অনলাইন ডেস্ক
হাতের আঙুলের অপারেশন করার সময় কুড়িগ্রামের শিশু মারুফা জাহান মাইশার (৫) মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেছে পুলিশ। মাইশার মৃত্যুর ১২ দিন পর আদালতের অনুমতি নিয়ে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে মাইশার মরদেহ উত্তোলন করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
সোমবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেদওয়ান ইসলাম এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকার রূপনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক নয়ন দাসের উপস্থিতিতে মাইশার মরদেহ উত্তোলন করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। তবে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে কোনও ফরেনসিক এক্সপার্ট না থাকায় ময়না তদন্তের জন্য মাইশার মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন দাস।
তদন্ত কর্মকর্তা নয়ন দাস জানান, আদালতের আদেশের কপি পাওয়ার পর সোমবার কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নেওয়া হয়। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে কবর থেকে মাইশার মরদেহ তুলে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে এই হাসপাতালে কোনও ফরেনসিক চিকিৎসক না থাকায় ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রংপুরে পাঠাতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। ময়নাতদন্ত শেষে শিশুটির মরদেহ দাফনের জন্য আবারও তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে মাইশার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মাইশার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন। তবে আমরা অন্যান্য দিকও তদন্তের আওতায় রেখেছি। মাইশার মৃত্যুর পেছনে চিকিৎসকদের অবহেলা ছিল কি না তাও গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
যে হাসপাতালে অপারেশন করা হয়েছিল সেটি অপারেশনের জন্য উপযুক্ত ছিল কিনা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের কার কতটুকু দায় ছিল তাও বিবেচনায় নিয়ে সঠিক ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান এই তদন্ত কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, শিশু মাইশার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের পৌর এলাকার ভেলাকোপা ব্যাপারী পাড়া গ্রামে। সাড়ে চার বছর পূর্বে মাত্র ৯ মাস বয়সে চুলার আগুনে মাইশার ডান হাতের আঙুল পুড়ে কুকড়ে যায়। গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে মাইশার আগুনে পোড়া হাতের আঙুলের অপারেশন করার সময় শিশুটির মৃত্যু হয়। পরে সেদিনই শিশুটির মরদেহ নিয়ে কুড়িগ্রামে ফিরে আসেন তার বাবা মা। দাফনের আগে শিশু মাইশার গোসল করানো নারীরা দেখতে পান, মাইশার নাভির নিচে পেট জুড়ে কেটে সেলাই করা। এ ঘটনা প্রকাশ হলে এলাকায় নানা গুঞ্জণ শুরু হয়।
শিশুটির পরিবারের দাবি, হাতের অপারেশন করার সময় তাদের মেয়ের পেট কেন কাটা হয়েছে তা তারা জানেন না। এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানায় শিশুটির পরিবার ও এলাকাবাসী। পরে এ নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতর আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালটি সিলগালা করে দেয়। হাসপাতালটি নিবন্ধন ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছিল বলেও জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
পরে ৫ ডিসেম্বর মাইশার বাবা মোজাফফর হোসেন বাদী হয়ে অপারেশন আয়োজনকারী চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব, অপারেশনকারী চিকিৎসক ডা. শরিফুল ইসলাম ও এনেস্থেসিয়ার চিকিৎসক ডা. রনির নাম উল্লেখ করে আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালের অজ্ঞাত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিরপুরের রূপনগর থানায় মামলা করেন।
তবে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালের অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. আহসান হাবীব দাবি করেন, তিনি অপারেশন করেননি। রূপনগরের আলম মেমোরিয়াল হাসপাতালে অপারেশন অ্যারেঞ্জ করে দিয়েছেন। শিশুটির মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা। হাতের কাটা অংশে স্কিন জোড়া দিতেই পেটের নিচের অংশ থেকে স্কিন কেটে নিয়ে সেলাই করা হয়েছিল। এখানে অন্য কোনও কারণ নেই। অ্যানেস্থেসিয়ার কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।