অনলাইন ডেস্ক
র্যাব সূত্র বলছে, সহিংসতায় জড়ানো অপরাধীদের শনাক্তে র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব প্রথমে অভিযান চালিয়ে হেফাজতের হরতালে ঘোড়ায় চড়ে পিকেটিং করা যুবক হাছান ইমামকে গ্রেফতার করে। পরে ধর্মীয় আয়োজনে উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ায় অভিযুক্ত ‘শিশুবক্তা’খ্যাত রফিকুল ইসলামকেও র্যাব গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নজরদারিতে থাকা হেফাজত নেতাদের অধিকাংশই ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের তাণ্ডবসহ সহিংসতার ঘটনায় কোনো না কোনো মামলার আসামি। নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার মামলায়ও অনেকে আসামি। ওই তিনদিনের সহিংসতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭৭টি মামলা হয়েছে। তাতে আসামি ৪৯ হাজারের বেশি। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৫০ জনের বেশি আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, হেফাজতের মধ্যে এখনো সক্রিয় রয়েছেন- এমন ৩০ জন নেতার একটি তালিকা করা হয়েছে। তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। এরমধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। বাকি ২৫ জনের ওপর কড়া নজরদারি রয়েছে। এসব নেতারা সবাই ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার কোনো না কোনো মামলার আসামি। পর্যায়ক্রমে তাদের গ্রেফতার করা হতে পারে।
যদিও সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে কোণঠাসা হেফাজতের শীর্ষ নেতারা এখন সমঝোতার পথ খুঁজে ফিরছেন। গত ২০ এপ্রিল রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তার বাসভবনেও যান দলটির ১০ নেতা। হেফাজতের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, তাদের আর কোনো নেতাকে যেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার না করে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী যে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছিল, ঠিক তখন থেকেই একটি কুচক্রি মহল দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা সৃষ্টি করতে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। র্যাব এসব ব্যক্তি বা দলকে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেখে ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করে। এসব অপরাধী শনাক্তে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতারের পর নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে বিভিন্ন পুরোনো ভিডিও ‘লাইভ’ আকারে প্রচার করা হয়েছে। এভাবে পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে গুজব রটানোয় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যারা র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের সঙ্গে হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না, জানতে চাইলর কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাব কোনো দল কিংবা ব্যক্তিকে টার্গেট করে অভিযান পরিচালনা করে না। যারা দেশব্যাপী নাশকতা সৃষ্টি করেছে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছে এবং যারা রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
‘যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগেরই নিজেদের শক্তি জানান দেয়া এবং রাজনৈতিক পরিচয়টাকে জানান দেয়াই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তারা ঢাল-তলোয়ার হিসেবে বিভিন্ন মাদরাসা বা এতিমখানার কোমলমতি শিশুদের ব্যবহার করেছে’—যোগ করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনটির ওপর সরকারের যে নিয়ন্ত্রণ ছিল, তা এখন আর নেই। হেফাজতের নতুন আমির জুনায়েদ বাবুনগরীসহ শীর্ষ নেতারা কথায় কথায় সরকারের বিরোধিতা করেন। গত নভেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বিরোধিতা করার পর বিষয়টি অনেক স্পষ্ট হয়।
এরপর চলতি বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে আন্দোলনের নামে সহিংসতায় লিপ্ত হয় হেফাজত। তবে গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের প্রভাবশালী নেতা মামুনুল হক তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে ধরা পড়লে এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হেফাজত নেতাকর্মীরা ভাঙচুর চালালে নড়েচড়ে বসে সরকার।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা