অনলাইন ডেস্ক
বছরের শুরুটা মোটেও ভালো যায়নি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের।
কখনো শ্রম আইন লঙ্ঘন, কখনো অর্থ আত্মসাৎ, কখনোবা, অর্থ পাচারের কল্পিত অভিযোগে তাকে আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন চক্কর কাটতে বাধ্য করে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা।
রকেটের গতিতে মামলাগুলোতে শুধু অর্থদণ্ড দিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়নি, বিগত সরকারের পুতুল বিচার বিভাগ, ৬ মাসের বিনাশ্রমে কারাদণ্ডও দেয়া হয় ৮৫ বছর বয়সী বিশ্বজুড়ে সন্মানিত এই মানুষটিকে। বিচার বিভাগের সেই অবিচারের সাক্ষী হন বিদেশি কূটনীতিকরাও।
কথায় বলে শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। ড. ইউনূসের বেলায়ও ঘটে তেমনটাই। গণ-অভু্যৃত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সর্বোচ্চ আদালতেও বাতিল হয় অন্তঃসারশূন্য মামলা গুলো।
তবে যেই গণ বিস্ফোরণে ক্ষমতার এই পট পরিবর্তন, তার অগ্নি স্ফুলিঙ্গের নেপথ্যেও ছিল সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকা।
চলতি বছরের ৫ জুন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
কোটার বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের এখতিয়ার সরকারের রয়েছে, এমন যুক্তি তুলে ধরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। তারপরও হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করায় পহেলা জুলাই থেকে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। নতুন বাংলাদেশের দু:সাহসিক অভিযাত্রার শুরুটা হয় সেখান থেকেই।
এর আগেই শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেন বিচারপতিরা। আর তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের।
কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ছাত্রদের সেই বিক্ষোভ যখন দুর্বার গণআন্দোলনে রূপ নেয় তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে আবারো বিচার বিভাগের দারস্থ হয় আওয়ামী সরকার। পেছানো তারিখ এগিয়ে এনে দায়সারা রায় দেয় আপিল বিভাগ। ৭ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রেখে দেওয়া ওই রায়ে বলা হয়, এ বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার সরকারের রয়েছে।
আগুনে ঘি ঢালার মত আপিল বিভাগের ওই রায়ও বুমেরাং হয়। সুনামিতে রূপ নেয় ছাত্র জনতার আন্দোলন। তারুণ্যের অদম্য সাহসের কাছে পরাজিত হয় পরাক্রমশালী ফ্যাসিস্ট শক্তির। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন ছাত্রদের রাজাকার গালি দেয়া শেখ হাসিনা।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আবারো পথের কাঁটা সরাতে আদালতের ঘাড়ে সওয়ার হয় ফ্যাসিস্ট শক্তি। ফুলকোর্ট সভা ডেকে জুডিশিয়াল ক্যুর উদ্যোগ নেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতিরা।
কিন্তু ফাঁস হয় ষড়যন্ত্র। ছাত্রদের দুর্বার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন ওই প্রধান বিচারপতিসহ ৬ কুশীলব।
১০ আগস্ট দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন ডক্টর সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে জনবান্ধন বিচার বিভাগ গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নতুন রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। একই সঙ্গে কাজ শুরু করে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
তবে আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির পদত্যাগের পর দুর্নীতিবাজ ও দলকানা বিচারপতিদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয় সুপ্রিমকোর্ট চত্বর।
সেই ধারাবাহিকতায় প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে চায়ের দাওয়াত পান অভিযুক্ত বিচারপতিরা। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিচারের মুখোমুখি হবার আগেই পদত্যাগ করেন ১৫ জন।
এরই মাঝে পুর্নগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হয় জুলাই আগস্টের গণহত্যার বিচার। সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুলসহ যারা এই আদালত গঠনের নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদেরকেই দাঁড় করানো হয় বিচারের কাঠগড়ায়।
অন্যদিকে, প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পলাতক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করে ইন্টারপোল।
বছরের শুরুর মত শেষ দিকেও সংবাদের শিরোনাম ছিল উচ্চ আদালত। বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিচারিক আদালতের রায় অবৈধ ও নজিরবিহীন বলে রায় দেয় হাইকোর্ট। মামলা থেকে খালাস পান সব আসামি।
আর পঞ্চদশ সংশোধীর মামলায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে রায় দেয় হাইকোর্ট। ১৫তম সংশোধনীকে আংশিক বাতিল করে গণভোটের বিধান ফিরিয়ে আনে উচ্চ আদালত।
১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৬ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। তবে উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয় উচ্চ আদালত।
পাশাপাশি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে বিগত সরকারের সময় করা একাধিক মামলা থেকে অব্যাহতি পান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
সুপ্রিমকোর্টে যখন স্থিতিশীলতার সুবাতাস, তখন খবরে সরগরম নিম্ন আদালত। আনিসুল হক, আমির হোসেন আমু, সালমান এফ রহমানের মত রাঘববোয়ালদের পদচারণায় উত্তপ্ত বিচারিক অঙ্গন। পতিত স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে জনরোষের মুখে তথাকথিত ভিআইপি আসামিরা। তবে অপরাধী যতো ক্ষমতাবান হোউক না কেন, তাদের দৃষ্টান্ত মূলক সাজাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা