অনলাইন ডেস্ক
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, রায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি’র পক্ষ থেকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় রায়কে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে করা সব মামলা ছিল ষড়যন্ত্রমূলক।
খালাসপ্রাপ্ত ৪৯ আসামি হলেন: ২০১৮ সালের ১০ই অক্টোবর বিচারিক আদালত দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ছিলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে মারা যান), আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে মারা যান) ও হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।
এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী (প্রয়াত), বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ (কারাগারে মারা যান), মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
এ ছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআইয়ের মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। অপর আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত। এই মামলায় এখন ২৯ জন কারাগারে আছেন।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ: হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, মুফতি হান্নানের দ্বিতীয় স্বীকারোক্তির ওপর ভিত্তি করে যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। বিচার চলা অবস্থায় আগের সমস্ত ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে নতুন ঘটনার জন্মদিয়ে দ্বিতীয় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আইনসম্মত নয়। দ্বিতীয় যে তদন্ত রিপোর্ট সেটা জমা হয়েছে বিচারিক আদালতে। এটা জমা হওয়ার কথা ছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আইনে আছে আগে ম্যাজিস্ট্রেকে আমলে নিতে হবে। তারপর বিচারিক আদালতে পাঠাতে হবে। এই কারণে আমলে গ্রহণের আদেশটা এটা শুরু করে পরবর্তীতে যা হয়েছে তার সবই আইন বহির্ভূত। হাইকোর্ট আরও বলেছেন, আসামিদের যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া হয়েছে তা স্বেচ্ছায়ও না এবং সত্যও নয়। কারণ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি একটার সঙ্গে আরেকটাকে সমর্থন করে না বা মিল নেই। এ ছাড়া আদালত বলেছেন, এই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই। যে নাকি কাউকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে দেখেছে। এখানে সাজা দেয়া হয়েছে ষড়যন্ত্র করার জন্য। সাক্ষ্য আইনের ১০ ধারা প্রয়োগ করে সাজা দেয়া হয়েছে। ষড়যন্ত্র করার কারণে। এখানে উচ্চ আদালত দেখিয়েছেন ১০ ধারা প্রয়োগ করতে হলে ওই ষড়যন্ত্রে যারা অংশ নিয়েছে তাদের কারও সাক্ষ্য প্রয়োজন হবে। যারা মিটিংয়ে অংশ নিয়েছেন। আদালত বলেছেন এই ধরনের কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ এখানে নেই। এখানে আদালত মোবাইল কাদের ও বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রেফারেন্স দিয়েছেন। ওই মামলাতেও সাক্ষ্য আইনের ১০ ধারা ব্যাখ্যা করে আদালত বলেন, ওই মামলাগুলোতেও আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত রায়ে ষড়যন্ত্রকারীর দায়ে সাজা দেয়া হয়নি। আদালত বলেছেন, যারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারা তাদের সবাই কোন না কোনো সময় টিএফআই (ট্রাক্সফোর্স ইন্টেলিজেন্স) সেলে ছিল। কেউ ৬০ দিন, কেউ ২৬১ দিন ছিল। আদালত এ প্রশ্ন তুলেছেন, টিএফআই সেল গঠনের আইনগত ভিত্তি নেই। টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে এই মর্মে কোনো আইন নেই। আসামিকে সাজা দিতে হলে ডকুমেন্টারি এভিডেন্স, মৌখিক সাক্ষ্য প্রয়োজন হবে এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য লাগবে। এই মামলায় এই তিন প্রকারের এভিডেন্সের কোনো মানদণ্ড রক্ষা করা হয়নি। না মৌখিক সাক্ষ্য আছে, না ডকুমেন্টারি এভিডেন্স বা পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য আছে।
আইনে আছে ডেথরেফারেন্স নিষ্পত্তি করতে গিয়ে যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তি আপিল করেনি কিন্তু মামলায় আছে তারাও বেনিফিট পেতে পারেন। যদিও তারা আপিল না করেন। এজন্য এই মামলায় তারেক রহমানসহ যারা আপিল করেননি তাদের সবাই খালাস পেয়েছেন বলে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানান।
যে প্রক্রিয়ায় আসামিরা মুক্তি পাবেন: এ মামলায় খালাস পাওয়া আসামিদের মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, প্রথমত আদালত যদি অ্যাডভান্স আদেশ দেন যে তাদের বিরুদ্ধে অন্য মামলা নেই। তারা অ্যাডভান্স দিয়ে মুক্তি পেতে পারেন। এটা বেইল অর্ডারের মতো। চাইলে আজও নিতে পারেন। এ ছাড়া আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আসামিরা মুক্তি পাবেন। হাইকোর্ট রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, অপর একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ২৫ জন শ্রুতসাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তি করে বিচারিক আদালত এই রায় দিয়েছেন। এই ২৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দির একটি আরেকটিকে সমর্থন করেনি। কোনো চাক্ষুষ সাক্ষীও ছিল না। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো প্রমাণযোগ্য বা আইনগত মূল্য নেই, কারণ জীবদ্দশায় তিনি তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করে গেছেন। এই স্বীকারোক্তি জোর করে নেয়া হয়েছিল দাবি করা হয়েছে। তাছাড়া মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিটি সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা যথাযথ পরীক্ষা এবং গ্রহণ করা হয়নি। রায়ে বলা হয়, মামলার অভিযোগ আইনের ভিত্তিতে গঠন করা হয়নি।
অ্যাটর্নি জেনারেল যা বলেন: ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা-মামলায় হাইকোর্টের রায়ের কারণ দেখে ও নির্দেশনা নিয়ে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রায়ের কারণ দেখে ও নির্দেশনা নিয়ে তারপরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আপিল করা উচিত বলে মনে করি।
যে কারণে খালাস পেলেন আসামিরা: আসামি পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে বলেন, হাইকোর্ট রায়ে উল্লেখ করেছে কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে অন্য আসামিকে সাজা দেয়া যায় না। আর দ্বিতীয় অভিযোগপত্র ছিল অতিমাত্রায় বেআইনি। দ্বিতীয় অভিযোগপত্রটি আমলে নেয়ার ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ করা হয়নি। তাছাড়া প্রথম অভিযোগপত্রটিও গ্রহণযোগ্য না, কারণ ওই অভিযোগপত্রটিও মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে। যা তিনি পরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেট বাদ দিয়ে ২২৫ জন সাক্ষীর কেউই বলেননি গ্রেনেড ছুড়েছি বা ছুড়তে দেখেছি। ফলে, প্রকৃত খুনিকে সেটি নাই। ফলে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় না। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসএম শাহজাহানের মতে, এ মামলার দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে, সেটি আইনিভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, দ্বিতীয় অভিযোগপত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেয়া হয়নি, সরাসরি জজ আদালতে দেয়া হয়। সেজন্য এ অভিযোগপত্র ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী গৃহীত হতে পারে না। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে কে গ্রেনেড ফাটালো, তা নিয়ে কারও সাক্ষ্য নেই বা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। এর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিষয়ে বলেন, আমি এটি উল্লেখ করেছি। যদিও তার কোনো আপিল নেই। কিন্তু আপনি (আদালত) যদি মনে করেন যে, এ মামলার কোনো আসামির বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়নি, বা দায়সারা গোছের চার্জশিট দেয়া হয়েছে, মামলা প্রমাণ না হলে, খালাস পাওয়ার যোগ্য হলে আদালত খালাস দিতে পারেন। ভারত, পাকিস্তান ও আমাদের সুপ্রিম কোর্টে এর নজির আছে।
বিএনপি’র শীর্ষ আইনজীবীরা যা বলেন: হাইকোর্টের রায় ঘোষণার সময় বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল উপস্থিত ছিলেন। পরে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমে তারেক রহমান ন্যায়বিচার পেয়েছেন। প্রমাণ হয়েছে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তাকে এই মামলায় সাজা দেয়া হয়েছিল। আজ তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। গত দুই দশক এই মামলা দেশের রাজনীতিতে প্রভাব রেখেছে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রপাগান্ডার শিকার হয়েছেন তারেক রহমান। আমরা ও দেশবাসী মনে করে আজ তারেক রহমান ন্যায়বিচার পেয়েছেন। ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, রাজনৈতিকভাবে এ মামলাটা পরিচালিত হয়েছে তারেক রহমান এবং বিএনপি’র বিরুদ্ধে। যখন শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ১৬১ ধারা (জবানবন্দি) দেন, সেখানেও তারেক রহমানের নাম ছিল না। পরে ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য তারেক রহমানকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়। এ কারণে সব কিছু কনসিডার করে এ মামলার কোনো এভিডেন্স নেই, দ্বিতীয় ১৬৪ যে করা হয়েছিল (মুফতি হান্নানের) তার কোনো সাক্ষ্যমূল্য নেই, কোনো সাক্ষী তারেক রহমানের নাম বলেননি। সব বিবেচনা করে তারেক রহমানসহ সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
এডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম কোথাও ছিল না। পরে আব্দুল কাহহার আকন্দকে (সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা) দিয়ে তারেক রহমানকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করে সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি আরও বলেন, সরাসরি সাক্ষ্য না থাকলে কাউকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সাজা দেয়া যায় না। সে সমস্ত দিক বিচার বিশ্লেষণ করে আদালত মনে করেছে এ মামলায় যারা আপিল করেছে এবং যারা আপিল করতে পারেনি, প্রত্যেককে খালাস দেয়া প্রয়োজন। জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, সারা বছর আওয়ামী লীগ এটাকে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তারা চেয়েছিল তারেক রহমানকে এ মামলা দিয়ে চিরজীবন বাইরে রাখবে। এমনকি তাকে মৃত্যুদণ্ডও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালত কোনো এভিডেন্স পাননি যে, তারেক রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেবেন। যাই হোক আজকের রায়ের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কোনো দণ্ডই থাকলো না।
মামলার পূর্বাপর: ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ২৪ জন মারা যায়। আওয়ামী লীগের দাবি এ হামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হামলার পরদিন মতিঝিল থানার তৎকালীন এসআই শরীফ ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। থানা পুলিশ, ডিবি’র হাত ঘুরে সিআইডি এই মামলার তদন্তভার পায়। ঘটনার চার বছর পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালের ১১ই জুন হত্যার অভিযোগ এবং বিস্ফোরক আইনে আলাদা দুটি অভিযোগপত্র দেন সিআইডি’র জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির। হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালের ২৯শে অক্টোবর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করে তাদের বিচারও শুরু হয়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করে। সিআইডি’র বিশেষ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ অধিকতর তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ৩রা জুলাই আসামির তালিকায় আরও ৩০ জনকে যোগ করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন। সেখানে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের নাম আসে। দুই মামলায় মোট ৫২ আসামির বিচার শুরু হলেও অন্য মামলায় তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মোট ৪৯ আসামির বিচার শুরু করেন বিচারিক আদালত। ২০১৮ সালের ১০ই অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূরউদ্দিন ওই মামলার রায় দেন। রায়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি’র চেয়ারপারসনের তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব প্রয়াত হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। সেইসঙ্গে ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও দেয়া হয়। রায়ের পর ওই বছরের ২৭শে নভেম্বর বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে। দণ্ডিতরাও রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন। ২০২১ সালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও আসামি শেখ আবদুস সালাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বিচারিক আদালতের রায়ের পর একই বছর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে পৌঁছে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা