রাজাকারের তালিকায় নাম
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর রাজাকারদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে সরকার তা নিয়ে নানামুখী প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রাজাকারদের এ তালিকায় আছে ’৭১-এ যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নামও।
রাজশাহী বিভাগের তালিকায় গোলাম আরিফের নাম রয়েছে ৬০৬ নম্বরে।
তালিকায় নাম আসায় প্রবীণ এই আইনজীবী বিস্মিত ও হতবাক। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যে কাজ করেছে তা সকলের জন্য বিস্ময়কর, লজ্জাজনক। আর এর মাধ্যমে প্রমাণ হচ্ছে-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম যথাযথভাবে হচ্ছে না।
তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকায় আসা নামটি তারই। টিপু বলেন, এ ঘটনায় দেশের নাগরিক হিসেবেও আমি লজ্জিত। মন্ত্রণালয় তাচ্ছিলের সঙ্গে এই কাজটি করেছে। এর দায়ভার তাদের নিতে হবে।
তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনে যাঁর ভূমিকা ছিল তাঁকে কারা, কেন এ তালিকায় নিয়ে এসেছে এর তদন্ত করে জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। তালিকার বিরুদ্ধে এর মধ্যেই প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। প্রতিবাদ আরও হবে। তিনি বলেন, এভাবে সম্মানহানি করায় আমি লিগ্যাল অ্যাকশনে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করছি।
রোববার প্রকাশিত ওই তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুসহ পাঁচজনের নাম রয়েছে। অন্যরা হলেন- অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব।
উল্লেখ্য, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সময় রাজশাহীর ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু। এ সময় তিনি দীর্ঘদিন কারাবন্দী ছিলেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্র ইউনিয়নের দ্বিতীয় কমিটিতে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন সভাপতি ও গোলাম আরিফ টিপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের আন্দোলনে ভূমিকা রাখার কারণে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হন তিনি।
আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব নেতা-কর্মী ছাত্র-শিক্ষক যখন ওয়ান/ইলেভেনের স্বৈর সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাবন্দী হন তখন তাঁদের পক্ষে তিনি আইনি লড়াই চালিয়েছেন। পরে ঢাকায় এসে এই প্রখ্যাত ডিফেন্স কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রহসনের মামলায় তাঁর পক্ষে আইনি লড়াই চালিয়েছিলেন। তারুণ্যে দেশের একজন খ্যাতিমান ফুটবলার ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালের পর রাজনীতি থেকে অবসরে যান। তিনি বার কাউন্সিলের সদস্যও ছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্যও ছিলেন টিপু। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা