ফজলুল বারী
করোনা ভাইরাসের আতংকে থাকা চীন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশেষ বিমানে ফেরত আনতে বাংলাদেশ সরকারের ২ কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে। টাকার চেয়ে এক্ষেত্রে তাদের প্রতি দেশের মানুষজনের এবং সরকারের আন্তরিকতা, সহানুভূতি, ভালোবাসার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এর খেসারত দিচ্ছে বিমান। ন্যাশনাল কেরিয়ার বিমানের যে সব পাইলট-ক্রু দেশের বিপন্ন মানুষজনকে ফিরিয়ে আনতে উহানে গিয়েছিলেন তাদের এখন অন্য দেশ ঢুকতে দিচ্ছেনা। এরপরও উহানে থাকা আরও ১৭১ জনকে ফিরিয়ে আনতে বিমান ভাড়া করার কথা ভাবা হচ্ছে। আর যাদের ফেরত আনা হয়েছে তাদের কেউ কেউ হজ ক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধার স্বল্পতা নিয়ে নিয়ে কথা বলছেন! তাদের আত্মীয়স্বজনদের অনেকে অনেক বক্তব্য দিচ্ছেন! বিষয়টি ভালো লাগেনি।
আমাদের দেশ ছোট। সামর্থ্য কম। কিন্তু এ সামর্থ্য নিয়েও রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ যা করেছে এবং করছে, তা মন ছুঁয়ে যায়। করোনা ভাইরাস নিয়ে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোরই জেরবার অবস্থা। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের এখনও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। কারন এখনও সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি চীনের তরফ থেকে। যারাই এখন চীন ছাড়ছেন তাদের পৃথক পৃথক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন লাল পতাকার দেশটি। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে এনে কোয়ারেন্টাইনে রাখবে দেশটির মূল ভূমি বিচ্ছিন্ন ক্রিসমাস আইল্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত জেলখানায়। ওই দ্বীপের জনসংখ্যা এক হাজারের সামান্য বেশি। সেখানে ৬/৭ শ মানুষ এনে রাখার কোন অবকাঠামো-লোকবল কিছুই নেই। এরজন্যে লোকবল নেয়া হবে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে। পার্থ ও ডারউইনের হাসপাতাল-ডাক্তার-স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনার ধাক্কায় পড়ে গেছে শেয়ার বাজার। সোমবার দিনের শুরুতে পনের মিনিটেই শেয়ার বাজারের লোকসানের পরিমান ছিল ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। চীনের অর্থনীতির সাথে ওতোপ্রত জড়িয়ে থাকায় এরআগে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির কোন সমস্যা হয়নি। এখন চীন নিজেইতো নাজুক অবস্থায়! সে তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থাতো অনেক ভালো বলা চলে।
এখন শুনুন কেনো এই লোকজনকে কোয়ারেন্টানে হজ ক্যাম্পে নেয়া হলো। চীনের কাছ থেকে সবুজ সংকেত এসেছে দেরিতে। শেষ মূহুর্তে সংকেতটি আসে। সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ যারযার নাগরিকদের সরিয়ে আনতে বিমান যাচ্ছে-উড়ছে বলে উহানে এখন বিমান বন্দরের স্লট পাওয়া কঠিন। হঠাৎ একটি স্লট পেয়ে যায় বাংলাদেশ। চীনের প্রস্তাবনা পেয়ে বাংলাদেশ সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। কারন সেই স্লট হারালে আবার কখন স্লট পাওয়া যাবে এর কোন গ্যারান্টি ছিলোনা। তখনই তাড়াহুড়ায় প্রস্তুত করা হয় হজক্যাম্প। এটি বিমান বন্দরের কাছে। নানা কারনে এটি উত্তম পছন্দ হয়েছে। হাসপাতাগুলোয় এমনি ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। এত লোককে রাখার মতো হোটেল নেই ঢাকায়। এক টেলিভিশনে শুনলাম হজক্যাম্পে থাকা একজন বলছেন তাদের বিছানা মেঝেতে। ফ্লোর নোংরা থাকে। অনেক কষ্ট হচ্ছে। হজ ক্যাম্পে হাজীরা অল্প সময় থাকেন। তারা সেখানে মেঝের বিছানাতেই থাকেন ওই সময়ে। চীন থেকে রোগের তাড়ায় দেশে আসা প্রবাসীদের খাট-পালং দিলে ভালো লাগতো। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিলোনা। আজ মেঝে নোংরা? এটাইতো বাংলাদেশ। আর আমরা বিদেশে গিয়েতো দুই দিনের বৈরাগী হয়ে ভাতকে অন্ন বলা শুরু করলে বিপদ।
বিদেশে আমরা নিজেদের ঘর-টয়লেট সবকিছু নিজেরাই ক্লিন করি। নিজের গাড়ি নিজেই চালাই। আমাদের এখানে ঘন্টায় ১৮-২০ ডলার মজুরিতে লোক রেখে ঘর ক্লিন করা আমাদের পক্ষে সহজ- সম্ভব নয়। চীন থেকে আসা বাংলাদেশিরা সেখানে তাদের ঘর তারাই ক্লিন করেন। কাজেই পরিচ্ছন্নতার কাজটি তারা নিজেরাই করলে ভালো লাগতো। বিশ্বকাপের খেলা শেষে জাপানিদের স্টেডিয়াম পরিষ্কার করার দৃশ্যটি এখনও সবার চোখে লেগে আছে। একবার সুন্দরবনে জাপানি পর্যটকদের পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। এত সুন্দর বনে এতো নোংরা দেখে তারা বিচলিত বোধ করেন। কিন্তু বন ঘুরে নানা জঞ্জাল সংগ্রহ করে তা ফেলার মতো বিন না পাওয়ায় তারা হতাশ হন। বিদেশে এসে আমরা এমন অনেক ঘরের কাজ করতে শিখেছি। দেশে যাবার পর তা কেনো ভুলে যাবো! কাজেই পুরো বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে হ্যান্ডেল করা জরুরি। কারও অসতর্ক আচরন বা কথাবার্তায় যেন করোনা সংকট মোকাবেলা ছেলেখেলার বিষয় না হয়। করোনা সংকটকে কেন্দ্র করে বিশ্ব অর্থনীতি আবার মন্দার মুখে। এই নতুন সংকট কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা শুরুর এখনই সময়।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা