অনলাইন ডেস্ক
এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে সৌদি আরবের পর্যটন মূলত হজ ও উমরাহকেন্দ্রিক। তেলের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা কমাতে রক্ষণশীল সৌদি রাজতন্ত্রের নজর বেশ কিছুদিন ধরেই পর্যটনের ওপর।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিদেশি, বিশেষ করে পশ্চিমা পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেমে পড়েছে সৌদি সরকার। তাই ধর্মনিরপেক্ষ পর্যটন চালু করা এখন লক্ষ্য রিয়াদের।
একই সঙ্গে দেশটির নাগরিকদের আগ্রহও দেশীয় পর্যটনেই ধরে রাখতে চায় রিয়াদ। ২০১৯ সালে বিদেশে পর্যটনে দুই হাজার ২০০ কোটি ডলার খরচ করেছে সৌদি নাগরিকরা। সৌদি আরবের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের কম; বেশিরভাগই বিনোদনের জন্য বিদেশে যেতে আগ্রহী।
এখন পর্যন্ত মূলত ধর্মভিত্তিক পর্যটনের আওতায় রাজতন্ত্র পরিচালিত দেশটিতে বিদেশি পর্যটকরা পা রাখেন। কিন্তু ইসলামের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনাতেই ঘোরাফেরা সীমিত রাখেন বেশিরভাগ মুসল্লি।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি- হজ প্রতি বছর একবার অনুষ্ঠিত হয়। বছরের বাকি সময় হয় উমরাহ। এই দুই উপলক্ষে মহামারিপূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় বছরে সৌদি আরবমুখী হতেন দেশবিদেশের ৯৫ লাখের বেশি হাজী।
কিন্তু সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের ২০৩০ লক্ষ্যমাত্রার আওতায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায় রিয়াদ। তেলনির্ভর অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে এ উদ্যোগ।
২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরে অমুসলিম পর্যটকদের টানতে ই-ভিসা চালু করেছে রিয়াদ। কিন্তু গত বছর মহামারি শুরু হয়ে যাওয়ায় সে উদ্যোগ সাফল্যের মুখ দেখেনি।
মহামারি ও লকডাউনের প্রভাবে সৌদি আরবের ধর্মভিত্তিক পর্যটনেই এসেছে বড় আঘাত।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলতি বছর নাগরিক ও অভিবাসীসহ সৌদি আরবে বসবাসরত মাত্র ৬০ হাজার মানুষকে হজের অনুমতি দেয়া হয়েছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১০ হাজার।
দীর্ঘদিন সীমান্ত বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ৩০ মে কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত খুলে দেয় সৌদি সরকার। কিন্তু রূপ পরিবর্তিত ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস, বিশেষ করে অধিক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আবারও বিভিন্ন সীমান্ত বন্ধ করে দিতে শুরু করেছে রিয়াদ।
জেদ্দাভিত্তিক পর্যটন উপদেষ্টা ক্রিস রোজেনক্র্যান্স বলেন, ‘নজিরবিহীন আরেকটি বছর পার করছি আমরা। ধর্মভিত্তিক পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা থমকে তো গেছেই, সাংস্কৃতিক বা রোমাঞ্চকেন্দ্রিক পর্যটনেও ধস নেমেছে।’
জেদ্দার ট্যুর গাইড সামির কোমোসানি বলেন, ‘এই বিশাল ও সুন্দর দেশটি থেকে পর্যটকদের অনেক কিছু পাওয়ার আছে। আমারও পর্যটকদের এসব দেখাতে ভালো লাগে। কিন্তু করোনার কারণে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটক আসা কমে গেছে।’
পর্যটন খাত সমৃদ্ধ করে তোলার মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রবৃদ্ধি তিন শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশে নেয়ার বিষয়ে আশাবাদী রিয়াদ।
২০৩০-এর দশকের মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা বছরে ১০ কোটিতে নিতে চায় সৌদি প্রশাসন। একই সঙ্গে ২০২৫ সালের মধ্যে ধর্মভিত্তিক পর্যটকের সংখ্যা এক কোটি ৭০ লাখ থেকে বাড়িয়ে তিন কোটিতে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রাও নিয়েছে রিয়াদ।
এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকের স্থান সংকুলান নিশ্চিতে অবকাঠামোগত সম্প্রসারণের কাজও শুরু করেছে রিয়াদ।
চলতি মাসেই একটি নতুন সরকারি বিমান সংস্থা প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। আগামী নয় বছরে পরিবহন খাতেই প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চান তিনি।
রিয়াদে একটি নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি হচ্ছে বলেও সম্প্রতি সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ।
এরকম বিভিন্ন উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে সৌদি আরবের লক্ষ্যের প্রতিফলন ঘটছে।
লোহিত সাগর উপকূলে পরিবেশবান্ধব প্রবালকেন্দ্রিক পর্যটন গড়ে তুলতে ৫০টি হোটেল ও এক হাজার ৩০০ আবাসিক ইউনিট নির্মাণাধীন।
সৌদি আরবে সরকারি বিনিয়োগ তহবিল (পিআইএফ) ৩৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তুলতেও বিনিয়োগ করছে।
সৌদি যুবরাজের অর্থনীতি পুনর্গঠন কর্মসূচির কেন্দ্রে থাকা কার্বনমুক্ত মরু মেগাসিটি তৈরিতে ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে পিআইএফ।
সৌদি আরবের এসব পরিকল্পনার বিপরীতে ঝুঁকি হিসেবে রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোতে কয়েক দশক ধরে পরিচালিত জনপ্রিয় সব পর্যটন কেন্দ্র।
যেমন লোহিত সাগর উপকূলে তুলনামূলক সস্তা মিসরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র শার্ম আল-শেখ বিচ রিসোর্ট। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও শার্ম আল-শেখে সামাজিক আচরণবিধি ও অ্যালকোহল বিক্রির নীতিমালা অত্যন্ত শিথিল।
আবার উত্তরে রয়েছে জর্ডানের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র পেত্রা ও ওয়াদি রাম।
তেলনির্ভর অর্থনীতি সংস্কারে সংযুক্ত আরব আমিরাতও পর্যটনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
প্রতিবেশীদের টেক্কা দিতে ইসলাম ধর্মে উল্লেখিত পবিত্রতম দুই নগরীকে হাতিয়ার করেছছে সৌদি প্রশাসন। হজ ও উমরাহকেন্দ্রিক পর্যটনের ইতিহাস দেশটিতে হাজার বছরের।
মক্কা ও মদিনায় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও ইসলামের সংস্কৃতি-ইতিহাস দেখে ফেরার পর তাদের সৌদি আরবের অন্যান্য অঞ্চল ঘুরে দেখার বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে নেয়া হচ্ছে নানা পদক্ষেপ।
এক্ষেত্রে ধর্মীয় আচারে অংশ নেয়া পর্যটকদের ধর্মে নিষিদ্ধ অ্যালকোহল বা সামাজিক আচরণবিধি শিথিলকৃত পরিবেশে কিভাবে স্বস্তি দেয়া যায়, তা নিয়েও চলছে বিস্তর গবেষণা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা