হবিগঞ্জ শহরকে একটি পরিচ্ছন্ন সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চান হবিগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র মিজানুর রহমান। এরই মধ্যে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, মশক নিধন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, যানজট নিরসন, আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে সারা শহরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ পৌরসভার সার্বিক উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মেয়র। গতকাল দুপুরে মানবজমিনের সঙ্গে একান্তে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। মেয়র মিজান বলেন, বর্তমান সময়ে হবিগঞ্জ শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। সেটা দূরীকরণে জেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে।
এসব অভিযানে হবিগঞ্জ পৌরসভা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে। তবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার আর একটি বড় কারণ পৌর নাগরিকদের সচেতনতার অভাব। শহরের পানি নিষ্কাশনের অধিকাংশ ড্রেনে ময়লা ও পলিথিন ফেলে ড্রেনগুলো বন্ধ করে রাখেন বাসা-বাড়ির লোকজন।
পৌরসভার পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করার পরও তারা এ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ থাকায় বৃষ্টিপাত হলেই শহরের বিভিন্ন স্থানে সীমাহীন জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাই আমি নাগরিকদের সচেতন করতে পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সভা করে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া শহরের ড্রেন পরিষ্কার রাখতে পৌরসভার একটি বিশেষ টিম প্রতিদিন কাজ করবে।
পর্যায়ক্রমে শহরে মাস্টার ড্রেন তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, শহরের প্রতিদিনের ময়লা ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করতে ২০০৪ সালে জমি ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরেও এ স্টেশন স্থাপন করা হয়নি। বাধ্য হয়ে শহরের বাইপাস সড়কে আধুনিক স্টেডিয়ামের কাছে পৌরসভার সকল ময়লা ফেলে ময়লার পাহাড় তৈরি করা হয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে জন চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমি এ ডাম্পিং স্টেশন তৈরি করব। এছাড়া শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিটি বাসার সামনে একটি ডাস্টবিন রাখা হবে। এ ব্যাপারে কয়েকটি এনজিও’র সাথে আলোচনা হয়েছে। আগামী ১০ই জুলাইয়ের সভায় এ বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, ইদানিংকালে পৌর শহরের বিভিন্ন বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া শহরে প্রায়ই ঘটছে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা। তাই শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হবিগঞ্জ পৌরসভার সকল এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এছাড়া রাতে শহরের প্রতিটি এলাকায় স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হবে। পৌরবাসীকে মশার উপদ্রব থেকে বাঁচাতে সকল এলাকায় নিয়মিত মশক নিধন ওষুধ প্রয়োগ করা হবে। সকল বাসা-বাড়িতে পৌর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। শহরের যানজট নিরসনে নতুন করে কোন টমটমের লাইসেন্স দেয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে শহরে টমটম চালনা সীমিত করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জ জেলার সাংস্কৃতিক উন্নয়নে আমি বিশেষভাবে কাজ করতে চাই। পরিত্যক্ত শাহ এএমএস কিবরিয়া মিলনায়তন সংস্কার করা হবে। পৌরসভার উদ্যোগে প্রতিবছর একুশে বইমেলা ও বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড প্রসার করা হবে। এছাড়া শহরের ফুয়ারা চালু ও শিশুদের বিনোদনের জন্য একটি শিশু পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। জরাজীর্ণ পৌর পাঠাগারের উন্নয়ন করে পাঠকদের উপযোগী করে তোলা হবে। মেয়র বলেন, একটি সবুজ ও নান্দনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে শহরে বৃক্ষরোপণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করতে চাই। এছাড়া যুব সমাজকে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে। ইভটিজিং প্রতিরোধে পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হবে।
এছাড়া যুবক যুবতীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে বিভিন্ন প্রজেক্ট গ্রহণ করা যায় কিনা এ ব্যাপারে বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার আলোচনা চলছে। মেয়র মিজান বলেন, পৌরবাসী ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করেছেন। আমি যতদিন এ পদে থাকব তাদের সেবক হিসেবেই কাজ করে যেতে চাই। কারো উপর যাতে অযাচিত পৌরকর চাপিয়ে না দেয়া হয় এ ব্যাপারে আমি সতর্ক থাকব। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্সসহ পৌরসভায় যে কোন কাজে এসে যাতে ব্যবসায়ী ও নাগরিকরা হয়রানীর শিকার না হন এ ব্যাপারে পৌরসভার কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দেয়া হবে। মেয়র মিজান বলেন, আল্লাহর অশেষ দয়ায় এবং পৌরবাসীর মূল্যায়নে আমি মেয়র হয়েছি। আমি আমার কাজের মাধ্যমে চেষ্টা করব তাদের ঋণ পরিশোধ করার। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করব পৌরবাসী যাতে শান্তিতে ও নিরাপদে থাকতে পারেন। সততা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে দলমত নির্বিশেষে সকল সম্মানিত নাগরিকের মতামতকে মূল্যায়ন করে আমি শহরবাসীকে একটি ‘গ্রিন এন্ড ক্লিন’ পৌরসভা উপহার দিতে চাই। এজন্য সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করি।
NB:This post is copied from mzamin
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা