ঢাকায় আগামী শনিবার ১৯ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে অসংক্রামক রোগ সংক্রান্ত প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস। ঢাকার মহাখালীর আইসিডিডিআর,বি-এর সাসাকাওয়া মিলনায়তনে গবেষণা পত্র প্রকাশ করার ওপর কর্মশালার মাধ্যমে শুরু হবে। কর্মশালাটি পরিচালনা করবেন বিএমজের ক্লিনিকাল সম্পাদক অনিতা জেইন। ২০ অক্টোবর বিএসএমএমইউতে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আইসিডিডিআর,বি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের (বিএমজে) একটি উদ্যোগ ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ যৌথভাবে এই কংগ্রেসের আয়োজন করছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য ও কংগ্রেসের চেয়ার অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
তিনি বলেন, সবাই অনুধাবন করেন যে বাংলাদেশের জনগণের উপযোগী ও তথ্য প্রমান নির্ভর কার্যক্রম ও চিকিৎসাই কেবলমাত্র অসংক্রামক ব্যাধি সংশ্লিষ্ট মৃত্যুহার ও অসুস্থতা হ্রাস করতে পারে। ক্লিনিকাল রিসার্চ প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের মাধ্যমে চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য গবেষকদের মধ্যে গবেষণার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা একটি নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে, এবং অসংক্রামক ব্যাধি গবেষণার জন্য নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করেছে।
আইসিডিডিআর,বি-এর ইনিশিয়েটিভ ফর নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেসের প্রধান ডা. আলিয়া নাহিদ বলেন, গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ সম্পর্কিত সচেতনতা ও চিকিৎসার মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও আমাদের সামনে এখনও বিশাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশে অপরিণত মৃত্যুহার কমানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা ৩ দশমিক ৪ অর্জন করা বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। এই বৈজ্ঞানিক কংগ্রেস নিয়ে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের আগ্রহ অসাধারণ। আমি আশা করছি, আমরা প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে যে গতিতে এগোচ্ছি তা ধরে রাখতে পারবো, এবং সবাই একত্রে লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব।
অসংক্রামক ব্যাধি বিষয়ে প্রথম বৈজ্ঞানিক কংগ্রেসের লক্ষ্য হলো, একটি শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকদের মধ্যে গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করা। কংগ্রসের মাধ্যমে অসংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনাল কাজগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মাঝে উপস্থাপন ও পরামর্শের সুযোগ থাকছে। প্রথম বারের মতো আয়োজিত এই কংগ্রেস বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধি মোকাবেলা করার জন্য নানান ব্যবহারিক কৌশল বিকাশে সহায়তা করবে এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) লক্ষ্য ৩ দশমিক ৪ – প্রতিরোধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের কারণে অকাল মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদান- অর্জনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮ দশমিক ৭ ভাগ (৫৮ দশমিক ৩ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ দশমিক ৯ ভাগ)। ২০১৫ সালের এক হিসাব অনুসারে, ২৫ বছরের বা তার বেশি বয়সের প্রতি চারজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশের নাগরিক হাইপারটেনসিভ বা উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভুগছে। এখানে প্রতি দশ জনের একজনের ডায়াবেটিস আছে। দীর্ঘস্থায়ী ক্রনিক পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) এর মাত্রা গোল্ড গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে ১৩ দশমিক ৫ ভাগ। ক্যান্সারের প্রকোপও খুব বেশি, এক লক্ষ তিরিশ হাজার থেকে দেড় লক্ষের মত রোগীর রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত, এছাড়াও প্রতিবছর নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন প্রায় ২ লাখ ক্যান্সার রোগী। বাংলাদেশের কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে প্রতি বছর ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার রোগী দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত। কংগ্রেসের জন্য নির্ধারিত নয়টি প্রতিপাদ্য : যে নয়টি মূল প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে সেগুলো হলো, ১) হাইপারটেনশন ও কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ২) বাংলাদেশে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ৩) স্ট্রোক ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগ ৪) মানসিক স্বাস্থ্য ও নিউরো বিকাশসংক্রান্ত ব্যাধি ৫) দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ ৬) রিউম্যাটোলজি ও পেশীসংশ্লিষ্ট ব্যাধি ৭) দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসজনিত রোগ ৮) অনকোলজি এবং ৯) বাংলাদেশে এনসিডি’র প্রমাণ: প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ। কংগ্রেসে দেশের ৪০০ জন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য গবেষক অংশ নিচ্ছেন, যেখানে ২০০ অ্যাবস্ট্র্যাকট (গবেষণা সংক্ষেপ) জমা পড়েছে।
প্রতিটি বিষয়ের অধীনে স্বাধীন জুরি বোর্ড সেরা মৌখিক ও পোস্টার উপস্থাপনার জন্য বিজয়ী নির্বাচন করবেন।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা