স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ গড়ে তোলার পেছনে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের রয়েছে অপরিসীম অবদান, কিন্তু নেই যথাযথ স্বীকৃতি। তাই দেশের উন্নয়নকে আরো গতিশীল করতে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে পথ প্রদর্শনে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতের যে মূল্যবান অবদান রয়েছে তা সুসংগঠিতভাবে বই আকারে লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন।
বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ বিশিষ্ট প্রবীণ উন্নয়ন কর্মী, ‘সাউথ এশিয়া পার্টনারশিপ-বাংলাদেশ’ (স্যাপ বাংলাদেশ)-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ নূরুল আলমের আত্মজীবনীমূলক ‘আমার জীবন ও উন্নয়নের ৪৪ বছর’ বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি বলেন, মানুষের উন্নয়নে তাঁর মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি প্রয়োজন মানবিক ও মানসিক বিকাশ। উন্নয়নকে টেকসই করতে প্রয়োজন মানুষের মনকে মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্ব দ্বারা বিকশিত করা। তাই মৌলিক ও মানবিক অধিকারের পাশাপাশি আলোকিত মানুষ গড়ে তুলতেও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: এবার ভোলা রুটেও দিনের বেলায় জাহাজ চালু করছে গ্রীন লাইন পরিবহন
আসন্ন দেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেশের উন্নয়নের ৫০ বছরের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাম্পে-এর নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জনাব রাশেদা কে. চৌধুরী, টেরে ডেস হোমস-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবীর, ব্যুরো বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হাসান । তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন খাতের বহু অর্জন রয়েছে। কিন্তু সেসকল কাজ লিপিবদ্ধ করার চর্চার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এসকল কর্মকান্ড ও অর্জন দলিল বা বই আকারে নথিভুক্ত থাকলে তা থেকে পরবর্তী প্রজন্ম সে সম্পর্কে জানতে পারবে। তাই উন্নয়ন কর্মকান্ডে যুক্ত সকলকে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার জন্য আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই উদ্যোগের সূচনার জন্য সকলকে আমন্ত্রণ জানান তিনি।
টেরে ডেস হোমস-বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবীর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের চিত্র আমরা দেখতে পাই তার পেছনে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসমূহের অবদান অপরিসীম। উন্নয়নকর্মীরা মাঠে-ঘাটে, গ্রামে-গঞ্জে মানুষের সাথে মিশে গিয়ে তাদের উন্নয়নে কাজ করেছেন, সৈয়দ নূরুল আলম তেমনি একজন মানুষ।
ক্যাম্পে-এর নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে একেক দশকে একেক ইস্যুতে ও পদ্ধতিতে কাজ করেছে বেসরকারি সংস্থাগুলো। ত্রাণ সহায়তা, মানবিক অধিকার থেকে শুরু করে নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করেছে এই সংস্থাগুলো। কিন্তু সময়ের সাথে ডকুমেন্টেশনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে সেই কর্মকান্ডের ইতিহাস।
সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেন, স্যাপ-বাংলাদেশ-এর সাথে আমার কর্মকালীন সময় হতে ‘আমার জীবন ও উন্নয়নের ৪৪ বছর’ নামে একটি বই লেখা শুরু করি। এ গ্রন্থটি শুধু পরবর্তী প্রজন্মকে উন্নয়নকর্মে উৎসাহিত করবে তাই নয়, দেশের সামাজিক ও সার্বিক উন্নয়নের ইতিহাস সম্পর্কে এ গ্রন্থে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। উন্নয়ন নিয়ে যারা কাজ করতে চায় তাদের জন্য পথরেখা রেখে যাওয়া প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধোত্তর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে তাঁর বাধা-বিপত্তি ও চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার নেপথ্য চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে এই বইটিতে।
সৈয়দ নূরুল ইসলাম বর্তমানে একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটি-এর সাধারণ পরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তাঁর এই বইয়ে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করা, গ্রামের উন্নতিকল্পে গ্রামের মানুষদের সচেতনতা তৈরি করা, শিশুদের শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা, ক্ষুদ্র ঋণ ইত্যাদি কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
সৈয়দ নূরুল আলম ১৯৪৫ সালে ১লা জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উনয়ন সংস্থার সাথে কাজ করার পর ১৯৮৭ সালে তিনি স্যাপ-বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন এবং ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর জীবনকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি, তিনি মানবিক উন্নয়নের দলিলও বটে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সংস্থা থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন।
ফেসবুক পেজ :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা