অনলাইন ডেস্ক
মহানবী (সা.)-এর এই যাত্রার দুটি অংশ ছিল। প্রথম পর্বে তিনি মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় গমন করেন। শরিয়তের পরিভাষায় তাকে ইসরা বলা হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা ইসরা বা বনি ইসরাঈলে যার বিবরণ এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১)
দ্বিতীয় পর্বে তিনি মসজিদুল আকসা থেকে ঊর্ধ্বাকাশে গমন করেন। পরিভাষায় তাকে মিরাজ বলা হয়। সহিহ হাদিস দ্বারা মিরাজ প্রমাণিত। মুফাসসিরদের মতে, সুরা নাজমে আল্লাহ মিরাজের বর্ণনা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘…তখন সে উধ্বদিগন্তে, অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হলো, অতি নিকটবর্তী। ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহি করার তা ওহি করলেন। যা সে দেখেছে, তার অন্তঃকরণ তা অস্বীকার করে নাই; সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে? নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল প্রান্তবর্তী বদরিগাছের কাছে, যার কাছে অবস্থিত বাসোদ্যান। যখন বৃক্ষটি, যা দ্বারা আচ্ছাদিত হওয়ার তা দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি, দৃষ্টি লক্ষ্যচ্যুত হয়নি। সে তো তাঁর প্রতিপালকের মহা নিদর্শনাবলি দেখেছিল।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৭-১৮)
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিশ্বাস হলো, ইসরা ও মিরাজ উভয়টিই মহানবী (সা.) সশরীরে করেছিলেন। মুমিন হওয়ার জন্য ইসরা ও মিরাজে বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, মদিনায় হিজরতের ছয় থেকে দেড় বছর আগে বিস্ময়কর এ সফর সংঘটিত হয়। প্রসিদ্ধ মতানুসারে তা হয়েছিল ২৭ রজব। যদিও এ বিষয়ে তীব্র মতভিন্নতা রয়েছে। (সিরাতে মোস্তফা : ১/২৭৮-২৮১)
আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ.) ইসরা ও মিরাজের বিবরণে লেখেন, মহানবী (সা.) হাতিমে কাবায় শায়িত ছিলেন। এমন সময় জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) আগমন করেন এবং দৃষ্টিসীমার সমান গতিসম্পন্ন বাহন ‘বোরাক’-এর ওপর উঠিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যান। সেখানে আল্লাহ পূর্ববর্তী সব নবীকে সমবেত করেন এবং মহানবী (সা.)-এর ইমামতিতে তাঁরা নামাজ আদায় করেন। এরপর শুরু হয় ঊর্ধ্বগমন। প্রথম আসমানে আদম (আ.), দ্বিতীয় আসমানে ঈসা ও ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আসমানে ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আসমানে ইদরিস (আ.), পঞ্চম আসমানে হারুন (আ.), ষষ্ঠ আসমানে মুসা (আ.) এবং সপ্তম আসমানে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এরপর তাঁকে সিদরাতুল মুন্তাহার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পথিমধ্যে হাউসে কাউসার, জান্নাত ও জাহান্নাম পরিদর্শন করেন। সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছে জিবরাইল (আ.) থেমে যান এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) অগ্রগামী হন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-সহ সব বিজ্ঞ সাহাবি ও কালাম শাস্ত্রের ইমামদের মতে এ সময় আল্লাহর সঙ্গে রাসুল (সা.)-এর চাক্ষুস সাক্ষাৎ হয়। মিরাজের সফরে মুসলিম উম্মাহর ওপর নামাজ ফরজ হয়। (সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া, পৃষ্ঠা ৩৯-৪০)
মক্কার ফিরে আসার পর মহানবী (সা.) যখন ঘটনা, যাত্রাপথ ও মসজিদুল আকসার বিবরণ দেন, তখন সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যায়। অবিশ্বাসীদের বেশির ভাগ মানুষ তা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করে। বিশ্বাসীদের মধ্যেও অনেকে তা অস্বীকার করে। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এ ঘটনার সত্যায়ন করায় ‘সিদ্দিক’ উপাধি লাভ করেন। (খাতামুন্নাবিয়্যিন, পৃষ্ঠা ৪১৫)
মানব ইতিহাসের এই বিস্ময়কর সফরের তাৎপর্য সম্পর্কে সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.) লেখেন, ‘এই ঘটনা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যক্তিত্বের সঠিক ও নির্ভেজাল পরিচয়, এর নির্ভুল নির্দেশনা, তাঁর ইমামত ও নেতৃত্বের বর্ণনা, এই উম্মাহর প্রকৃত মর্যাদা ও অবস্থান নির্ধারণ করে এবং তা অনাগত দিনে পয়গাম ও দাওয়াতের, নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের পর্দা খুলে দেয় যা এই উম্মতকে এই বিশাল বিস্তৃত দুনিয়া ও বিশ্বসমাজে আনজাম দিতে হবে।’ (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ১৫৬)
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা