তাসকিনা ইয়াসমিন
যেকোনভাবেই স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে হবে। আমরা কাজটা হলো মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য বলা। আমরা কেউই চাইনা ক্যানসারে আক্রান্ত হোক। আমাদের বাংলাদেশে ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাঁচ লাখ টাকা চিকিৎসা বাবদ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের পাশেই নেপালে অনেক আগে থেকেই ক্যানসার হয়েছে এই বিষয়টি জানা মাত্রই পাঁচ লক্ষ টাকা করে দেয়া হয়। নেপালি এবং বাংলাদেশি টাকার মান কিন্তু এক।
ক্যানসারের কারণগুলোর মধ্যে – ধুমপানের কথা আমরা বলি, পান খাওয়ার কথা বলি- মুখের ক্যানসার বা ফুসফুসের ক্যানসার হিসেবে এগুলো ফ্যাকটর হিসেবে চিন্থিত। ভেজাল খাদ্য ক্যানসারের আর একটা কারণ। বায়ুদূষণটা একটা কারণ হতে পারে। আপনারা শুনে আশ্চর্য হবেন যে, আমাদের পাশের দেশ নেপাল সেখানে কাঠমুণ্ডু শহর ধুমপায়ীমুক্ত। কাঠমুণ্ডু শহরে আপনারা কাউকে ধুমপান করতে দেখবেন না।
আমরা যে কাজটা করব, প্রিভেন্ট করার জন্য আমরা কি টাকা পয়সা খরচ করব? আমরা যদি ঢাকা শহরটাকে বায়ুদুষণমুক্ত করতে পারি, ধুমপানমুক্ত করতে পারি, ভেজালমুক্ত খাবার প্রতিরোধ করতে পারি তাহলে এই যে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ প্রতিবছর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে এটা কিন্তু কমে আসবে।
আমাদের সরকারের নীতি হলো – স্বাস্থ্য নীতি। আমি বলব যে আপনারা বলেন যে আমরা জনস্বাস্থ্য নীতি চাই। পৃথিবীর অনেক দেশে এমনকি থাইল্যাণ্ডে ( এখানে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের মধ্যে) সবচেয়ে উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আছে। সেখানে তারা স্বাস্থ্য নীতি বলেনা। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলে না। তারা বলে, পাবলিক হেলথ পলিথি এবং পাবলিক হেলথ মিনিস্ট্রি।
জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল এবং পরিকল্পনার ক্ষেত্রে – প্রায়োরিটিজ ঠিক করতে হবে। আমরা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করছি। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করছি। আমরা সামগ্রিকভাবে ক্যানসার প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করব। আর সেটা করতে গেলে আমাদের এপ্রোচটা ঠিক করতে হবে। তাহলে আমাদের একটা কৌশলপত্র দরকার আছে।
কৌশল বলতে আমি বুঝি – আমি কি করব, কিভাবে করব এবং কতদিনে করব? যখন আমি বলি যে, কিভাবে করব সেটাই আমার পরিকল্পনা হবে। একটা কৌশল ঠিক করতে গেলে আমার অবস্থানটা জানতে হবে এবং টার্গেটটা জানতে হবে। আমার জানতে হবে যে, জনসংখ্যাভিত্তিক আমাদের ক্যানসার রোগী কতজন আছে। আমাদের দেশে সেটা নাই।
আমি হু’র রিজিওনাল এডভাইজার থাকাকালে ১১টি দেশকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাপোর্ট দিয়েছে যে, জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রেশন করার জন্য। আমরা কিন্তু এটাতে পিছিয়ে আছি। তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে! আপনি আপনার অবস্থান জানেননা। আমাদের ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। তারা কিসের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে তা যদি আমরা না জানি তাহলে আমরা কৌশলটা কিভাবে করব? আমার তো আগে অবস্থানটা জানতে হবে।
আমাদের কর্মপরিকল্পনাটা জানা দরকার। জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যানসার রোগীর সংখ্যা নির্ণয় করতে হবে। আমরা যদি সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই সবার জন্য, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। সবচেয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা ক্যানসারের।
আমরা জানি প্রতি বছর সাড়ে চার লক্ষ লোক গরীব হয়ে যায় স্বাস্থ্য ব্যয় মেটাতে। কারণ আমাদের পকেট থেকে ৬৭-৭০ টাকা ব্যয় করতে হয়। তাহলে ক্যানসার হলে কি পরিমাণ ব্যয় হবে। সেই ব্যয় যদি আমার পকেট থেকে করতে হয় তাহলে তো নি:স্ব হয়ে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই। এই জন্য আমাদের এপ্রােচটা কি হবে?
আমাদের ক্যানসারের জন্য যে পরিমাণ ডাক্তার লাগবে সে পরিমাণ ডাক্তার আছে কিনা? প্রথম কথা হলো কতজন লাগবে তার পরিসংখ্যান আছে কিনা! তারপরে আমাকে ঠিক করতে হবে, এই চিকিৎসক তৈরি করতে কি কৌশলে আমাকে ডাক্তার, নার্স এবং প্যারামেডিক্স তৈরি করতে হবে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য। এই কর্মপরিকল্পনাটা চিন্তা করতে হবে।
আমি ক্যানসার রোগীর সংখ্যা রেজিস্ট্রি করতে চাইছি। ক্যানসার রেজিস্ট্রি টা যদি উপজেলা ভিত্তিক হয়, একটা উপজেলার জনসংখ্যা আমরা জানি। এরপর ওয়ার্ডের জনসংখ্যা আমরা জানি। উপজেলাভিত্তিক ক্যানসার রেজিস্ট্রিটা যদি আমরা শুরু করি এবং কোন একটা উপজেলা দিয়ে শুরু করি। তাহলে আমরা জানবে যে আমাদের কতজন ক্যানসার রোগী আছে এবং কি ধরণের ক্যানসার রোগী আছে।
খাদ্যনালীর ক্যানসার, জরায়ুমুখ ক্যানসার, স্তন ক্যানসারের কথা আমরা জানি। জানি যে, এই ক্যানসারের রোগী বেশি আছে। কিন্তু অন্য কোন সুপ্ত ক্যানসার আছে কিনা সেটা আমরা রেজিস্ট্রির মাধ্যমেই জানতে পারব।
আমরা যখন ক্যানসার চিকিৎসার জনশক্তি তৈরি করব তখন আমরা নাক, কান, গলার ক্যানসার বেশি হচ্ছে কিনা! ব্রেইন ক্যানসার বেশি হচ্ছে কিনা! হুমায়ুন আহমেদ মারা গেছেন কোলন ক্যানসার সেটা বেশি হচ্ছে কিনা! আমার তো জানতে হবে। তাহলে আমরা একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে পারব।
আমরা সবাই চাই যে, কারো যেন ক্যানসার না হয়। আমরা জরায়ু মুখ এবং হেপাটাইটিস বি এর ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য টিকা দিতে পারি, টিকার ব্যাপারে জোর দিতে হবে। সব মন্ত্রণালয় মিলে, বায়ুদুষণ, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরােধ এবং ধুমপান – এই তিনটা জিনিসের ব্যাপারে যদি আমরা কিছু করতে পারি তাহলে ক্যানসারের প্রকোপটা কমে আসবে। এই প্রকোপটা কমে আসলে আমাদের ক্যানসারের ব্যয় কমে আসবে। রাষ্ট্রের ব্যয় কমে আসবে এবং জনগণেরও ব্যয় কমে আসবে।
আমাদের নীতিতে যেটা হবে – আমাদের ফোকাসটা হতে হবে – পাবলিক হেলথ পার্সপেক্টিভ এর উপরে। এডলোসেন্ট বয়েজ এন্ড গার্লস বিশেষ করে জরায়ু মুখ ক্যানসার প্রতিরোধে শুধু স্কুল হেলথ প্রোগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা যদি ঐ বয়সের মেয়েদের এই রোগ সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করতে পারি তাহলে কিন্তু মিরাকল ঘটাতে পারব। দৈব্য ঘটবে বাংলাদেশে অন্তত জরায়ুমুখ ক্যানসার এবং ব্রেস্ট ক্যানসারের ক্ষেত্রে।
বায়ুদুষণ থেকে মুক্ত থাকা, ধূমপান এড়ানো এবং ভেজালমুক্ত থাকার পাশাপাশি আমরা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করব। এটা ক্যানসার প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করেন কেউ সাদা চিনি খাবেন না এবং যাকেই পাবেন তাকে এই চিনি খেতে না করবেন। আজকাল বলা হচ্ছে, সাদা চিনি ক্যানসারের সেল মিউটেশনের ব্যাপারে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পাশাপাশি সকাল বেলা একগ্লাস হালকা গরম পানিতে যদি আপনি লেবুর রস গুলে খান এটা সব ধরণের ক্যানসার সেল তৈরিতে বাধা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
# প্রফেসর এম. মোজাহেরুল হক, চেয়ারম্যান, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (পিএইচএফবিডি)।
# তাসকিনা ইয়াসমিন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার, লাল সবুজের কথা ডটকম।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা