মাস্ক দিতে পারবে না, জানিয়ে দিয়েছে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক।
তাসকিনা ইয়াসমিন : করোনা ভাইরাসের রোগীর চিকিৎসায় ডেন্টিস্ট এর কাজ কি? সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের ঠিক কত শতাংশ চাকরিজীবী করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সরাসরি কাজ করবে? সেখানে সবার ছুটি বাতিল করে আসলে সরকারিভাবে কি করতে চাইছে? তাহলে কি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে বাস্তব পরিস্থিতি অনুধাবন করতে সক্ষম হচ্ছে না? এই প্রশ্নই ঘুরে ফিরে আসছে চিকিৎসক এবং চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে।
গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এক বার্তায় সকল মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করেছেন। এমনিতে সবসময় বড় ধরণের ঘূর্ণিঝড় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেখা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার সকল চিকিৎসক-নার্স-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করেন। কিন্তু এবারের বিপর্যয়টি অন্য ধরণের এখানে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস। আর ভাইরাসটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে। এই অবস্থায় ঢালাওভাবে সকলের ছুটি বাতিল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসক সমাজ।
একজন সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, সলিমুল্লাহ মেডিকেলের পরিচালক অফিসিয়াল চিঠি দিয়েছেন নিজ উদ্যোগে মাস্ক সংগ্রহ করতে হবে। এটা একজন চিকিৎসক করলে সুইপার কিভাবে করবে? এটা দেখে বোঝা যায়, পুরোটা ‘লেজে গোবরে’ অবস্থা। এখনও এর ভয়াবহতা কেউ বুঝতে পারছে না। যখন এটা দৃশ্যমান হবে তখন খুবই রিস্কি হবে। এখনও কারো সঙ্গে কারোর সমন্বয় নেই। এখন কিছুই করার নেই। এখন বাড়ির বাবা যদি বলে যে আমি খেতে দিতে পারবনা। তোমরা বাড়িতে থাক। তাহলে সেই বাবাকে সম্মান দেয়ার কোন যুক্ত দেখিনা। আমরা তো জানিনা কতজন করোনা আক্রান্ত। কারণ হু বলছে টেস্ট, টেস্ট এন্ড টেস্ট করো। আমরা তো সেভাবে টেস্ট করছি না। গতকাল একজনকে পেলাম তিনি মেডিসিনের এসোসিয়েট প্রফেসর । দেশে ফিরেই রোগী দেখছেন। আর একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তিনিও দেশে ফিরেই সব সরকারি প্রোগ্রামে যাচ্ছেন। এভাবে কে যে রোগ ছড়াচ্ছে এটা বোঝা যাচ্ছে না।
এদিকে, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোর্শেদ রশীদ তার সহকর্মীদের নিজ দায়িত্বে মাস্ক সরবরাহ করে ব্যবহার করতে বলেছেন। এক্ষেত্রে হাসপাতাল কিছু করতে পারবে না বলে তিনি জানান। বিষয়টি নিয়েও চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে।
চিকিৎসক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আড়াই মাস সময় পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা চিকিৎসকের জন্য একটা মাস্কের ব্যবস্থা করেনি। তারা চিকিৎসা খাতের সংশ্লিষ্টদের জন্য বড় কিছু করবে এটা আমরা কিভাবে বিশ্বাস করব? তারা প্রশ্ন রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় কি হাসপাতালে কর্মরতদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিতে পারেন?
চিকিৎসক নেতা নোমান খালেদ চৌধুরী তার এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন ‘প্রিয় চিকিৎসক কোভিড ১৯ প্যানডেমিক। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর জাতিকে চিকিৎসা দিন।’ তিনি অন্য একটি পোস্টে আক্ষেপ করে লিখেন আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, সম্পদের সল্পতার জন্য মাস্ক দেয়া যাচ্ছে না। এতো বড় অপবাদ আপনারা আমাদের দেশের উপর দিলেন! আপনাদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার অক্ষমতার দায়ভার দেশের উপর চাপিয়ে দিলেন, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ই শত কোটি টাকা করোনা মোকাবিলায় ব্যবহারের জন্য বরাদ্ধ দিয়েছেন।
আরেক চিকিৎসক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার এখন যা করছে সেটা জাস্ট নেয়া যাচ্ছে না। কোন পরিকল্পনা নাই। কোন প্ল্যান নাই। যা ইচ্ছে হচ্ছে তাই করছে। এভাবে করে আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু এটা নিয়ে কারো তেমন সতর্ক অবস্থা দেখা যাচ্ছেনা।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলছেন পাঞ্চ মেশিনে পাঞ্চ করলে ভাইরাস ছড়াবে। অন্যদিকে, তারই অধিনস্থ পরিচালক বলছেন ইভিএমে ভোট দিলে ভাইরাস ছড়াবে না। দুই ধরণের কথা বিপদ ডেকে আনে। রাজশাহী ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঞ্চ করতে হচ্ছে। এগুলো মেনে নেয়া যায়না কিন্তু বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হচ্ছে। কারণ যাদের এগুলো নিয়ে কাজ করার কথা তারা তা করছে না।
সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিইও অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বলেন, আসলে স্বাস্থ্যখাতের সবাইকে সতর্ক রাখার জন্য সরকার এই সকলের ছুটি বাতিলের ঘোষনা দিয়েছে। সবাইতো করোনার রোগীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবেন না! তবে, সবাই যেন সতর্ক থাকে তাই এটি করা হয়েছে।
সিনিয়র চিকিৎসক চিন্ময় দাস বলেন, সরকার যেখানে কাজ নাই, সেখানে অফিস বন্ধ রাখবে এটা হওয়া দরকার। কিন্তু এখনও সেটি করছে না। এটা যখন করবে যখন মহামারি হয়ে যাবে তারপর। যা আমাদের সবার জন্য ক্ষতির কারণ হবে।
এ প্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক আফসান চৌধুরী বলেন, এই ভাইরাসটাকে বুঝতে এক মাস দেড়মাস সময় লেগে গেছে। এটা বুঝতে তাদের যে সময় লেগেছে। এতে ক্ষতি হয়ে গেছে। এই ভাইরাসটা ভীষণ ছোঁয়াছে। এখন সরকারের জানেনা আসলে কি করতে হবে? তাই যখন যেটা মনে হচ্ছে সেটাই করছে। এখনই মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতের ছুটি বন্ধ করে দাও সেটাই করছে। সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে নিতে কতটা ক্ষতি হবে আমি জানিনা। সবাই আশংকা করছে দক্ষিণ এশিয়া য় খুব খারাপ অবস্থা হবে? আগামী দুই সপ্তাহ পরে আমরা বলতে পারব আসলে অবস্থাটা কত খারাপ!
ছুটি দিল কিনা এটা কোন বিষয়ই না। কারণ সরকার রিয়্যাকটিভ। সরকার সমস্যা হচ্ছে সমাধান করছে। সরকারের কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোন পরিকল্পনা ছিল কিনা সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। সরকার আসলে মোটেই বিষয়টি নিয়ে প্রস্তুতনা।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা