জাহিদুর রহমান : একদিকে করোনা আতংকে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের ভর্তি করছে না। সরকারি হাসপাতালে করোনা আতংকে ডাক্তার, নার্স কেউ কাছে আসে না, এই ভয়ে তারা সরকারি হাসপাতালেও ভর্তি হতে ভরসা পাচ্ছেন না।
অনেক হাসপাতালে পারসন্যাল প্রটেকশন না থাকায় ডাক্তার এবং অন্যান্য স্টাফরাও জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি বয়স রোগীদের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন।
অন্যদিকে এক শ্রেণীর রোগীরা বিদেশ থেকে আসার তথ্য গোপন করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কারণ পরিচয় পেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করবে না। আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য সরকার নির্ধারিত হাসপাতালে গেলে বলা আইইডিসিআর এর পজিটিভ টেস্ট রেজাল্ট লাগবে। আইডিইসিআর আবার বিদেশ ফেরত কিংবা তাদের পরিবার বা সংস্পর্শ ছাড়া পরীক্ষা করছে না। মানুষ তাহলে কোথায় যাবে?
উপরের প্রতিটি ঘটনাই সত্য, বিএনপি-জামাতের বানানো অপপ্রচার না। যারা ভুক্তভোগী তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। আপনিও বুঝবেন, যখন নিজে কিংবা পরিবারের কেউ এই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন।
যে সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারাইন্টাইন করার সুযোগ ছিল, সেটা না করে এখন খড়ের গাদায় সুই খোঁজা হচ্ছে।
একদিকে বলা হচ্ছে প্রতিটি হাসপাতালে করোনা সেন্টার করা হয়েছে, যথেষ্ট পরিমাণ পিপিই সরবারহ করা হয়েছে, অন্যদিকে ঢাকা শহরের এক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রীতিমত প্রজ্ঞাপন জারি করে বলে দিয়েছেন, পিপিই তো পরের কথা, সামান্য ফেসমাস্কও তারা সরবারহ করতে পারবেন না।
ইটস এনাফ, এনাফ এন্ড এনাফ।
প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে কোভিড-১৯ এর প্যানডেমিক সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সঠিক তথ্য যাচ্ছে না। প্রথম থেকেই এটিকে একটি হালকা সর্দি কাশি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আশ্বস্ত করা হয়েছে। আপনাকে বোঝানো হয়েছে এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কারা কি উদ্দেশ্যে এসব করে সেটি আপনার মত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বুঝতে হয়ত বেশি সময় লাগবে না।
কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে সেসব কিছু চাই না, কারো পদত্যাগও দাবি করব না। শুধু আপনাকে কোভিড-১৯ এর প্যানডেমিক বিষয়ে সিরিয়াস হতে অনুরোধ করব। আপনি আজকেই স্বাস্থ্য, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পররাষ্ট্র, বেসামরিক বিমান চলাচল, স্বরাষ্ট্র, ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের সাথে বসুন। জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিন। প্যানডেমিক মোকাবেলা করতে যেয়ে যেখানে একটি রাষ্ট্রকেই অন্য অনেক রাষ্ট্রের সাহায্য নিতে হয়, সেখানে একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত কোন অধিদপ্তর এই সমস্যার সমাধান করে ফেলবে, এই কথা পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ বিশ্বাস করবে না।
আমরা হাজার হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি দেখে অভ্যস্ত, সুতরাং ১০০ কোটি টাকা নিয়ে আমরা চিন্তিত না, চিন্তিত ৫ টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না, এই কারণে। আমাদের কেনার সামর্থ আছে, কিন্তু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রধানমন্ত্রী, আপনি এই মুহুর্তে দেশের সিনিয়র, অভিজ্ঞ, মেধাবী, চৌকস ভাইরোলজি/মাইক্রোবায়োলজি এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আপনার কার্যালয়ে ডাকুন। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করুন।
ভুল স্বীকার করা মহত্বের লক্ষণ। গোয়ারের মত পাহাড় ঠেলবার কোন দরকার নাই। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কোভিড-১৯ প্যানডেমিক এখনো কমিউনিটিতে সেভাবে ছড়ায় নাই। যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে বিপর্যয় ঠেকানোর সম্ভাবনা এখনো আছে। আপনি প্রতিদিন মিডিয়ায় ব্রিফিং দিবেন, দেখবেন সারা দেশের মানুষ কাজ করবে।
# লেখক, চিকিৎসক।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা