অনলাইন ডেস্ক
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই বোতলজাত সয়াবিন কিনতে এসে পাচ্ছেন না। পেলেও দামের কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াচ্ছেন দোকানিরা।
মিরপুরের মুসলিম বাজার, ১১ নম্বর কাঁচাবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, তেজগাঁও কলোনি বাজার ঘুরে বেশির ভাগ দোকানে বোতলজাত ভোজ্যতেল পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা ঢাকার অন্য খুচরা বাজারগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অন্য ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। অনেকেই লুকিয়ে রেখে পরিচিত ক্রেতাকে দিয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। বোতলজাত সয়াবিন সংকটের কারণে বেড়ে গেছে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম। এর ফলে সুযোগ সন্ধানী কিছু দোকানি বাড়তি দাম পেতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের বোতল কেটে রাতের আঁধারে ড্রামে ঢেলে খোলা সয়াবিন হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। এজন্য বাজার মনিটরিং না থাকাকে দায়ী করছেন ভোক্তারা।
বাজার করতে আসা এক ক্রেতা সাইমুম ইসলাম বলেন, ‘বাজারের বেশ কয়েকটি মুদি দোকান ঘুরেও এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাইনি। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও বিক্রি করছে না। দু-একটি দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল মিলছে। তাই বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনলাম।’
শারমীন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘আমি সব সময় বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনে থাকি। বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে গিয়েও বোতলজাত সয়াবিন তেল না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে আমি খোলা সয়াবিন তেল কিনেছি। তাও আবার দাম বেশি। এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ২০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এখন দেখছি বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম আরও বেশি।’
মুদি দোকানিরা বলছেন, ডিলাররা ইচ্ছা করেই তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তেল কেনার জন্য আটা-ময়দার বস্তা কেনার শর্তজুড়ে দিচ্ছেন। দুই সপ্তাহ ধরে চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। মানুষের প্রথম চাহিদা থাকে তেল। সেটা যদি না দিতে পারি, তাহলে অন্য মালামাল বিক্রি করতেও সমস্যা পোহাতে হয়।
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানদার শামসুল হক বলেন, ‘ গত দুই সপ্তাহ ধরে চাহিদার অর্ধেকও বোতলজাত সয়াবিন তেল দিতে পারছেনা ডিলাররা। ঠিকমতো তেল না পাওয়ার জন্যই এমন সংকট তৈরি হয়েছে। মূলত দাম বাড়াতেই কোম্পানি ও ডিলাররা মিলে এমন কারসাজি করছে বলে মনে করছেন এই দোকানদার।
জানা যায়, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েল লিটারপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে খোলা পাম অয়েল ১৬০-১৬২ এবং সয়াবিন ১৭০-১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৬৭ টাকা, দুই লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে তেল সরবরাহ কমেছে বলে দাবি তেল আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। তারা বলছেন, বিশ্ববাজারের হিসাবে লিটারে ১০-১৩ টাকা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আমদানি কমেছে ২০ শতাংশের মতো।
তবে আমদানিকারকদের এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বাজারে আসা তৌহিদুল নামের একজন ক্রেতা। তিনি বলেন, তেল আমদানি হয়েছে তিন-চার মাসে আগে। অথচ এখন বলা হচ্ছে বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে। এটি আসলে অযৌক্তিক কথা। কর ও শুল্ক কমানোর পরও তেলের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে। এখন আবার নতুন করে দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। এ ব্যাপারে সরকারের শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই ক্রেতা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে, খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪-৫ টাকা ও পাম তেলের দাম ৩-৪ টাকা কমেছে। বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫-১৬৮ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১৫৭-১৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও এক মাস আগের তুলনায় খোলা পাম ও সয়াবিনের দাম এখন বেশি।
গত নভেম্বরেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট তৈরি হয়। পরে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে। পরে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেলের সরবরাহ বাড়ায়। গত তিন-চার দিনে তা আবার কমেছে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা