মারুফুর রহমান অপু : ২১২০ সালের একদিন। নতুন এক শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমন জনিত ভাইরাসের মহামারীতে আক্রান্ত সারা পৃথিবী। ২০২০ এর কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাবার পর মানুষ বুঝেছিলো এমন দুর্যোগ একা সামাল দেয়া যায় না এবং বিজ্ঞানের প্রয়োগ ধ্বংসের চেয়ে বেচে থাকায় নিশ্চিত করাটা বেশি জরুরী। মহামারী থেকে বাচতে স্বাস্থ্যখাত একা যথেস্ট না, মাঠকর্মী থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট গবেষক পর্যন্ত সবার সাহায্য দরকার।
রোমান এর আজ সকাল থেকে জ্বর এসেছে। এবং জ্বর আসার ঠিক ২ ঘন্টার মাঝেই একটি টেস্টিং দ্রোন জানালা দিয়ে রোহানের বেড রুমে ঢুকে স্থির হয়ে আছে স্যাম্পল সংগ্রহের জন্য। এত দ্রুত কিভাবে সম্ভব হলো সেটি ভাবতে অবাক লাগলেও কাজটি জটিল না৷ ২০২০ এর করোনা মহামারীর পর বিশ্বজোড়া বিজ্ঞানীরা ঠিক করলেন আমরা যদি পৃথিবীর কক্ষপথে চক্কর কাটা স্যাটেলাইটগুলোকে এই পর্যায়ে শক্তিশালী করে ফেলি যেন সে উপর থেকে কারও জ্বর এলেই রিমোট সেন্সিং এর মাধ্যমে ধরে ফেলতে পারবে তাহলে মুহুর্তেই সন্দেহভাজন রোগী সনাক্ত করা সম্ভব৷ পরবর্তী ৫০ বছরেই সেটা তৈরি হয়েছে৷ এখন একটা রুমে বসে মনিটরে তাকিয়েই বলে ফেলা যায় কোথায় কে জ্বরে আক্রান্ত। দ্রোণ টেকনোলজিতো অনেক পুরোনো৷ সেটা নতুন করে আর খুব বেশি উন্নত করার প্রয়োজন পড়েনি। শুধুমাত্র এর “ফাইন ওয়ার্ক” করার সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে নানা রকম হাতের মত যন্ত্রাংশের মাধ্যমে। এ মুহুর্তে হাসিখুশি মিনিয়নের মত দেখতে দ্রোনটা রোহানকে অনুরোধ করছে চেয়ারে বসে মুখ হা করে স্যাম্পল নেবার সুযোগ দেবার জন্য। মাত্র ৩ মিনিটেই চৌকশ দ্রোণটি শুন্যে ভাসতে ভাসতে নাক ও মুখের ভেতর থেকে স্যাম্পল নিয়ে একটা আলাদা চেম্বারে ভরে ফেললো। এবার এই ব্যাটা আরও ১০ মিনিট ঘটর মটর করবে। এই ১০ মিনিট বড় অসহ্য সময়। ২০২০ সালে নাকি ফোন করে করে বা সার্ভে করে মানুষের বাড়িতে সরাসরি যেয়ে যেয়ে স্যাম্পল কালেক্ট করতে হতো তারপর ল্যাবের রেজাল্ট পেতে পেতে সব মিলিয়ে লাগতো ৩-৪ দিনে। ততদিনে আরও বহু লোক আক্রান্ত হওয়া সারা। মলিকুলার বায়োলজিস্ট ও ন্যানোটেকনোলজিস্টদের যৌথ চেস্টায় পিসিয়ার ও সিকয়েন্সিং নামের টেস্টগুলো এখন পকেট ডিভাইসে চলে এসেছে যার একটি এই দ্রোণে ফিট করা আছে। ১০ মিনিট পর রেজাল্ট আসলো, দুঃখজনকভাবে রোহান SARS-CoV-13 পজিটিভ, সিকয়েন্স ডাটা থেকে জানা গেল এটা ২০২০ সালের SARS-CoV-2 এর সাথে ৭০% মেলে কিন্তু প্রকৃতিতে পাওয়া অন্য একটি ভাইরাসের সাথে এর মিল ৯৯%, যা প্রাকৃতিক উৎসই নির্দেশ করে।
কিছুটা হতাশ হয়ে রোহান চিন্তা করে আগামী ২৮ দিন কিভাব কাটবে। রেজাল্টের সাথে সাথে এই রুম লক হয়ে গেছে। সে এখন কোথাও যেতে পারবে না, এটা অবশ্যই সমস্যা না, ভার্চুয়াল প্রেজেন্স ডিভাইসের মাধ্যমে সে আসলে ভার্চুয়ালি সব যায়গাতেই দেতে পারে, ফুটবল স্টেডিয়াম সহ। খাবার নিয়েও চিন্তার কিছু নেই। যেকোন মেনু অর্ডার করলেই দ্রোণ এসে দিয়ে যাবে জানালার কার্ণিশে। ডাক্তার দ্রোনগুলো দিনে একবার করে এসে বিরক্ত করবে, দ্রোণের হলোগ্রাফিক প্লেটে ডাক্তারদের সাথে কথা বলাটা বিরক্তিকর লাগে প্রায়ই। সেই চিন্তায় কিছুটা ভ্রু কুচকে রোহান ভাবে আজ থেকে ১০০ বছর আগে কোভিড-১৯ এর মহামারীর সময়ে মানুষের কি অবস্থা ছিলো। আহারে….