অনলাইন ডেস্ক
আমদানি শুল্ক কমানোসহ দেশে স্বল্পমূল্যে চাল বিক্রি শুরু হলেও এর কোনো প্রভাব পড়েনি নওগাঁর চালের বাজারে। জেলার মোকামগুলোয় চালের চাহিদা কমের দিকে। গত ২ সপ্তাহ ধরে পাইকারি বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ওএমএসের চাল বিক্রি অব্যাহত রেখে ভারত থেকে সত্বর কম দামে আমদানি না হলে এ সংকট কাটবে না বলে মনে করছেন চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির বাজারে স্বস্তি ফেরাতে দাম কমিয়ে আনার পাশাপাশি নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।
জানা যায়, গত ২৮ জুলাই চাল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক কমানোর ঘোষণা দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অভ্যন্তরীণ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশের ওপর কমিয়ে দেয়ার দুই মাস পর এ ঘোষণা এল। ফলে এখন থেকে আমদানিকারকরা ৫ শতাংশ অগ্রিম কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রক শুল্ক পরিশোধে চাল আনতে পারবেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে আমদানিকারকরা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করে চাল আনতে পারবেন।
সরেজমিনে জেলার পাইকারি ও খুচরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এ বছর বোরো মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগে উৎপাদন ঘাটতি হলে শুরু থেকেই ধানের বাজার চড়া ছিল। ঘাটতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ করতে বিলম্ব হওয়ায় সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নিতেও দেরি করে ফেলে। আবার ব্যবসায়ীরা শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ চাইলেও তাদের সে সুযোগ দেয়া হয়নি। এরই মধ্যে ভারতে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী এবং ডলারের বাজারে অস্থিরতা থাকায় ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়েন। তাই আমদানির সিদ্ধান্তে মেলেনি সুফল। এরপর আরেকটি নতুন ধাক্কা লাগে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন ভাড়া না বাড়লেও সেই অজুহাতে ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি চালের দাম ৫-৭ টাকা বাড়িয়ে দেন। দফায় দফায় চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ। বিষয়টি সরকারের নজরে এলে মজুদদারদের খুঁজতে সারা দেশে শুরু হয় অভিযান। এতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে নওগাঁ মোকামে যারা চালের অর্ডার দিয়ে রেখেছিল, তাদের অনেকেই অর্ডার বাতিল করেন।
গত দুই সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে প্রতি কেজি চালের দাম ২-৩ টাকা কমিয়ে দেন জেলার চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে ২৮ জুলাই চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। এছাড়াও চলতি মাসের শুরুতেই জেলার বিভিন্ন স্থানে ৩০ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন ৭২ টন চাল বিক্রি শুরু করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় জেলার ৯৯টি ইউনিয়নে দরিদ্র পরিবারের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। আবার বাজারে নতুন আউশ ধান উঠতে শুরু করেছে। এতে করে বাজারে নতুন করে চালের দাম আর বৃদ্ধি পায়নি। বর্তমানে শহরের খুচরা চাল বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি জিরাশাইল চাল ৬৪-৬৫ টাকা, কাটারি ৬৮-৭০, ব্রি-২৯ ৫৬-৫৮, ব্রি-২৮ ৬০-৬২, স্বর্ণা-৫ ৫৫-৫৬ এবং নতুন পারিজা ৫২-৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি জিরাশাইল চাল ৬৪-৬৮ টাকা, কাটারি ৬৬-৭০ টাকা, ব্রি-২৮ ৫৪-৫৭ টাকা এবং স্বর্ণা-৫ ৪৮-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের আড়তদার পট্টি এলাকার আমদানিকারক ইফতেখারুল ইসলাম সজীব বলেন, সরকার শুল্ক কমালেও তা যথেষ্ট নয়। কারণ দেশে ডলারের বাজার এখনো অনেক বেশি। আবার ভারতে চালের দাম প্রতি কেজিতে নতুন করে ২-৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান ডলারমূল্যে ভারত থেকে বেশি দামে চাল কিনে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিলেও তা দেশের বাজারে এনে বিক্রির পর আমাদের লোকসান গুনতে হবে। তাই শুল্কমুক্ত অবাধ আমদানির সুযোগ দিতে হবে।
শহরের সুলতানপুর মহল্লার ঘোষ অটোমেটিক রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী ও আমদানিকারক দ্বীজেন ঘোষ বলেন, প্রায় ৩০০ টন চাল এলসি করেছিলাম। তবে ভারতের বাজারে চালের দাম অনুযায়ী দেশীয় বাজারে চালের দাম কম থাকায় সেই চালের শুল্ক পরিশোধ না করে ওখানেই রেখে দিয়েছিলাম। সরকার ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলে ওই চালগুলো ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ছাড়িয়ে এনেছি। তবে মোকামে চাহিদা না থাকায় আমদানীকৃত চাল বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
জেলা ট্রাক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও ফারিহা অটোমেটিক রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম যেভাবে বাড়িয়েছিল তা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ছিল। পরিবহন ভাড়া এক টাকাও বাড়েনি। উল্টো গত এক মাস যাবত ভাড়া কমেছে। তিনি জানান, সরকারের মজুদবিরোধী অভিযান শুরু হলে বিভিন্ন মোকামের ব্যবসায়ীরা তাদের দেয়া চালের অর্ডার বাতিল করতে শুরু করেছেন। আমদানীকৃত চাল বাজারে আসতে শুরু করলে চালের বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন তিনি।
জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার আমদানি শুল্ক কমানোর কিছুদিন আগে থেকেই একটা পূর্বাভাস দিয়েছিল। আবার ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালুর কথা বলা হচ্ছিল। ওই মুহূর্তে মোকামে চালের চাহিদা কমে যাওয়ায় পাইকারি পর্যায়ে আগাম প্রতি কেজি চালের দাম ২-৩ টাকা কমে যায়। এখন নতুন ধান বাজারে উঠেছে। এছাড়া ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব চালু রয়েছে। এজন্য চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এ অবস্থা থেকে চালের দাম আরো কমাতে চাইলে স্বল্পমূল্যে চাল আমদানি করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের যদি শুল্কমুক্ত অবাধ আমদানির সুযোগ দেয়া হয় তাতেও খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ যখনই আমাদের দেশে শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়। তখনই ভারতের বাজারে চালের দাম আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। এবারো একই ঘটনা ঘটেছে। এজন্য ব্যবসায়ীরা চাইলেও কম শুল্কে চাল আনতে পারছেন না। সরকারি পর্যায়ে দ্রুত চাল আমদানি করতে পারলেই দেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আলমগীর কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে অযৌক্তিভাবে চালের দাম বাড়তে থাকলে ওই মুহূর্তে বিভিন্ন চালকলে মজুদবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছিল। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে এরই মধ্যে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার আউশ ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বাজারে নতুন ধান উঠতে থাকায় এরই মধ্যে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তিনি জানান, বাজারে নতুন করে যাতে কেউ অস্থিতিশীল তৈরি করতে না পারে, সেজন্য মজুদবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এতে করে আগামীতে চালের দাম আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা