অনলাইন ডেস্ক
জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে ১৯৭৯ সালে ইসরাইল এবং মিসরের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করতে হবে।
চুক্তিমতে ১৯৮২ সালে এয়ার সিনাই তৈরি করে মিসর। এর মাধ্যমে মিসরের রাজধানী কায়রো এবং ইসরাইলের তেল আবিবের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
এয়ার সিনাইয়ের এই রুটে আগে মিসরের ইজিপ্টএয়ার সংস্থার নেফারতিতি অ্যাভিয়েশনের বিমানের চলাচল ছিল। পরবর্তীকালে এই রুটেই এয়ার সিনাই নামে ওই বিমান চলাচল শুরু হয়।
কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি এবং পরবর্তীকালে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলে রাজনৈতিক চাপে পড়ে মিসর। ওই চুক্তির পরই আরব দেশগুলো মিসরকে বয়কট করে।
মিসরের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। ভেতর এবং বাইরে এভাবে চাপের মধ্যে মিসর সম্পূর্ণ ‘অভূতপূর্ব’ একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। অন্যদিকে, মিসরকে শান্তি চুক্তির শর্তের কথাও মাথায় রাখতে হয়েছিল।
চুক্তির শর্ত যাতে না ভাঙে, সে জন্য একপ্রকার লুকিয়ে এই রুটে বিমান চালানো অব্যাহত রাখে মিসর। কিন্তু কীভাবে?
গোপনে বিমান যোগাযোগ চালু রাখতে তখনই এয়ার সিনাই সংস্থা তৈরি করে ফেলে তারা। এর আগ পর্যন্ত এই রুটে ইজিপ্টএয়ার নামে বিমান চলাচল করত।
ইজিপ্টএয়ারে পাইলট, বিমান, এয়ার হোস্টেস-সব নিয়েই উড়াল দিতে শুরু করে এয়ার সিনাই। নাম বদলানোর পাশাপাশি তখন আরও একটি কাজ করেছিল মিসর।
গোপনীয়তা বজায় রাখতে বিমানের গায়ে লোগোর ব্যবহার বন্ধ করে দেয় দেশটি। এমনকি এই সংস্থার কোনো ওয়েবসাইটও ছিল না। ফলে কোনো যাত্রী যদি কায়রো থেকে তেল আবিব যাওয়ার জন্য অনলাইনে টিকিট কাটতে চাইতেন, তাহলে তাকে খুব সমস্যায় পড়তে হতো।
কারণ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কায়রো থেকে তেল আবিব যাওয়ার সরাসরি এই একটিমাত্র বিমান এয়ার সিনাইয়ের কোনো ওয়েবসাইট তিনি খুঁজে পেতেন না।
কিন্তু ঘুরপথে তেল আবিব যাওয়ার জন্য একাধিক বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট ভেসে উঠত তার সামনে। তবে এয়ার সিনাইয়ের টিকিট বুক করতে আগ্রহীদের জন্য কিছু বার্তা ভেসে উঠত ইন্টারনেটে। তাতে ক্লিক করলে ট্রাভেল এজেন্সির ইমেইল, যোগাযোগ নাম্বার পাওয়া যেত।
সেই নাম্বারে যোগাযোগ করে যাত্রীকে নিজের বিবরণ মেইল করে পাঠাতে হত। পাসপোর্টের স্ক্যান কপি এবং আরও যা যা তথ্য জানতে চাইত, সে সবই ইমেল-এর মাধ্যমে পাঠাতে হতো। সব কিছু বিবেচনা করে তারপর ইমেইলে- ফ্লাইটের সময়, তারিখ এবং বিমান ভাড়া জানিয়ে দিত ওই সংস্থা।
এরপরই নির্দিষ্ট ঠিকানায় টাকা দিতে হত যাত্রীকে। এখানেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে ক্রেডিট কিংবা ডেবিটের মতো কোনো কার্ড ব্যবহার করা যেত না। শুধুমাত্র নগদেই সেই টাকা দিতে হত যাত্রীকে।
এত গোপনীয়তার কারণে যাত্রীদের মধ্যে একটি অনিশ্চয়তাও কাজ করত। তারা ঠিক জায়গায় টাকা দিলেন কি না, তা বিমানের ওঠার আগে পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারতেন না।
বিষয়টি মাথায় রেখে ২০২০ সালে প্রথম এই ফ্লাইটের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়। নাম রাখা হয় ফ্লাইএয়ারসিনাই.কম।
এই ওয়েবসাইট থেকে কায়রো-তেল আবিবের মধ্যে এয়ার সিনাই ফ্লাইটের যাবতীয় তথ্য (ফ্লাইটের সময়, টিকিট ভাড়া ইত্যাদি) দেওয়া রয়েছে। ফলে এখান থেকে খুব সহজেই যাত্রীরা টিকিট বুক করে নিতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডও ব্যবহার করতে পারেন।
ফ্লাইএয়ারসিনাই.কম যদিও সরাসরি এয়ার সিনাইয়ের ওয়েবসাইট নয়। একটি থার্ড পার্টি ট্র্যাভেল এজেন্সি যাত্রীদের সুবিধার্থে এই ওয়েবসাইটটি বানিয়েছে। ফলে ঘরে-বাইরের চাপ সামলাতে আজও যাত্রীদের কায়রো থেকে তেল আবিব উড়িয়ে নিয়ে যায় মিসরের এই ‘অস্তিত্বহীন’ বিমান।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা