ডানে মনসুর আহমেদ, বামে জহির ইসলাম
হবিগঞ্জ থেকে আমাদের গাড়ি ছুটে চলছে শ্রীমঙ্গলের দিকে, গন্তব্য মৌলভীবাজার হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ। সাই সাই করে আমাদের গাড়ি ছুটে চলেছে ভয়ানক সব পথ পেরিয়ে, কখনো উঁচুনিচু টিলার উপর দিয়ে আবার কখনো বিশাল বড় বড় টার্নিং।
দুপাশের চা-বাগানগুলো বিছিয়ে আছে ছোট ছোট পাহাড়ের গায়ে। দিনের বেলায় হলে দৃশ্যপট আরও বেশ লাগতো। গাড়ির ভেতরে শীত অনুভব না হলেও বাহিরে কুয়াশা আর পথচারীদের কানটুপি শীতবস্ত্র দেখে বোঝাই যাচ্ছে ঠান্ডাটা বেশ ভালোই পড়ছে।
আমাদের নির্ধারিত গন্তব্য বাংলা ট্রিবিউনের সাব এডিটর মনসুর আলির বাড়ি। গাদাগাদি ক’রে এ আমরা একসাথে সাতজন বসেছি। মনসুর ও আছে আমাদের সঙ্গে, সে অবশ্য আমাদের মত বসে নেই, বেশ আরাম করে শুয়ে আছে। বলতে গেলে কাল দুপুর থেকেই ঘুমোচ্ছে ছেলেটা।
ভোর সাতটায় ঢাকা মেডিকেলের মর্গে গিয়েও দেখেছি সে ঘুমোচ্ছে, সেখানের দায়িত্বে থাকা আসলাম বড় একটা ডিপের ড্রয়ার টেনে খুলে দেখিয়েছে মনসুরের চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে থাকা নিথর দেহটি।
আরও পড়ুন : অকালেই চলে গেলেন বাংলা ট্রিবিউনের সাব এডিটর মনসুর আহমেদ
মনসুরের শৈশব আর কৈশোর কেটেছে একটা প্রাকৃতিক আবহের মধ্যে, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘর থেকে বের হতেই সে দেখতে পেতো নৌকা, নদী, বিস্তীর্ণ মাঠ, প্রান্তর, আকাশটাও বিশাল বড় হয়ে খুলে থাকতো তার সামনে, যেই ছেলে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এতো বড় আকাশ দেখতো, তার মনও নিশ্চয়ই ঐ আকাশের মতই বিশাল। আর তারজন্যই হয়তো রাতের দুই প্রহর পেরিয়ে গেলেও ঐ বিশাল আকাশের নিচে খোলা মাঠে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছে তাকে শেষ বিদায় দিতে।
কেমন যেনো একটা দুঃস্বপ্নের মতন কাউকে না বলে কয়েই চলে গেলো মিষ্টভাষী সুলভ ছেলে মনসুর।
সে কেবল নম্র আর ভদ্রই নয়, অত্যন্ত মেধাবীও ছিলো। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবন শুরু করে দৈনিক ইত্তেফাক তারপর বাংলা ট্রিবিউনে।
নিয়োগ পরীক্ষায় সকলের মধ্যে মনসুর প্রথম হয়, আর তাই অফিসে অনেকে আদর করে তাকে ফার্ষ্ট বয় বলে ডাকতো। মনসুর কাজের বেলায় যেমন ফার্ষ্ট বিদায় বেলায়ও ঠিক তাই, মনসুর ভাইকে যেমনটা চিনতাম নিশ্চয় ঐ দেশেও প্রথম কোনও একটা যায়গা তার জন্য অপেক্ষা করছে।
# জহির ইসলাম, লেখক, এক্সিকিউটিভ, বাংলা ট্রিবিউন।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা