একদিকে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পি.কে. হালদারের মতো মানুষেরা দেশের মানুষের টাকা বিদেশে পাচার করছে। অন্যদিকে, আওয়ামীলীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া মদ, জুয়া এবং যৌন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আয় করছেন কোটি কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে, দেশের মানুষের জন্য কোন বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এই নিয়ে আফসান চৌধুরী বলেন, পাপিয়া মেয়েটি ঢাকার বাইরের ছোট্ট একটা মফস্বল ইউনিটের আওয়ামীগের একজন নেত্রী। তিনি ঢাকার ওয়েস্টিন নামের বড়লোকদের এলাকার সবচেয়ে দামী হোটেলে নাকি দেহব্যবসা চালাত এবং মদ, দেহব্যবসা, মাদক বিক্রিসহ ইত্যাদি কাজ করত। বাংলাদেশে কোন হোটেলে দেহব্যবসা চলে না এটাই খোঁজ নিতে হবে। বেশিরভাগ হোটেলে এটা চলে। মূলত যারা তার খদ্দের ছিল তারা ভোগ করছে এবং আড়াই লাখ টাকার বিল দিচ্ছে এবং সাড়ে তিন কোটি টাকার এটা হচ্ছে, এটা থেকে বোঝা যায়, সে তো অন্যের পয়সা চুরি করছিল না।
তিনি বলেন, যেসব মানুষ অন্যের পয়সা চুরি করে, হারাম পয়সায় রুজি করে তাদের কাছ থেকে চুরি করছিল। চোরের উপরে চুরি করছিল। যা সে করছিল সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য না। তারসঙ্গে যেসব যুক্ত করা হচ্ছে যে, যাদের ব্যবসা করত, অবৈধ অস্ত্র ওগুলো আর পাবলিক খাচ্ছে না। পাবলিক দেখেছে যে, যখনই কারো বিরুদ্ধে কেস বানাতে হয় তার বিরুদ্ধে মদ, অস্ত্র সবারই এটা হয়। জি.কে. শামীম অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করত কিনা সেটা কোন বিষয় নয়। জি.কে.শামীম কত কত হাজার হাজার কোটি টাকা সরকারের মেরে দিয়েছে এবং পাবলিকের মেরে দিয়েছে সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়। ঠিক অন্য যে, খবরটা আসছে যেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ যেটা আমাদের মিডিয়া অনেক কম গুরুত্ব দিচ্ছে। সেটা হচ্ছে বাংলাদেশে লিজিং কোম্পানিগুলাে যেভাবে প্রতারণা এবং ধ্বংসযজ্ঞে নেমেছে । বাংলাদেশের লিজিং কোম্পানির ইতিহাস গত তিন-চার বছর দেখলেই বোঝা যায় যে অত্যন্ত চক্রান্ত করে, বুদ্ধি খরচ করে এবং সরকারের বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তর থেকে কিছু মানুষের সাহায্যে এই ধরণের ফাঁদগুলো পাতা হয়েছিল । পি কে হালদার এবং অন্যান্যরা এই টাকাটা সরিয়েছে। এটা এক-দুই টাকা না, ইব্রাহীম খালেদ যেটা বলছেন, ১৫শ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত সরানো হয়েছে। এটা তো অবিশ্বাস্য!
তিনি বলেন, আমাদের মাথাতেও ধারণা আসেনা। সেই তুলনায় পাপিয়ার পাপ, পাপিয়ার কর্ম কিছুই না। কিছুই না। যে কোন সমাজে এইরকম থাকেই। কিন্তু সেগুলো সমাজের ক্ষতি করতে পারেনা। নষ্ট মানুষগুলোকে তারা আকৃষ্ট করে। কিন্তু যে ক্ষতিটা হালদার করে গেছে সেটা হচ্ছে শত শত মানুষের, গোটা লিজিং সেক্টরের উপরে ভীষণরকম একটা চাপ তৈরি করেছে। আমি মনে করি, এই কিছুদিন আগে পিপলস লিজিংটাও বন্ধ হয়েছে। পিপলস লিজিং যে বন্ধ হয়েছে দেখা দরকার যে কারা এর ভেতরে ছিল। কিন্তু না গণমাধ্যম, না সরকার, না বাংলাদেশ ব্যাংক কেউ এই ব্যাপারে আগ্রহী না। তারা পাপিয়ার পেছনে দৌড়াচ্ছে। কারণ, এটা খুব মুখরোচক। এটা চানাচুর, চিনাবাদামের মতো গণমাধ্যমের খাবারে পরিণত হয়েছে। অপরাধ আর পাপের মধ্যে যে পার্থক্য করতে পারছি না এটা খুব মৌলিক একটা সমস্যা। আমরা ওর কাছে কে যেত, সেটা নিয়ে বিভিন্ন লিস্ট এসেছে। কয়েকটা নামও তার মধ্যে আছে।
তিনি বলেন, আমলার নাম আছে, ব্যবসায়ীদের নাম আছে, এগুলো বানানো বলে আমার কাছে মনে হয়। কেউ না কেউ তো এই লিস্ট ছাড়ছে। আমার যেটা মনে হয় মানুষ ত্যক্ত, বিরক্ত হয়ে এটা করছে। কিন্তু আসল শত্রু তো হালদারের মতো লোকেরা। কেন সরকার এত মানুষকে রিমান্ডে নেয়, এত লোককে গ্রেফতার করে কিন্তু এই যারা হালদারের লোক ছিল তাদেরকে গ্রেফতার করেনি। সরকার কেবলমাত্র তাদের পাসপোর্ট নিয়েছে। সরকার তো এই কাজটি করেনি, কোর্ট করেছে এবং সেটি কতদিন টিকবে সেটাও আমরা জানিনা। গতকাল এই লিজিং কোম্পানিগুলো বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সরকারের সঙ্গে দেখা করেছে এবং আমার মনে হয় সরকার এদের সবাইকে ছাড় দিবে। মানুষের যে ক্ষতিটা হচ্ছে সেটার নিরাপত্তা সরকার দিচ্ছেনা। সাধারণ মানুষের সাধারণ রুজির যে টাকাটা গচ্ছিত রেখেছিল মানুষ বিভিন্ন কারণে। রিটায়ারমেন্টের কারণে। এই একটারও নিরাপত্তা কিন্তু সরকার দেয়নি।
তিনি বলেন, পাপিয়া পাপ করে জাহান্নামে যাক, সেটা আমার কি? সেটা আল্লাহ দেখবে। সেটা তো আমার দেখার দরকার নেই। কিন্তু মানুষের যে ক্ষতি করল! যে মানুষগুলো টাকা রেখেছিল তাদের কি অপরাধ ছিল? এদের রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল সরকারের, এই দায়িত্ব পালিত হয়নি। সরকারের বলা উচিত সরকার কেন ব্যর্থ হলো? সরকারের সকল মানুষ যারা টাকা রেখেছিল প্রত্যেকের কমপালসেশন দেয়া উচিত। আমি যেটা শুনলাম কোম্পানিগুলো নিজেরাই জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। তার মানে সরকার যদি এই কোম্পানির সমস্ত জিনিসগুলো বিক্রি করে টাকা পাওয়া যাবে না। তার মানে এই ক্ষতিটা করার অধিকার কি সরকারকে দেয়া হয়েছিল? পাপিয়া ওখান থেকে যৌন ব্যবসা করছিল সেটা বন্ধ করতে পারে সরকার। এতগুলো অপরাধ হয়ে গেল সেটার ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ সরকার নেয় না কেন? এটা তো কোর্ট নিজে থেকে করেছে। কারণ কোর্টে একজন মামলা দিয়েছে তারপরে কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছে কিন্তু স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে সরকার কেন সিদ্ধান্ত নিল না?
তিনি বলেন, সরকার কেন আটকালো না? এটা তো একদিন, দুইদিনে এই চুরিটা হয়নি। এটা দীর্ঘ দেড়-দুবছর ধরে চুরি হয়েছে। তারা কিছুই জানত না। এতই যদি বাংলাদেশ ব্যাংক অপদার্থ হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক রেখে কি লাভ! তাহলে দেশটাতো পাপিয়াদের হাতে তুলে দেয়া অনেক নিরাপদ। তারা যদি বলে যে মেয়ে সাপ্লাই দেব, তাহলে তো মেয়ে সাপ্লাই দেয়। মদ খাওয়াব যদি বলে তাহলে তো মদ খাওয়ায়। আর এই হোটেলে তারা এতদিন ধরে ব্যবসা করত পুলিশ জানত না! এটা কোন কথা হলো! আমার ৪৭ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা, পুলিশ জানে না এমন কোন কিছু বাংলাদেশে হয়না। পুলিশ কেন এতদিন নীরব ছিল। তাদের কেউ এতদিন কিছু বলেনি। শেষ পর্যন্ত যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে খবর গেছে, তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছে যে পাপিয়াকে ধরো! অতএব, আমাদেরকে বোঝা দরকার যে, মানুষের মধ্যে থেকে আস্থাটা চলে যাচ্ছে। এখন এটা ঠিক সরকারের আস্থার কোন প্রয়োজন নেই। সরকার মানুষ কি ভাবল কি না ভাবল সেটার প্রয়োজন নেই। সরকারের মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সেটা যদি হয় তাহলে তাে আমরা পাপিয়ার পেছনেই ঘুরব!
সাক্ষাতকার গ্রহণ: তাসকিনা ইয়াসমিন, সিনিয়র স্টাফ রিপাের্টার।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা