অনলাইন ডেস্ক
জানা যায়, হরিনাকুন্ডু থানার ওসি হিসেবে আবু আজিফ চলতি বছরের ৩ এপ্রিল যোগদান করেন। থানায় যোগদানের পরপরই তার কিছু ব্যতিক্রম উদ্যোগে পাল্টে যায় হরিনাকুন্ডু উপজেলার দৃষ্টিপট। তিনি যোগদান করেই থানাকে ঘুষ ও দালালমুক্ত ঘোষণা করে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশি সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ শুরু করেন। তার পাঁচ মাসের চেষ্টায় এ অঞ্চলে সন্ত্রাস ও সামাজিক অপরাধ কমে এসেছে।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ ও ২৪ এপ্রিল হরিনাকুন্ডুর জোড়াপুকুরিয়া গ্রামে দুটি হত্যার ঘটনা ঘটে। আবু আজিফ দ্রুত ওই দুই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।
এ ছাড়া ওসি হরিনাকুন্ডু থানার দায়িত্ব নিয়েই সন্ত্রাস ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে অভিযান শুরু করেন। সন্ত্রাসীদের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘থানায় এসে আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো হরিনাকুন্ডু থানা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে, অন্যথায় গ্রেপ্তার হয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
এদিকে পুলিশের কঠোর অবস্থানের ফলে উপজেলায় ছয় মাসে একটি বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্ত বোমা মানিককে আটক করে হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ। আবু আজিফের যোগদানের পর থেকেই হরিনাকুন্ডুতে উল্লেখযোগ্য হারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতার পরিমাণ কমেছে।
ওসি আবু আজিফকে প্রায় রাতেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ডিউটিরত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। পৌর শহরসহ উপজেলার ক্রাইম জোন হিসেবে চিহ্নিত স্পটগুলোতে প্রতি রাতে ওসি আবু আজিফ নিজে পুলিশের গাড়ি নিয়ে টহল দেন।
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ওসি আবু আজিফ। জানা গেছে, গত ছয় মাসে ওসি আবু আজিফের নেতৃত্বে হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ উপজেলার প্রায় ৪০ জন মাদক কারবারি ও মাদকসেবীকে গ্রেপ্তার করে।
হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি হওয়া ছিল অতি সাধারণ ঘটনা। গত ৩ বছরে শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হলেও কোনো মোটরসাইকেল চোরকে শনাক্ত করতে পারছিলেন না হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ। ওসি আবু আজিফ যোগদানের তিন মাসের মাথায় আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোরচক্রের দুই সদস্যকে আটক করেন তিনি। এরপর থেকে উপজেলায় মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা কমে যায়।
উপজেলার ‘রাশেদ ফার্নিচারে’ ভেন্টিলেটর ভেঙে চুরির ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যেই চোরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার ইজিবাইক ও ভ্যান চোর চক্রের অন্তত পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ।
থানায় যোগদানের তিন দিনের মধ্যে সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে তিনি বিভিন্ন এলাকার সামাজিক নেতৃত্বের তালিকা করেন। এরপর থেকে তিনি ওই সব সামাজিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। সামাজিক কোন্দল ঠেকাতে তার এ উদ্যোগ।
আবু আজিফ থানায় যোগদানের পরপরই পুলিশের কর্মকাণ্ডেও পরিবর্তন এনেছেন। আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের দ্বারপ্রান্তে পুলিশের সেবা পৌঁছে দিতে বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছেন। কমে গেছে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবণতাও। শোষিত, নির্যাতিত, সম্পদের ভাগ-বণ্টন, পারিবারিক ছোট-বড় যেকোনো সমস্যায় সাহায্য নিতে থানায় আসা ব্যক্তিদের সততা-নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সঙ্গে হাসিমুখে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
থানায় সেবা নিতে আসা উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দার আলী বলেন, ‘এত সুন্দর মন মানসিকতার ওসি এর আগে আমরা পাইনি। তাকে কখনও পুলিশ মনে হয় না। মনে হয় আমাদের পরিবারেরই একজন। তবে কঠিন এবং কোমল দুটো রূপই তার রয়েছে। অপরাধীদের কাছে তিনি আতঙ্ক।’
আরেক সেবা প্রার্থী জুয়েল রানা বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন সবাই মনে করতেন, থানা মানেই হয়রানি আর ঘুষের কারবার। কিন্তু আমাদের সেই ধারণা এখন পাল্টে গেছে। থানাকে এখন সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা মনে হচ্ছে। এটার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে বর্তমান ওসি সাহেবের।’
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা