সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সন্তু লারমা।
২২ বছরেও শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। একারণে বর্তমান যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য রাষ্ট্রকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছরপূর্তি উপলক্ষে রবিবার ( ১ ডিসেম্বর) রবিবার, সকাল ১১ টায় ঢাকার হোটেল সুন্দরবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা ) এমন বক্তব্য তুলে ধরেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অন্যতম স্বাক্ষরকারী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা।
তিনি বলেন, জুম্ম জনগণ ২২ বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন অপেক্ষা করেছে। জুম্ম জনগণ সরকার তথা শাসকগোষ্ঠীকে অনেক সময় দিয়েছে। জুম্ম জনগণ সকল ক্ষেত্রে দুর্বলতর ও পশ্চাৎপদ। তাই বলে তারা অবহেলা ও উপেক্ষার পাত্র হতে পারে না। জুম্ম জনগণ অধিকারকামী ও মুক্তিকামী। আর এটাই তাদের একমাত্র সম্বল। এমনিতর ক্রান্তিকালীন পরিস্থিতিতে পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণ তাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। জুম্ম জনগণ সমঅধিকার ও সমমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায়। তাই পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তারা আজ গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে তাদের করণীয় কি হতে পারে?
জনসংহতি সমিতির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকত উ উইন মং জলি-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ও অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধিদলের প্রধান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। শান্তিপূর্ণ ও শোষণ-নিপীড়ন মুক্ত একটা নিরাপদ জীবন পাওয়ার আশায় পার্বত্যবাসীরা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে তাঁকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছিল।
তিনি আরো বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২২ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার চুক্তির মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দিয়েছে। বলাবাহুল্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যেই সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত হয়েছিল সেই আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বর্তমানে এক নাগাড়ে ১১ বৎসর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকলেও চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নে কোন কার্যকর পদক্ষেপ ও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পক্ষান্তরে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিসহ জুম্ম জাতিসমূহের জাতীয় অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্তির ষড়যন্ত্র অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সালে ‘অপারেশন দাবানল’-এর পরিবর্তে ‘অপারেশন উত্তরণ’ জারী করে সেনা শাসন অব্যাহত থাকে।
চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১১ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরও চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নে এগিয়ে না আসার কারণে জুম্ম জনগণ তথা পার্বত্যবাসীর মধ্যে একদিকে চরম হতাশা, অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে আর অন্যদিকে নিরাপত্তাহীন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
সংক্ষিপ্ত আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও আরো ৭৮টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ আছে। তারা চায় তাদের মৌলিক অধিকার, সমঅধিকার নিয়ে বেঁচে থাকতে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। সুতরাং রাজনৈতিকভাবে সমাধান করার জন্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি হয়েছিল। তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলে বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে ঠিক কত বছর পর বাস্তবায়ন হবে?
ঐক্যন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য্য বলেন, আদিবাসীদেরকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দিয়ে এই রাষ্ট্র উদার রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে না। যে চুক্তি ২২ বছর আগে করা হয়েছিলো সে চুক্তি এত বছর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়। তিনি অতি দ্রুত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
# রিপোর্ট এবং ছবি : সৈয়দ রাশিদুল হাসান।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা