বিয়ের ছবি তোলায় নিষেধ ছিল বাবার ।
আজ দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রি সাইদা খানমের ৮২তম জন্মদিন। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই গুণী, পথিকৃৎ আলোকচিত্রীর জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সাইদা খানম (জন্ম ডিসেম্বর ২৯, ১৯৩৭) বাংলাদেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী। বেগম পত্রিকার মাধ্যমে সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার ছবি ছাপা হয় দৈনিক অবজারভার, মর্নিং নিউজ, ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশেও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন তিনি। তিনি বাংলা একাডেমি ও ইউএনবির আজীবন সদস্য।
সাইদা খানম মাত্র ১৩-১৪ বয়সেই ছবি তোলার কাজটি শুরু করেন। তার জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর। পৈতৃক বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙায় হলেও সাইদা খানমের জন্ম পাবনায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। [২] পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে পুনরায় লাইব্রেরি সায়েন্সে স্নাতকোত্তর করেন। তার বাবার নাম আবদুস সামাদ খান এবং মায়ের নাম নাছিমা খাতুন। পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) তিনিই ছিলেন একমাত্র ও প্রথম নারী আলোকচিত্রী।
সাইদা খানম আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে ‘বেগম’ পত্রিকার আলোকচিত্রী ১৯৫৬ সাল থেকে। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। প্রেস ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। দুটো জাপানি পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার তোলা আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে। তার ছবি ছাপা হয় ‘অবজারভার’, ‘মর্নিং নিউজ’, ‘ইত্তেফাক’, ‘সংবাদ’সহ বিভিন্ন পত্রিকায়। আলোকচিত্রী হিসেবে দেশেও দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নেন সাইদা খানম। অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবিও তোলেন সাইদা খানম। সত্যজিতের তিনটি ছবিতে আলোকচিত্রী হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশ নেন সাইদা খানম। ওই বছরই জার্মানিতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড কোলন পুরস্কার পান তিনি। ভারত, জাপান, ফ্রান্স, সুইডেন, পাকিস্তান, সাইপ্রাস ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বেশ কয়েকটি দেশে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। ১৯৬২ সালে ‘চিত্রালী’ পত্রিকার হয়ে একটি অ্যাসাইনমেন্টে গিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও অস্কারজয়ী সত্যজিৎ রায়ের ছবি তুলে সমাদৃত হন সাইদা খানম।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে দেশের প্রথম নারী আলোকচিত্রী ঢাকার আজিমপুর এলাকায় অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণরত নারীদের ছবি তোলেন। [৩]১৬ ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের (পরে শেরাটন ও রূপসী বাংলা) সামনে পাকিস্তানি সেনারা গোলাগুলি শুরু করে। খবর পেয়ে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে সেখানকার ছবি তুলতে যান তিনি। প্রচণ্ড গোলাগুলির কারণে সেদিন অবশ্য ছবি তুলতে পারেননি।
তার লেখা গ্রন্থ সমূহ হচ্ছে – ধূলোমাটি (১৯৬৪), আমার চোখে সত্যজিৎ রায় (২০০৪), স্মৃতির পথ বেয়ে এবং আলোকচিত্রী সাইদা খানম-এর উপন্যাসত্রয়ী।
তিনি ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড- জাপান, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, বেগম পত্রিকার ৫০ বছর পূর্তি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানসূচক ফেলোশীপ পেয়েছেন।
তার স্মৃতিচারণ করে প্রয়াত সাংবাদিক দিল মনোয়ারা মনু এক আলোচনায় বলেছিলেন, সাইদা খানম তার বাবার অনুরোধে কোনদিন বিয়ে বাড়িতে ছবি তুলেননি। তার বাবা তাকে বলেছিলেন, তোমাকে আমি ছবি তুলতে দিতে পারি তবে, সেটি এক শর্তে। তুমি কোন বিয়ে বাড়িতে ছবি তুলতে যাবেনা। অর্থাৎ কর্মাশিয়াল ছবি তোলার বিরোধী ছিলেন তার বাবা। অথচ, সাইদা আপা তখন বিয়ে বাড়ির ছবি তুলে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারতেন। কিন্তু তিনি আজীবন বাবার কথা রেখেছেন।
সূত্র : উইকিপিয়া এবং অন্যান্য।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা