বিবিসি বাংলা
মি. ট্রাম্প কোনরকম তথ্যপ্রমাণ না দিয়ে টুইট করেছিলেন: ”ডাকযোগে পাঠানো ব্যালটপত্রে যে ব্যাপক কারচুপি হবে এটা অস্বীকার করার কোন পথই নেই।”
টুইটার এই পোস্টের সাথে একটি সতর্কবার্তা জুড়ে দিয়েছে এবং এটির সাথে একটি পেজ যুক্ত করে দিয়েছে যাতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই দাবি “ভিত্তিহীন”।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর উত্তর আবার টুইট করে বলেছেন সামাজিক মাধ্যমের এই বিশাল প্রতিষ্ঠানটি ”বাক স্বাধীনতার পুরো কণ্ঠরোধ করছে”।
কয়েক বছর ধরেই টুইটারের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিতর্কিত টুইট পোস্ট করা নিয়ে সমালোচনা উঠেছে। এসব টুইটে মি. ট্রাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে অনেক কিছু উড়িয়ে দিয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এ মাসে টুইটার বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বিষয়ে তাদের নতুন নীতিমালা চালু করেছে।
টুইটারে মি. ট্রাম্পের অনুসারীর সংখ্যা ৮ কোটির বেশি। তবে সম্প্রতি মি. ট্রাম্প তার রাজনৈতিক সহযোগী লোরি ক্লাউসুটিসের মৃত্যু নিয়ে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে টুইট করেছিলেন যেখানে তার মৃত্যুর জন্য একজন সুপরিচিত সমালোচককে তিনি দায়ী করেছেন- সেই পোস্টটি নিয়ে টুইটার কোন সতর্কবার্তা দেয়নি।
টুইটার কী বলছে?
মি. ট্রাম্প পোস্টাল ব্যালট নিয়ে যে টুইট করেছেন টুইটার সংস্থা তার সঙ্গে একটি নীল রংয়ের বিস্ময়বোধক চিহ্ণ জুড়ে দিয়েছে সতর্কবার্তা হিসাবে এবং সেইসঙ্গে একটি লিংক দিয়েছে যাতে পাঠকদের বলা হয়েছে ”মেল-ইন-ব্যালট বা ডাকে পাঠানো ব্যালট নিয়ে তথ্য যাচাই করে নিন”।
এই লিংক পাঠকদের নিয়ে যাচ্ছে একটি পাতায় যেখানে মি. ট্রাম্পের দাবিকে বর্ণনা করেছে ”ভিত্তিহীন” বলে এবং সেখানে সিএনএন, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং অন্যান্য গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবরের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
মহামারির কারণে আমেরিকার অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর ডাকযোগে ভোট দেবার জন্য চাপ বাড়ছে, কারণ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে শংকিত বোধ করছেন সংক্রমণের ভয়ে। একটি গবেষণা সংস্থার সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে আমেরিকার ৬৬% মানুষ করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছে না।
তার টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও লিখেছেন: ”মেল বক্সে ডাকাতি করা হবে, ব্যালটে কারচুপি হবে, এমনকী অবৈধভাবে সেগুলো ছাপানো হবে এবং জাল সই দেয়া হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার গর্ভনর লক্ষ লক্ষ মানুষকে ব্যালটপত্র পাঠাচ্ছেন।”
টুইটার তাদের পাতায় ”আপনার যা জানা প্রয়োজন” এই শিরোনামে লিখেছে যে, ”মি. ট্রাম্প ভুয়া দাবি করেছেন ডাকে পাঠানো ব্যালটের মাধ্যমে ‘একটা কারচুপির নির্বাচন’ হবে।”
”তথ্য যাচাইকারীরা বলছেন ভোট কারচুপির সাথে ডাকযোগে ব্যালট পেপার পাঠানোর কোন যোগাযোগ আছে এমন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি,” তারা বলছেন।
টুইটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের সাইটে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে তারা সতর্কবার্তা দিয়ে লেবেলের ব্যবহার আরও বাড়াবে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এধরনের পদক্ষেপ তারা নিয়েছে দেরি করে।
মি. ট্রাম্প ফেসবুকেও ডাকযোগে ভোটের কাগজ সম্পর্কে একই দাবি করেছেন। কিন্তু ফেসবুকে তথ্য যাচাইয়ের ব্যাপারে কোন সতর্ক বার্তা দেয়া হয়নি।
মি. ট্রাম্প উত্তরে কী বলছেন?
মি. ট্রাম্প এর উত্তরে আমেরিকার নির্বাচনে নাক গলানোর জন্য টুইটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এবছর তেসরা নভেম্বর আমেরিকায় নির্বাচন হবার কথা। তিনি বলেছেন, ”টুইটার বাক স্বাধীনতার পুরো কণ্ঠরোধ করছে, এবং, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমি এটা হতে দেব না।”
ট্রাম্প এ যাবৎ ৫২ হাজারের বেশি টু্ইট করেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে তার মত পৌঁছে দেবার জন্য তিনি প্রায়ই টুইটার ব্যবহার করেন।
তিনি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য টুইটার ব্যবহার করেন – উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আনকে লক্ষ্য করে পোস্ট দেয়া থেকে শুরু করে আমেরিকায় তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করার জন্য সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমকে তিনি খুবই বেশি পছন্দ করেন।
২০১৭ সালে লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে লক্ষ্য করে তিনি মুসলিম বিদ্বেষী টুইট করেছিলেন। বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা অ্যান্টনি জার্চার তখন বলেছিলেন এর মূল লক্ষ্য ছিল আমেরিকাবাসীকে হুঁশিয়ার করে দেশের ভেতরে আসলে একটা রাজনৈতিক বার্তা দেয়া।
বিবিসির প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্লেষক জোয়ি টমাস বলছেন মি. টাম্প তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, রাজনীতিক ও অন্যান্য ব্যক্তিত্বকে ঘায়েল করতে এতদিন টুইটারকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসলেও এখন তিনি খোদ এই প্ল্যাটফর্মকে ঘায়েল করার লড়াইয়ে নামবেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদিও বলেছেন টুইটারের “এই বাক স্বাধীনতা হরণের নীতি তিনি বরদাস্ত করবেন না” কিন্তু বিবিসির বিশ্লেষক বলছেন টু্ইটার একটি বেসরকারি সংস্থা এবং তাদের মাধ্যম নিয়ে তাদের নিজস্ব নীতি প্রণয়নের অধিকার তাদের আছে।
কিন্তু সমস্যা হল টুইটার আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোন বিশ্ব নেতার টুইট নিয়ে এধরনের কোন পদক্ষেপ আগে কখনও নেয়নি।
অন্যদিকে মি. ট্রাম্পের বিস্ফোরক মন্তব্যের একটা আকর্ষণ রয়েছে তার অনুসারী এবং অন্য টু্ইটার ব্যবহারকারীদের কাছেও। ফলে টুইটার প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের যে বিরাট পাঠককূল আছে সেটাও হারাতে আগ্রহী হবে না।
বিবিসির জোয়ি টমাস বলছেন তাদের এই নতুন সর্তকবার্তা দেয়ার পদ্ধতি দুয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখার একটা নীতি হতে পারে, যেখানে মি. ট্রাম্পের মত বিশ্ব নেতারা অবাধে তাদের মন্তব্য করতে পারবেন, পাঠকও সেগুলো পড়ার সুযোগ পাবে, অন্যদিকে টু্ইটারও ভুয়া বা বিভ্রান্তিকর তথ্য সম্পর্কে পাঠকদের হুঁশিয়ার করে দেবার দায়িত্বটাও পালন করতে পারবে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা