ভারতের বিপক্ষে গোলাপী বলে দিবারাত্রির টেস্ট ক্রিকেটের ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ৪৬ রানে হেরে গিয়েছে।
বাংলাদেশ এ নিয়ে মোট ৮৮টি টেস্ট ম্যাচ হারলো। যার মধ্যে ৪২টিই ইনিংস পরাজয়।
বোরিয়া মজুমদার যিনি একজন ক্রিকেট লেখক ও ক্রিকেট নিয়ে পড়ালেখা করেছেন, তিনি বলেন এই টেস্ট সিরিজে টেস্ট ক্রিকেটের এক নম্বর দল ও নয় নম্বর দলের পার্থক্য পরিষ্কার হয়েছে।
“দক্ষতার অভাব আছে, ভারতের এই বোলিং লাইন আপের বিরুদ্ধে খেলার যে দক্ষতা সেটা বাংলাদেশের নেই,” বলেছেন বোরিয়া মজুমদার।
ভারতের এই বোলিং লাইন আপকে বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা টেস্ট বোলিং লাইন আপ বলেছেন মজুমদার।
তিনি বলেন, “এখানে বাংলাদেশকে ছোট করে দেখার কোনোই কারণ নেই, কিন্তু এটা স্বীকার করতেই হবে ভারতের এই দলটা বাংলাদেশের চেয়ে দক্ষতা ও মানসিক দুই দিকেই অনেক এগিয়ে।”
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ জিতেছে। কিন্তু বাংলাদেশের তো চারদিনের ক্রিকেট ততটা শক্তিশালী না। এই মুহূর্তে ভারতকে হারানো অবশ্যই কঠিন বলে মনে করেন বোরিয়া মজুমদার।
“সাকিব আল হাসান নেই, তামিম ইকবাল নেই। তাদের ছাড়া বাকিরা বেশ দুর্বল। মাহমুদুল্লাহ যেভাবে খেলেছেন, ইমরুল যেভাবে খেলেছেন এটা ভারতের বিপক্ষে অনেক কম হয়ে যায়”
প্রথম ইনিংসে টসে জিতে ব্যাটিং নেয়া, নেমে ১০৬ করা সব মিলিয়ে মানসিকভাবে বেশ পিছিয়েই ছিল বাংলাদেশ।
ভারতের নতুন ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে যেমন আয়োজন করা হয়েছিল কলকাতা টেস্ট ঘিরে।
গোলাপী বলের ক্রিকেটের দুই দেশের প্রথম ম্যাচটি হয়েছে অনেকটাই একপেশে।
ভারতে বাজেভাবে হারার কারন জানালেন মমিনুল
ম্যাচের দ্বিতীয় সেশনের মধ্যেই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় খেলার ফলাফল।
দিবারাত্রির এই টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল সন্ধ্যায় ব্যাটসম্যানরা কেমন ব্যাট করে। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১০৬ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
জবাবে বাংলাদেশ যখন বল করতে নামে ভারত রান তোলে ৩৪৭।
এরপর ডিক্লেয়ার দিয়ে দেন ভিরাট কোহলি।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ভিরাট কোহলি ও তার দলের মনোভাব পরিষ্কার হয়ে যায়, দুই দিনের মধ্যেই খেলা শেষ করতে চান তারা।
এই লক্ষ্যে ইশান্ত শর্মার আগ্রাসী বোলিংয়ে ১৩ রানের চারটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এর মধ্যে আবার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন।
শুধু এই টেস্টেই বাংলাদেশের তিনজন ক্রিকেটার চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
লিটন দাস, নাইম হাসান ও সর্বশেষ রিয়াদ।
সব ব্যাটসম্যান ব্যর্থ
সাদমান ইসলাম অনিক যাকে বাংলাদেশের টেস্টে নিয়মিত দলে নেয়া হচ্ছে তিনি ৪ ইনিংস মিলিয়ে রান তুলেছেন ৪১।
ইমরুল কায়েস ঘরোয়া ক্রিকেটে দ্বিশতক হাঁকিয়েই দলে ঢুকেছেন, ৪ ইনিংস মিলিয়ে তিনি তুলেছেন ২১।
রানের স্বল্পতার চেয়েও বড় ব্যাপার ইমরুল কায়েসকে কোনো ইনিংসেই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হয়নি। বরং বোলারদের পরিকল্পনা মাফিকই ব্যাট চালিয়ে আউট হয়েছেন দুইবার।
মমিনুল হক দীর্ঘদিন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যানের তকমা নিয়ে আছেন।
কিন্তু ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে মমিনুল দুই ইনিংসেই শুন্য রানে আউট হন।
যাকে ক্রিকেটের ভাষায় ‘পেয়ার’ বলা হয়।
বাংলাদেশকে যে পরামর্শ দিলেন কোহলি
ভারতের বিপক্ষে ‘পেয়ার’ পাওয়া প্রথম ক্রিকেট অধিনায়ক মমিনুল হক। প্রথম টেস্টেও মমিনুল হক ৩৭ ও ৭ রান করে আউট হন।
অর্থাৎ গোটা সিরিজে চার ইনিংস ব্যাট করে তিনি রান তুলেছেন ৪৩।
ইন্দোর টেস্টের প্রথম ইনিংসে মমিনুল হক অশ্বিনের অফ-স্টাম্প লাইনের বল ছেড়ে দেন। যেটা সোজা গিয়ে অফ-স্টাম্পেই লাগে।
এরপরের তিন ইনিংসেই মমিনুল বোলারের গতির কাছে পরাস্ত হন।
যদিও ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মমিনুল হক টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার একটা আভাস দিয়েছিলেন কিন্তু যত দেশের বাইরে খেলা শুরু হয় ততই তার ব্যাটিংয়ের ভুল-ভ্রান্তি চোখে পড়তে থাকে।
পেস ও স্পিন দুই ধরণের বোলিংয়েই নির্দিষ্ট কিছু ডেলিভারি মমিনুল হক বরাবরই খেলতে পারেননি।
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি সিরিজ চলাকালীন বাংলাদেশের তৎকালীন কোচ হাথুরুসিংহে মমিনুল হকের স্পিন বল খেলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরের সিরিজেই মমিনুল হক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই একই টেস্টে দুটো সেঞ্চুরি করেন, যার মধ্যে একটি ইনিংস ছিল ১৭৬ রানের।
কিন্তু তার পরে বাংলাদেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ছাড়া বলার মতো রান নেই মমিনুল হকের ব্যাটে।
দেশের মাটিতে মমিনুল হকের টেস্ট গড় ৫৫, দেশের বাইরে ২১।
মোহাম্মদ মিথুন, যিনি বাংলাদেশের হয়ে ৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, তার টেস্ট গড় ২০।
এই টেস্ট সিরিজে চার ইনিংস ব্যাট করে তিনি রান তুলেছেন ৩৭।
মুশফিকুর রহিম এই সিরিজে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, যিনি চার ইনিংসে রান তুলেছেন ১৮১। দুটি অর্ধশতকও হাঁকিয়েছেন।
তবে কলকাতা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ইনিংস পরাজয় এড়াতে ৫৪ রান প্রয়োজন ও মুশফিকুর রহিমের ব্যক্তিগত রান ৭৪ তখন সামনে এগিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন তিনি।
বাম পায়ের দারুণ শর্টে সানি লিওনের দুই গোল
কিন্তু গণমাধ্যমে ও সংবাদ সম্মেলনে একটা প্রশ্ন উঠেছে যে মুশফিকুর রহিম কেনো চার নম্বরে নামছেন না।
সরাসরি মুশফিকের পক্ষ থেকে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে ২০ গড়ের মোহাম্মদ মিথুন যখন চার নম্বরে খেলছেন সেটা গোটা দলের ব্যাটিং-য়েই প্রভাব ফেলছে।
লিটন দাস ২ ম্যাচে তিন ইনিংস ব্যাট করেছেন যার মধ্যে একটিতে মাথায় বল লাগার পর মাঠ ছাড়েন।
এই তিন ইনিংসে তার রান ৮০। তিনিই বাংলাদেশের দ্বিতীয় সফলতম ব্যাটসম্যান এই সিরিজে।
কলকাতা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
যিনি এই পুরো সিরিজ জুড়েই বাজে শট খেলে আউট হয়ে মাঠ ছেড়েছেন।
ইন্দোর টেস্টের প্রথম ইনিংসে অফ-স্টাম্পের লাইনে গিয়ে মিডল-লেগ স্টাম্প বরাবর একটি বল সু্ইপ করতে গিয়ে আউট হয়ে যান রিয়াদ।
তার আউট হবার ধরণ এমন ছিল যেন দ্রুত রান তুলতে হবে। বিবিসি বাংলা।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা