শেখ মোঃ শিমুল
মুন্সীগঞ্জঃ দেশ ও বিশ্ব যখন করোনা আতংকের মধ্যে রয়েছে। করোনা সতর্কতায় দেশের মানুষকে বাঁচাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দোকানপাট, অফিস, বিপনি-বিতান, মার্কেট, শিল্প-কারখানা ও পরিবহন। এ কঠিন সময় মোকাবেলায় সারা বিশ্বের ন্যায় দেশ নেমেছে করোনা যুদ্ধে । থেমে গেছে অর্থনীতির চাকা। সাধারণ মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। খেটে খাওয়া দিনমজুরের চলমান জীবন যুদ্ধের সাথে যোগ হয়েছে করোনা যুদ্ধ। ভয়-ভীতিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে গোটা দেশ, গোটা শহরে। বাঁচার জন্য সবাইকে কর্ম ছেড়ে এখন ঘরে থাকতে হচ্ছে। দিন এনে দিন খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে দিশেহারা। দেশ নেমেছে করোনা যুদ্ধে। লক্ষ একটাই বিজয়।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে মানুষকে রক্ষার্থে সরকারের সাথে সাথে বিভিন্ন পৌরসভা, স্থানীয় কমিশনার, শিল্প ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সংগঠনের ব্যক্তি বর্গের উদ্যোগে এলাকায়, পাড়া-মহল্লায়, রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক তরল ঔষধ ছিটানো হচ্ছে। স্বল্প আয়ের মানুষকে ত্রাণ সামগ্রী দিতে এগিয়ে আসছেন অনেকে। তবে এসবের যেন কোন চিহ্নই নেই জেলা শহর সংলগ্ন পঞ্চসার ইউনিয়নসহ বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে।
তথ্যমতে পঞ্চসার ইউনিয়ন জেলার একটি বৃহৎ ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ড ও ৩২ টি গ্রাম রয়েছে। ইউনিয়নে স্থানীয়-অস্থায়ী মিলে প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ জনগোষ্ঠীর বসবাস। এই ইউনিয়নের দু’পাশে দুটি আধুনিক পৌরসভা। এ দুই পৌরসভার মাঝে এই ইউনিয়নটিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্পকারখানা। এটি একটি ব্যবসায়িক এলাকাও। শিল্প ঐতিহ্যে ঘেরা এই ইউনিয়নের মানুষের নেই কোন নাগরিক সুবিধা। জেলার এতো বৃহৎ ও শিল্পাঞ্চলের পঞ্চসার ইউনিয়নের মানুষ যেন বরাবরই নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জাতীর এমন ক্লান্তিলগ্নে পরিষদের বা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে দেখা যায়নি উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ। ইউনিয়নের কোথাও ছিটানো হয়নি জীবাণুনাশক তরল কোন ঔষধ। নেয়া হয়নি পাড়া-মহল্লায় হাত ধোয়াসহ কোন সচেতনতামূলক ব্যবস্থা। দু’একজন মেম্বার তার নিজ উদ্যোগে কিছু লোকদের মাক্স ও স্যানেটাইজা দিলেও অধিকাংশ এলাকাই নেই কোন উদ্যোগ। এই ইউনিয়নের স্বল্প আয়ের মানুষের নেয়া হচ্ছে না কোন খোঁজ-খবর। মানুষের এই দূর্যোগ সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ নিজেই যেন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। শিল্প ঐতিহ্যে ঘেরা এই ইউনিয়নে লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস। কিন্ত নেই কোন নাগরিক সুবিধা। নেই কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। রাস্তা-ঘাট, পাড়া-মহল্লা গুলিতে নেই কোন বৈদ্যুতিক লাইটের ব্যবস্থা। বাড়ি-ঘরের রান্না-বান্নার ময়লা ফালানোর নেই কোন ডাস্টবিনের ব্যবস্থা। নানা স্থানে পড়ে থাকে ময়লার স্তুপ। দিন দিন বেড়েই চলেছে মশার উপদ্রব। জমেথাকা ময়লা তুলে নেওয়ার নেই গাড়ির ব্যবস্থা। এলাকার কোথাও দেয়া হয় না মশক নিধনের ঔষধ। মশায় এ ইউনিয়নের মানুষ দিনে-রাতে ঘোমাতে পাড়েনা। মশায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে এলাকার জনগন। ইতোপূর্বে দেশ অারেকটি ভয়নক সময় পাড় করেছে তা হলো ডেঙ্গুতে। সেই সময়েও মশক নিধনে দেয়া হয়নি কোন ঔষধ। বর্তমানে এ করোনার ভয়াবহতা শেষ না হতেই চলে আসবে আবার ডেঙ্গুর সময়। এ অঞ্চলের মানুষ এখন হতাশ। হাজার কষ্টের পড়েও কথা বলতে চাননাক অনেকে ভয়ে।
এ ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান, আমাদের কোন নাগরিক সুবিধার নেই। আমরা একরকম অন্ধকারে আছি। মশা-মাছি নিয়েই বাস্তে হচ্ছে আমাদের। এলাকার রাস্তা গুলিতে নেই কোন বাতির ব্যবস্থা। ফলে অন্ধকার হয়ে থাকে পুরো এলাকা। রাতে রাস্তাগুলো অন্ধকার থাকায় এসকল রাস্তা দিয়ে চলাচলে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। অন্ধকারাচ্ছ রাস্থাগুলিতে চলে মাদক সেবিদের আড্ডা, ছিন্তাইসহ বিভিন্ন রকমের দূর্ঘনাও ঘটছে। গ্রাম পুলিশেরও নেই কোন তৎপরতা। করোনার এ সময়ে ইউনিয়নের কোথাও ছিটানো হয়নি জীবাণুনাশক তরল কোন ঔষধ। নেয়া হয়নি পাড়া-মহল্লায় হাত ধোয়াসহ কোন সচেতনতামূলক ব্যবস্থা।
পঞ্চসার ৯নং ওয়ার্ড সাবেক মেম্বার দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা পঞ্চসারবাসী দীর্ঘদিন যাবৎই নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছি। এ ইউনিয়নে বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সতর্কতা কোনরকম ব্যবস্থা নেয়া থেকে আমারা বঞ্চিত। এছাড়াও খাল গুলি অরক্ষিত এতে নানা ধরণে রোগ জীবানু ছাড়াচ্ছে। এলাকায় কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাই। পাড়া-মহল্লায় গুলিতে বাতির ব্যবস্থা নাই। এসব বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ বলে আমি মনেকরি।
আরেক বাসিন্দা রকিবউদ্দিন মাদবর জানান , করোনা ভাইরাস সতর্কে ইউনিয়ন পরিষদ বা চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কোন ধরনের জীবানুণাশক স্প্রে চোখে পড়েনি। আমাদের অনেকগুলি খাল অবহেলিত হয়ে রয়েছ যা ডেঙ্গুর আশংকা বহন করে। কোন ড্রেনেজের ব্যবস্থা নাই। এলাকার রাস্তাগুলিতে বাতি না থাকায় বৃদ্ধ মানুষের দূর্ভোগ পোহাতে হয় এমনকি অন্ধকারে মাদক সেবন করে মাদকসেবীরা । গ্রামপুলিশকেতো কখনও চোখেই পড়েনা। মসজিদে চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে কোন স্যানেটাইজেশনের ব্যবস্থা আমরা দেখিনি। মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকাই যায়না। এমনকি রাস্তায়ও মশার জন্যে দাঁড়ানোই যায়না। মশা নিধনে আজও কোন পদক্ষেপ নেয়নি ইউনিয়ন পরিষদ। আমরা একেবারেই নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত অবহেলিত।
মুন্সীগঞ্জ কবি পরিষদের সাধারণ-সম্পাদক কবি সুমন ইসলাম জানান, আমরা পঞ্চসার ইউনিয়নের এমন একটি এলাকায় বাসকরি ইউনিয়নবাসী এই ইউনিয়নের সেবা থেকে বঞ্চিত। সারা পৃথিবীতে এমন একটি দূর্যোগ যাচ্ছে সেখানে আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কোন ভূমিকাই নেই। করোনা ভাইরাসের ব্যপারে না আছে তার কোন প্রচার-প্রচারণা না আছে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এ নিথর ভূমিকা আমাদের অসন্তোষ্ট করেছে।
তিনি আরো জানান, এ ইউনিয়নে কয়েক হাজার অবৈধ কারেন্টজাল উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। সেখানকার মালিকরা করোনা বিষয়ে উদাসীন। তার অধিক মূনাফার লোভে কারখানাগুলি এখনও বন্ধ করেনি। সেখানে অসংখ্য শ্রমিক এক সঙ্গে জরো হয়ে কাজ করছে। এব্যপারেও চেয়ারম্যানের কোন উদ্যোগ নেই।
এই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুন্সীগঞ্জ জেলা যুবলীগের শিক্ষা প্রশিক্ষক ও পাঠাগার সম্পাদক হামিদুল হক আজম বলেন, জাতীর এই ক্লান্তিলগ্নে পঞ্চসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ভূমিকা নিরব, যা কাম্যনয়। আমরা জনগন ভোটদিয়ে পাশ করিয়েছি জনগনের দূর্যোগ সময়ে পাশে থাকার জন্যে। কিন্তু এই সময়ে তার কোন ভূমিকা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
দেশের এই কঠিন সময়ে অধিকাংশ এলাকায়ই জীবাণুনাশক স্প্রে করা বা করোনায় কর্মহীন স্বল্প আয়ের মানুষের খোঁজ-খবর নেয়াসহ এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ না দেখতে পাওয়ায় ওই ইউনিয়নের অনেকের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এব্যপারে পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজ্বী মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, আমরা যখন করোনা ভাইরাসের বিষয়টি বুঝতে পেরেছি তখনই প্রতিটি মসজিদে মসজিদে হাত ধোঁয়ার স্যানেটাইজার দিয়েছি। মাইকিং করেছি। লিফলেট বিতরণ করেছি। ইউনিয়নের সরদারপাড়া, ভট্টাচার্যেরবাগ ও বিনোদপুরে স্প্রে করিছি। স্থানীয় মেম্বারদের এ দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে । দুস্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষেকে দেয়ার জন্য সরকারি ভাবে ২০ টি স্লিপ পেয়েছি। আমার নিজ উদ্যোগে ৪ হাজার পরিবারকে চাল, ডাল, আলুসহ খাদ্যসামগ্রী দেয়ার ব্যবস্থা করছি, এটি শীঘ্রই দেয়া হবে।
ইউনিয়নবাসীর নাগরিক সুবিধার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে মুক্তারপুর তেলের পাম্প পর্যন্ত ডিজিটাল বাতি লাগানো হয়েছে। ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লার রাস্তা গুলিতে বাতি লাগানোর মতো ফান্ড আমাদের নাই। সরকার থেকেও কোন ফান্ড নাই, আমরা পাই না তাই বাতি লাগানো সম্ভব হয় না। সরকারি মাধ্যমে পাওয়া যে সোলার বাতি তা স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে যেখানে যেখানে প্রয়োজন হয় সেখানে সেখানে লাগানো হয়। বিগত দিনে সদর উপজেলার ইউএনও’র সহযোগিতা নিয়ে খাল খনন প্রকল্পে খালগুলি খনন করেছি। এলাকার মানুষের নাগরিক সচেতনতা এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব না। যে যার মতো যেখামে খুশি ময়লা ফালায়। আর ময়লা ফালানোর জন্য কোন জায়গা নাই। সরকারিভাবে আমরা কোন খাসজমি পাইনি। যদি খাস কোন জমি সরকারিভাবে আমাদেরকে দেয়, তাহলে পঞ্চসারবাসীর সকল ময়লা এক জায়গায় এনে ডাম্পিং কারতে পারবো। তাড়াতাড়ি আধুনিক করা সম্ভব নয়। আধুনিক করতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ সহযোগীতা করতে হবে, তাহলেই সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, মশক নিধনের ব্যপারে বিগতদিনে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে এবার এই করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি শান্ত হলে আমরা নিজেদের উদ্যোগে আগে থেকেই মশা নিধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমরা নাগরিক সুবিধার দেয়ার চেষ্টা করতেছি। নাগরিক সুবিধার দেয়ার জন্য সরকার থেকে আমাদের কোন সহযোগিতা করেনা। যা পাই তা প্রয়োজন অনুপাতে না। যা প্রয়োজন তাতো আমাদের দিতে হবে। যা করতে হয় তা নিজ থেকে দিয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে করতে হয়।
আরোও পড়তে পারেন : প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে যে মতামত আসল