অনলাইন ডেস্ক
আজ শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুবাস চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত যাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের শরীর এতটাই পোড়া যে লাশ দেখে চেনার উপায় নেই। ঢাকা মেডিকেলের মর্গে লাশগুলো রাখা হবে। স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হবে।
পরে এল আরও চারটি অ্যাম্বুলেন্স। সবগুলো থেকে একইভাবে মরদেহ নামিয়ে ভেতরে নিয়ে মেঝেতে রাখা হয়। একপর্য়ায়ে ময়নাতদন্ত কক্ষের মেঝে মরদেহে ভরে যায়। ফলে বাকি মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের ঘরে নিয়ে টেবিলের ওপর রাখা হয়। কিন্তু তাতেও জায়গা হচ্ছিল না। ফলে ময়নাতদন্ত কক্ষের ফ্লোরের চারপাশে মরদেহ মোড়ানো ব্যাগগুলো রাখা হয়।
এসময় বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার কর্মীরা ব্যস্ত হয়ে মর্গে কতগুলো মরদেহ এল তা জানতে এদিক-সেদিক ছুটছেন। সারিবদ্ধ মরদেহ দেখে অস্ফুট স্বরে কেউ একজন বলে উঠলেন- উফ! কী বিভৎস!
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা ৪৯ জন মরদেহ ঢামেকের মর্গে আনার পরের দৃশ্য ছিল ঠিক এমনই।
ঢামেক মর্গে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম বেপারী জানান, মোট ৪৯টি মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে আনা হয়েছে। মরদেহগুলো পুড়ে গেছে। ফলে তাদের চেনা যাচ্ছে না। দাবিদার স্বজনদের ডিএনএ নমুনা নিয়ে মরদেহ শনাক্ত করা হবে। এরপর মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা দেয়া হবে।
ঢামেক মর্গে ৪৯টি মরদেহ রাখা হলেও এতগুলো মরদেহ সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের জন্য মরচুয়ারি কুলার নেই। জানা গেছে, ঢামেক মর্গের মরচুয়ারিতে ২০টি মরদেহ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।
কিন্তু আগে থেকেই মরচুয়ারি কুলারে ১০টি মরদেহ রয়েছে। ফলে মরদেহগুলোর খুব বড়জোর অর্ধেক সংখ্যক মরচুয়ারি কুলারে রাখা যাবে। বাকিগুলো মেঝেতেই পড়ে থাকবে।
ঢামেক মর্গের অ্যাসিসটেন্ট সিকান্দার আলীর হিসাবে ৭-৮টি মরদেহ রাখার ব্যবস্থা আছে মরচুয়ারি কুলারে। তিনি বলেন, ‘এতগুলো মরদেহ শুধু ঢামেক মর্গে না পাঠিয়ে বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজের মর্গে ভাগ করে পাঠালে ভাল হতো।’
রূপগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার ঢামেক মর্গে আনা ৪৯ জনের শরীর পুড়ে সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে। মরদেহ দেখে চেনার উপায় নেই। পরিধেয় পোশাক বা অলংকার দেখে স্বজনরা চিনতে পারলেও ডিএনএ ম্যাচিং-এর আগে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে না।ঢামেক মর্গে ৪৯টি মরদেহ আনার পর থেকে মরদেহের খোঁজে স্বজনরা মর্গের সামনে ছুটে আসেন। কেউ ভাইকে, কেউ স্বামীকে, কেউ স্ত্রী আবার কেউ-বা নিকটাত্মীয়দের খুঁজে ফিরছেন।
তাদেরই একজন মসিউর রহমান। তার ছোট ভাই ওই ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। গতকাল থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে হন্যে হয়ে খুঁজছেন তার ভাইকে। তিনি জানান, সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তার ভাইয়ের মোবাইলে কল ঢুকলেও কেউ রিসিভ করেনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মরছে নাকি বেঁচে আছে, তা তো শিওর হতে অইবো। আমি কার কাছে যামু, কেমনে পামু।’
পঞ্চাশোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ তার স্ত্রীকে খুঁজতে এসেছেন। তিনি জানান, বৃহস্পতির সকাল ৮টায় বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে যান তার স্ত্রী। রাত ৮টায় তার ফেরার কথা ছিল। বিকেলে আগুন লাগার খবর পাওয়ার পর তাকে কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, অতীতে রানা প্লাজা, তাজরীন গার্মেন্টস, নিমতলী ও চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন করা হয়। পরবর্তীতে ডিএনএ ম্যাচিং-এর মাধ্যমে কোন কবরটিতে তার স্বজনকে দাফন করা হয়েছে তা জানিয়ে দেয়া হয়।
শুক্রবার বিকেল থেকে দাবীদারদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করে ডিএনএর নমুনা হিসেবে রক্ত সংগ্রহ শুরু হয়। তবে ময়নাতদন্ত আজ হবে কি-না জানতে চাইলে মর্গ অ্যাসিসটেন্ট সিকান্দার আলী বলেন, ‘এখনো সুরতহাল রিপোর্ট হাতে পাইনি। ফলে আজ ময়নাতদন্ত হবে কি-না, তা বলতে পারছি না।’
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা