মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু অধিকার নেত্রী প্রিয়া সাহা কিছু অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, এসব অভিযোগ কী আমলে নেবেন ট্রাম্প? বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে প্রিয়া সাহা যে অভিযোগ তুলে ধরেছেন- তাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, হোয়াইট হাউস বা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কতটা গুরুত্ব দিতে পারে?
কী বলেছেন প্রিয়া সাহা? তিনি ট্রাম্পকে বলেছেন- তিন কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু বাংলাদেশ থেকে নিখোঁজ হয়ে গেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার এই অভিযোগের ফুটেজ সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে সরকারী মন্ত্রী, রাজনীতিক, পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও প্রচুর মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে অনেকে বলছেন, ঐ হিন্দু নেত্রী জেনে-বুঝে বিদেশে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দেওয়ার দাবিও উঠছে।
প্রিয়ার অভিযোগকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে এ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এএন্ডএম ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাজ ও রাজনীতির অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন বলেন, আমেরিকা কোন কথাকে গুরুত্ব দেবে কি দেবে না তা নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর।
অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন বলেন, ‘অভিযোগ যদি এমন দেশ বা অঞ্চল থেকে আসে যেখানে আমেরিকার বিশেষ স্বার্থ আছে, তখন ওই অভিযোগের গুরুত্বও ভিন্ন রকম হয়।’
অধ্যাপক মোমেন বলেন, ‘ইরাক যুদ্ধের আগে ইরাকের নাগরিকরা তাদের অত্যাচার নির্যাতন নিয়ে অভিযোগ করলেই সেগুলো তখন রেডিও, টিভি, সংবাদপত্রে ফলাও করে প্রচার হতো।’
তিনি বলেন, ‘ওইসব অভিযোগ দিয়ে তখন ইরাক যুদ্ধকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা হয়েছে।’
এর আগেও এমনটা হয়েছে। যেমন পঞ্চাশের দশকে কিউবা থেকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে অভাব-অভিযোগ ফলাও করে প্রচার করা হতো।
কিন্তু এখন তেমন পরিস্থিতি নেই বলেই মনে করেন অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এখন যে সম্পর্ক তাতে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রিয়া সাহার অভাব-অভিযোগ তেমন কোনো গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন না তিনি।
তবে প্রিয়া সাহার অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তার সমালোচনাও করেছেন অধ্যাপক মোমেন।
তিনি বলেন, ‘প্রিয়া সাহা যে সংখ্যা বলেছেন তা হয়তো অতিরঞ্জিত হতে পারে, কিন্তু এটা তো সত্যি যে বাংলাদেশেও সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন… আন্তর্জাতিক ফোরামে যে এটা এভাবে উঠলো এটা লজ্জাজনক, দুঃখজনক। এর শুভ সমাপ্তি হবে যদি এইসব ঘটনা আরো কমে আসে এবং শেষ হয়।’
তিনি বলেন, ’বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক এখন আমি বলবো বেশ স্থিতিশীল। সুতরাং প্রিয়া সাহার অভিযোগকে মি ট্রাম্প তেমন কোনো গুরুত্ব দেবেন সে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।’
তিনি বলেন, ‘হয়তো বাংলাদেশ শব্দটি তার পরিচিত বলে প্রেসিডেন্ট প্রিয়া সাহার কথা শুনেছেন… ফটো দেখে হয়তো মনে হতে পারে তিনি অন্যদের কথা মন দিয়ে শুনছেন কিন্তু আমার মনে হয়না এর কোনো ধারাবাহিকতা থাকতে পারে।’
যে অনুষ্ঠানে প্রিয়া সাহা বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সেখানে বিশ্বের ২৭টি দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরা ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও একটি রেওয়াজ পালন করেছেন জানিয়ে অধ্যাপক মেহনাজ বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বের প্রধান শক্তিধর দেশ হয়ে উঠেছে। ফলে, মানুষজন এখনও সেখানে গিয়ে অভাব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘এটা অনেকটা রেওয়াজ হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও সেই রেওয়াজই পালন করেছেন মাত্র।’
অধ্যাপক মোমেন বলেন, ট্রাম্পের শাসনামলে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই যেভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হেনস্থা বাড়ছে, যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়ছে তাতে মানবাধিকার বিষয়ে আমেরিকার অবস্থানের গুরুত্ব দিন দিন কমছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
NB:This post is copied from kalerkantho
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা