এসে যুক্ত হয়। মোট ২৫টি ইউনিট কাজ করে।
আল মাহের জুয়েলার্স এর মালিক আবু তাহের বলেন, নিচতলায় তার দোকানসহ মোট ৪৩টি গয়নার দোকান ছিল। আগুন লাগার পর প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় শার্টার নামানো হলেও অনেকে তালা মারতে পারেননি। তার ধারণা মার্কেটের দোতলায় মাঝ বরাবর আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে পোশাক, টেইলার্স, ফোম, কসমেটিকস, কেমিক্যাল, খলনা ও খাবারের দোকান ছিল। এসব দোকানের খাবার বাইওে থেকে রান্না করে আনা হতো।
অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাজধানী সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশের ৬ নম্বর গেটের পাশে নিচতলায় প্রথমে আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়। এরপর মুহূর্তের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে নিচতলার পুরো মার্কেটে। আগুন ছড়িয়ে মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়ও লাগে। আগুনের ধোঁয়ায় পুরো টিকাটুলি এলাকায় ছেয়ে যায়।
রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আবু বক্কর জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এক ঘণ্টারও বেশি সময় চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অপর একজন ব্যবসায়ী জানান, রাজধানী সুপার মার্কেটের একটি পাশ নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট নামে পরিচিত। ওই ভবনের দুই তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুনে সেখানকার অর্ধশতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, মার্কেটের ২৩৫ নম্বর দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এটি ফোমের দোকান ছিল। আর ওই দোকানের সামনে একজন ওয়াল্ডিংয়ের কাজ করতেছিল। আর ওই কাজ করার সময়ই আগুনের সুত্রপাত হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদেরকে জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনন্স অ্যান্ড মেনটেইনেন্স) ল্যান্সনায়েক কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ‘আমরা এখনও হতাহতের কোনও খবর পাইনি। আগুন ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাজ চলবে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বের করার জন্য আগামীকাল একটি তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রাজধানী মার্কেটে ১৫০০ দোকান ছিল। এখানে আহত নিহত কেউ নেই। এরমধ্যে ১৪-১৫ টি দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা আগুন নেভানোর বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছি। কেন আগুন লেগেছে তা তদন্ত শেষে বলা যাবে। এর আগে কেন আগুন লেগেছে তা বলা যাচ্ছে না।
একজন ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম জানান, আজকে দোকানে লোকজন কম ছিল। তাই আমি মতিঝিলে মাল আনতে গেছি। সেখানেই মার্কেটে আগুন লাগার খবর পাই। তাড়াতাড়ি আসার পর দেখেছি আগুন। মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ি সুজন মিয়া জানান, মার্কেটে তার কসমেটিকসের দোকান ছিল। সব পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহা পরিচালক বলেন, গত মাসের ১০ তারিখে দুর্যােগ প্রশমন দিবসে আগে এই মার্কেটে অগ্নি নির্বাপনের মহড়া হয়েছে। তখন আমরা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিয়েছি। তাদের এক মাসের মধ্যে বিদ্যুতের সরিয়ে নিতে বলেছি। এসময় মার্কেট কর্তৃপক্ষ দুই মাস সময় চেয়েছিল। কিন্তু এক মাস ১০ দিনের মধ্যেই এই ঘটনা ঘটল।
উল্লেখ্য, এই মার্কেটের স্বঘোষিত সভাপতি স্থানীয় কাউন্সিলর সম্প্রতি র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার হন। ভুক্তভোগি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় কাউন্সিলর ময়নুল হক মনজু ও তার অনুসারীরা নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। চাঁদা না দিলে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়াসহ নানা হয়রানি, এমনকি নির্যাতন করা হতো। এসব ঘটনায় ২০১৫ সালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে কারাদন্ড দেন।
রাজধানী সুপার মার্কেটে আগুন লাগার পর দুর্ঘটনা এড়াতে ওই এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ রাখা হয়। মার্কেটের আশেপাশে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেগুলোয় রান্নার জন্য গ্যাসের চুলা ব্যবহৃত হয়। আগুনের সংস্পর্শে এসব গ্যাস সংযোগ থেকে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা