আজ ৯ ডিসেম্বর রোকেয়া দিবস। বাংলার নারী জাগরণের পথিকৃৎ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং লেখিকা বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে জমিদার পরিবারে রোকেয়ার জন্ম। ১৯৩২ সালের এই দিনেই মারা যান তিনি। দিনটি রোকেয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় স্মরণ করা হচ্ছে রোকেয়াকে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রোকেয়া দিবস উদযাপন ও বেগম রোকেয়া পদক-২০১৯ প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে পদক প্রদান করবেন। এবার পদক পাচ্ছেন পাঁচ বিশিষ্ট নারী। নারীশিক্ষা, অধিকার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে এ বছর পদক পাচ্ছেন সেলিনা খালেক। নারীশিক্ষায় অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার, নারীর অধিকার, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পদক পাচ্ছেন ড. নুরুন্নাহার ফয়জুন্নেসা (মরণোত্তর)। এ ছাড়া পাপড়ি বসু নারীর অধিকার ও বেগম আখতার জাহান নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য পদক পাচ্ছেন।
দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে নারীর মর্যাদা, অধিকার ও স্বনির্ভরতা অর্জনে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন নারীমুক্তি, সমাজসংস্কার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের পথিকৃৎ। তিনি উন্নত মানসিকতা, দূরদর্শী চিন্তা, যুক্তিপূর্ণ মতামত প্রদান ও বিশ্নেষণ, উদার মানবতাবোধের অবতারণা এবং সর্বোপরি দৃঢ় মনোবল দিয়ে তৎকালীন নারী সমাজকে জাগিয়ে তোলেন। রোকেয়ার জীবনাদর্শ ও কর্ম নারী সমাজের অগ্রযাত্রায় পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম রোকেয়ার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং সব শ্রেণি-পেশার নারীকে শুভেচ্ছা জানান। দিবস উপলক্ষে বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বেগম রোকেয়ার কর্মে ও আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবেন। নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।
বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রংপুরের কর্মসূচি : রোকেয়া দিবস পালনে রংপুর জেলা প্রশাসন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রংপুরের পায়রাবন্দে তার জন্মস্থানে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি বলে জানিয়েছেন, আমাদের রংপুর প্রতিনিধি। সেই সঙ্গে হচ্ছে রোকেয়া মেলা। প্রথম দিন সকাল ৯টায় রোকেয়া স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, সকাল সাড়ে ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও রংপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম। সভায় সভাপতিত্ব করবেন রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। প্রধান আলোচক থাকবেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। আলোচনা করবেন অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ আলম। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি চলবে। দুপুর ১টায় পায়রাবন্দ জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশিত হবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিনে হবে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। বিকেল ৪টায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। বিশেষ অতিথি থাকবেন রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শুকরিয়া পারভীন, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু ও বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল ফারুক। সভাপতিত্ব করবেন মিঠাপুকুরের ইউএনও মামুন ভূঁইয়া। প্রবন্ধ পাঠ করবেন মাহীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক ড. নাসিমা আকতার। আলোচক থাকবেন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যাপক আরেফিনা বেগম ও রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল।
তৃতীয় দিনে দুপুর ২টায় বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল ৪টায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার একেএম তারিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি থাকবেন রংপুর রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক দেবদাস ভট্টাচার্য, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকার। সভাপতিত্ব করবেন রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. শরিফা সালোয়া ডিনা। আলোচক থাকবেন কাউনিয়া কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য। বিকেল ৫টায় পুরস্কার বিতরণ ও পদক বিতরণ। সন্ধ্যায় নাটিকা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তিনদিনের কর্মসূচি।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২০ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা