সৌদি আরবে নারী গৃহশ্রমিক নির্যাতন-হত্যা বন্ধ ও প্রবাসী নারীশ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে।
শনিবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তাগণ বলেন, সৌদি আরবে অমানুষিক নির্যাতনে নাজমা বেগম (৪০) নামে মানিকগঞ্জের এক নারী শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর ১ মাস ২৪ দিন পর গত ২৪ অক্টোবর দেশে আসে নাজমা বেগমের মৃতদেহ। মৃত্যুর দু’দিন আগেও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বজনদের কাছে আকুতি জানান নাজমা। কিন্তু অর্থাভাবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। তিনি নির্যাতনের কথা জানিয়ে সৌদি আরবের বাংলাদেশী দূতাবাসে ফোনও করেছিলেন; কিন্তু তাকে কেউ সহযোগিতা তো করেইনি উল্টা গালিগালাজ করেছে। এভাবে গত দশমাসে সৌদিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লাশ হয়ে ফিরেছেন ১১৯ নারী গৃহকর্মী।
বক্তাগণ বলেন, নির্যাতনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন সৌদিতে গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। এরপর থেকে গত জুলাই মাস পর্যন্ত ৩ লাখ নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। দুই বছরের চুক্তিতে যাওয়া নারী গৃহকর্মীরা মাসে বেতন পান বাংলাদেশী টাকায় মাত্র ১৭ হাজার টাকা। চুক্তি অনুযায়ী গৃহকর্মীদের বিনা খরচে সৌদি আরব যাওয়ার কথা; কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা লেগে যায় সৌদি আরব যেতে।
বক্তারা বলেন, নির্যাতনের শিকার হয়ে এবছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট এই ৮ মাসে দেশে পিরেছেন ৮৫০জন নারী। এর মধ্যে আগস্ট মাসে একদিনেই ফিরেছেন ১০৯জন। তাদের অনেকে সেখানে শারীরিক-মানসিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। গত বছর ফিরেছেন ১হাজার ৩৫৩জন নারী। ফেরত আসা নারীশ্রমিকদের তথ্য মতে প্রবাসী নারী শ্রমিকের ৬১ ভাগ শারীরিক নির্যাতন, ১৪ ভাগ যৌন নিপীড়ন, ৫২ ভাগ দীর্ঘশ্রম, নির্যাতনজনিত অসুস্থতা ৬৩ ভাগ, ৮৬ ভাগ বেতন পান না অথবা নিম্ন বেতন পান এসব কারণে তারা ফিরে আসেন।
বক্তাগণ আরও বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তারা বিদেশে কাজ করতে যেয়ে লাশ হয়ে ফিরছেন, নির্যাতন সইতে না পেরে সব খুইয়ে দেশে ফিরে আসছেন।দেশে রেমিটেন্স পাঠনো এই শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না? প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা ও প্রবাসে দূতাবাসগুলো তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে না।
সমাবেশ থেকে নাজমা হত্যার বিচার দাবি করা হয়। এই হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারকে অবিলম্বে কূটনৈতিক ও আইনী পদক্ষেপ নেয়ার জোর দাবি জানানো হয়।
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম এর কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা রুশোর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহিলা ফোরাম এর ঢাকা নগর শাখার সদস্য রুখসানা আফরোজ আশা, নারীনেত্রী প্রীতিলতা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা নগর শাখার সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ। সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ঢাকা নগর শাখার সভাপতি জুলফিকার আলী ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় ।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা