অনলাইন ডেস্ক
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রধানত জিনগত সমস্যা থেকেই এই রোগ হয়। বংশানুক্রমিকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই রোগ হলে শরীরে স্বাভাবিকভাবে রক্ত তৈরি হয় না। হিমোগ্লোবিনে ত্রুটি থেকে যায়। লোহিত রক্ত কণিকার আয়তন ছোট হয়। তাই রোগাক্রান্তকে অন্য রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করতে হয়। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ১৫ থেকে ৩০দিন অন্তর রক্ত পরিবর্তন করতে হয়।
উপসর্গগুলো দেখা দিলে এইচপিএলসি বা ‘হাই পাওয়ার লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি’পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের করা যায়। থ্যালাসেমিয়ায় থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসা। এছাড়াও যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ-
• বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া যে থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না • খেয়াল রাখতে হবে দু’জন থ্যালাসেমিয়ার বাহক যেন বিয়ে না করেন • বিয়ের পরে যদি দেখা যায় স্বামী অথবা স্ত্রীর মধ্যে এক জন এই রোগের বাহক তা হলে অবশ্যই অন্য জন রক্তপরীক্ষা করাতে হবে • যদি দেখা যায়, স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক তা হলে গর্ভাবস্থায় ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে ভ্রূণের পরীক্ষা করান।
তবে মনে রাখতে হবে, রোগটি কিন্তু ছোঁয়াচে বা সংক্রামকও নয়। এক জন থ্যালাসেমিয়া রোগীর দেহের রক্ত যদি অন্যের শরীরে দেওয়া হয় তা হলেও ওই ব্যক্তির থ্যালাসেমিয়া হবে না। থ্যালাসেমিয়া রোগীর সঙ্গে যৌন সংসর্গেও এই রোগ ছড়ায় না।
থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ
থ্যালাসেমিয়া মাইনরে সামান্য অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা ছাড়া সাধারণত বড় কোনো উপসর্গ থাকে না। থ্যালাসেমিয়া মেজরে সাধারণত শিশুর জন্মের দুই বছরের মধ্যে উপসর্গসহ স্পষ্ট হয়। উপসর্গের মধ্যে আছে-
* অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা
* ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
* অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া
* সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হওয়া
* ক্ষুধামান্দ্য বা খেতে অনীহা
* শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া
* জন্ডিস (হলুদ চামড়া)
* প্লীহাস্ফীতি ইত্যাদি।
অনেক সময় এই লক্ষণ এত বেশি থাকে যে শিশুকে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়।
আলফা থ্যালাসেমিয়ায় শরীরের হাড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে সহজেই হাড় ভেঙে যায়, সঙ্গে রক্তস্বল্পতা, জন্ডিস, প্লীহাস্ফীতি ও অপুষ্টি থাকে। আলফা থ্যালাসেমিয়ার একটি খারাপ ধরন হলো, হাইড্রপস ফিট্যালিস। এ ক্ষেত্রে শিশু জন্মের আগেই অথবা জন্মের কিছু পরেই মৃত্যুবরণ করে।
থ্যালাসেমিয়া রোগীকে নিয়মিত রক্ত দিতে হয়। এতে আবার কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অতিরিক্ত আয়রন বা লোহা শরীরে জমা হয়ে হৃৎপিণ্ড, লিভার ও অনালগ্রন্থিতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। রোগী থাইরয়েড হরমোনজনিত অসুখ, ডায়াবেটিস, অ্যাড্রেনাল ও পিটুইটারি হরমোনজনিত অসুখে আক্রান্ত হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
ডাক্তাররা রোগের ইতিহাস, লক্ষণ, সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা করে থ্যালাসেমিয়া সন্দেহ হলে কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট পরীক্ষা করে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দেখে থাকেন। প্রয়োজন মনে করলে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস পরীক্ষাও করা হয়।
এক্স-রে করে দেখা হয় হাড় কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণত মাথা ও মুখমণ্ডলের এক্স-রে করা হয়। বুকের এক্স-রে পরীক্ষায় অনেক সময় দেখা যায় পাঁজরের হাড় বিকৃতি ঘটেছে। অনেকের হার্টও আকারে বড় হয়ে যায়।
চিকিৎসা
* যাদের রোগটির লক্ষণ নেই তাদের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে তাদের ক্ষেত্রে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ না করা উচিত।
* নিয়মিত রক্তপরিসঞ্চালনের জন্য থ্যালাসেমিয়ায় আয়রন জমা হয়। কিন্তু রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকায় বা ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় আয়রনজাতীয় খাবার খেলে তা বেশি পরিমাণ শোষিত হয়। গরু বা খাসির মাংস, কলিজা, ডিমের কুসুম, তরমুজ, খেজুর, শিম, আলু, বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন থাকে। থ্যালাসেমিয়া রোগীর এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। আবার ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া অযথা মাল্টিভিটামিন বড়ি খাওয়া উচিত নয়। খাবারের সঙ্গে চা খেলে শরীরে আয়রনের শোষণ কম হয়। এ রোগীদের ধূমপান ও মদ্যপান করা উচিত নয়।
* নিয়মিত রক্ত নেওয়া
* লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা যেমন : সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন
* অস্থিমজ্জা বা বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন। (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও হয়।)
* প্লীহা বড় হয়ে গেলে অপারেশন করা ইত্যাদি।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা