সারা দেশে ওয়াজের নামে সরকারের নারী নীতির বিরুদ্ধে প্রচারণা চলছে। ‘নারীর ঘর থেকে বের হওয়া’, ‘নারীর চাকুরী-কাজ করা’, ‘নারী স্কুল-কলেজে লেখাপড়া’র বিরুদ্ধে কথা বলাই এসকল রাজনৈতিক ওয়াজের মূল বিষয়। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীকে সজাগ করুন। নারী বিদ্বেষী ওয়াজ বন্ধ করুন। প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদ্রাসা বোর্ড করে দিয়েছেন। ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন করে দিয়ে গেছেন। এসব জায়গায়, যে সিলেবাস পড়ানো হয় তার আলোকে ভাষণ দেয় কি তারা? নাকি নিজেদের মনগড়া ধর্মের ব্যাখ্যা দেয়? তা সরকার ও প্রশাসনকে তা মনিটর করতে হবে। এ সকল ওয়াজে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডিত সাঈদির মুক্তি দাবি করা হয় কি ভাবে? পুলিশ কি করে?
জাতীয় সংসদে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাব প্রদানকালে সংসদ সদস্য শিরীন আখতার একথা বলেন।
তিনি বলেন, নারীদের প্রতি সহিংসা-নির্যাতন-ধর্ষন বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কঠোর প্রয়োগ চাই। নির্যাতক-ধর্ষকদের বিরুদ্ধে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রতিরোধ প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে। নারীর পোশাককে ধর্ষণের মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করে কাঠমোল্লা-রাজনৈতিক মোল্লাদের মতই আমাদের অনেক নেতারও নারীদের পোশাক নিয়ে কথা বলা স্বভাবে পরিণত হয়েছে। বোরখা-হিজাবপড়া নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে কেন? বোরখা-হিজাবী নারী নিরাপদ না কেন? মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতের মত হিজাবী তরুনী, তনুর মত হিজাবী তরুনীর করুন মৃত্যু হলো কেন? সে কারণে এসকল ক্ষত্রেে আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। র্ধষণের সংজ্ঞা এবং র্ধষণকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইনের ফাঁক-ফোকরে বের হয়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য র্ধষণে আইনের পরিবর্তন পরিবর্ধন করা দরকার।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজ-স্কুল-মাদ্রাসার প্রশাসন-পরিবেশ নিয়ে আমাদের চুপ করে বসে থাকার আর সময় নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন-সমগ্র শিক্ষা প্রশাসন আজ তোষামদি, চাটুকারিতা, দুর্নীতিতে ডুবতে বসেছে। অসৎ, আত্মমর্যাদাহীন, বিবেকহীন ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রশাসন থেকে বিতরণ করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনে দুর্নীতিমুক্ত, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মানের নিম্মগামিতা রোধ করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমরা বেকারের সংখ্যা বাড়াতে চাই না। বেকারদের কাজ দিতে না পারলে বেকার ভাতা দেয়ার মত অর্থনৈতিক শক্তি আমাদের আছে। মধ্যম আয়রে দশেে বকোররা না খয়েে মারা যাবে সেটা মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, নারীর জন্য প্রধানমন্ত্রী অনেক বৈপ্লবিক কর্মসূচি, আইন, নীতি করেছেন। কিন্তু নারীবান্ধব এ সকল আইন-নীতি-কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের বিচার-আইন ব্যবস্থা-প্রশাসন এমনকি রাজনীতিকরাও বাঁধাই হয়ে আছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক মোল্লারা-ধর্ম ব্যবসায়ীরা-ফতোয়াবাজরাতো নারীর অগ্রগতির পথে কাঁটা বিছিয়েই চলছে। এসব রাজনৈতিক মোল্লা-ধর্ম ব্যবসায়ীদের-ফতোয়াবাজ বা ওয়াজের নামে নারী বিদ্বেষী আয়োজন করেই চলেছে। বড়বড় নেতারা নারী বিদ্বেষী এসকল ওয়াজের মঞ্চ আলো করে বসে থাকেন।
তিনি বলেন, উন্নয়নের অনুসঙ্গ হিসাবেই দেশে দুর্নীতি-লুটপাটের দৌরাত্ম দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দিনরাত খেটে যখন দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তখন একদল ইঁদুর, উইপোকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ-জনগণের সম্পদ লুটে ব্যস্ত। এদের সাথে হাত মিলিয়েছে কিছু দুর্নীতিবাজ অফিসার। কিছু অসৎ রাজনীতিক ও অন্যান্যরা। আমাদের স্বস্তির বিষয় যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে তা এসেছে। এই লুটেরা-দুর্নীতিবাজরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষা ‘মুই কি হনুরে’ হয়ে ধরাকে সরাজ্ঞান করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এদের শায়েস্তা করার কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানের প্রতি আমার দল জাসদ ও আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের পক্ষ থেকে অকুন্ঠ সমর্থণ জ্ঞাপন করছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাবো শুদ্ধি অভিযান জোরদার অব্যাহত রাখুন-আরও জোরদার করুন জেলা-উপজেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিন। যারা কালোটাকার মালিক-লুটেরা-দুর্নীতিবাজ তারা যেন টাকার গরম দেখাতে না পারে। অবৈধ অর্থ-সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার করতে না পারে। নিজেদের আইনের উর্ধে নিতে না পারে। গরীব ও সাধারণ মানুষের হক চুরি করে খেতে না পারে। তাই এই দুর্নীতিবাজ-রুটেরা-কালো টাকার মালিকদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর হোন। দেশে আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করুন। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সুশাসন নিশ্চিত করাই হোক আমাদের প্রধান জাতীয় কর্তব্য।
তিনি নিজের আসনের অব্যাহত উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল ও মহাজোটের রাজনৈকি ও নির্বাচনী জোটের শরিক হিসাবে ফেনী-১ আসন থেকে এই মহান সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি। এই ফেনী-১ আসনেই বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সাল থেকে টানা ২০ বছরর বেশি সংসদ সদস্য ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসনের মানুষের প্রতি কতটা উদাসীন ছিলেন, ফেনী-১ আসনের মানুষকে কতটা অবহেলা করেছেন তা অকল্পনীয়। প্রদীপের নিচে কত অন্ধকার ছিল, কত উদাসিনতা ছিল, কত অবহেলা ছিল! বেগম জিয়ার কাছে দেশ, এলাকা, মানুষ, জনগণের কোনো আহাজারি, কান্না, দুঃখ, কষ্টের কোনই মূল্য ছিল না। ২০১৪ সালে আমি ছাগলনাইয়া-পরশুরাম-ফুলগাজী আসনের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা শুরু করার পর প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য বিশেষ সমর্থনে, প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়, মন্ত্রীসভার মন্ত্রীদের সমর্থনে ছাগলনাইয়া-পরশুরাম-ফুলগাজী তে স্কুল-কলজে-মাদ্রাসা, ব্রীজ, কালভাট, সাইক্লোন সন্টোর, বাজার সম্প্রসারণ, কমউিনটিি ক্লনিকি, হাসপাতাল, মসজদি-মন্দরি এসবরে উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান করেছি। শুধু আমার নির্বাচনী এলাকাই আগায়নি। পুরো ফেনী জেলা এগিয়েছে বিস্ময়করভাবে। ফেনী আজ উন্নত আলোক ঝলমল এক উন্নত জনপদ। ফেনীর গ্রামগুলো শহর হয়েছে। ফেনী আজ সোনাগাজীর দকিে তাঁকালে বুঝা যায় বাংলাদেশের ‘শিল্প রাজধানী’, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাপিটাল’ হতে চলেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে যে বিস্ময়কার উন্নতি হচ্ছে তা ধরে রাখা, উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নেয়া, উন্নয়নের সুফল সুষম বন্টন, বৈষম্যের অবসান করা, সকল মানুষের ঘরে উন্নয়নের সুফল আরও ভালভাবে পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের রাষ্ট্র-শাসন-প্রশাসন ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক নীতি ও পরিকল্পনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে।
বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করতে পারছি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিস্ময়কর উন্নয়নের ধারায় আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার পরও আমরা খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের বাজার এখনও স্থিতিশীল রাখতে পারছি না। বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করতে পারছি না। নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা, স্থিতিশীল রাখা আমাদের চ্যালেঞ্জ। কৃষি মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য ব্যবসায়ী, খাদ্য আমদানীকারক, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নিবিড় সমন্বয় দরকার। দেশে উৎপাদিত খাদ্য-বাজার চাহিদা-আমদানী নিয়ে দূরদর্শী পরিকল্পনা থাকতেই হবে। খাদ্য চাহিদা, খাদ্য নিরাপত্তা, বাজার প্রশ্নে সমন্বয়হীনতা, গাফিলতি আর বরদাশত করার সময় নেই।
আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসাবে সমাজতন্ত্র আছে। সমাজতন্ত্র পরিকল্পিত অর্থনীতির কথা বলে। আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতির দানবের হাতে, দেশের মানুষের ভাগ্য ছেড়ে দিতে পারি না। তাই আমাদের সমাজতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। কিন্তু আমি লক্ষ্য করি, আমাদের কিছু মন্ত্রী-এমপি-রাজনীতিক-সচিবরা সহ অনেকেই সমাজতন্ত্র কথাটা বলতেও লজ্জা পান। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলবেন কিন্তু সমাজতন্ত্রকে অস্বীকার করবেন তা হবে না। সংবিধান মানবেন আর রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির একটি সমাজতন্ত্র সেটি উচ্চারণ করতে অবজ্ঞা-অবহেলা করবেন সেটা হতে পারে না। আমি বিস্মৃত হই অনেক গুরুত্বর্পূণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের ছাত্র- রাষ্ট্রীয় মূল চারনীতির সাথে মৌলিক চাহিদা গুলোকে গুলিয়ে ফেলে। তাই রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির বিষয়-গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ এইগুলো সর্ম্পকে যত্নবান হতে হবে। মূলনীতির উৎস্থল যদি হারিয়ে ফেলি আদর্শ লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যায়।
মুজিববর্ষের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শতাব্দির শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী আমাদের জীবনে, বাঙালিদের জীবনে জাতীয় পুনর্জাগরণের ডাক, আহ্বান নিয়ে এসেছে। আমি বলবো, মুজিব বাঙালির সোনার খনি। এই সোনার খনির মধ্যেই বাঙালির সকল মূল্যবান সোনাদানা-মনিমুক্তা-হীরা-জহরৎ জমা আছে। মুজিববর্ষে মুজিব নামের সোনার খনিটা খুড়ে আমাদের মুজিব দর্শন-মুজিব আদর্শ-মুজিব ভাবনা বের করে আনতে হবে। আমাদের যে কালিমাগ্রাস করেছে তা মুজিব আদর্শ দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করতে হবে। মুজিবের সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই এবং এই সোনার মানুষ তখনি আমরা পাবো যখন লক্ষ লক্ষ মুজিবের প্রতিচ্ছবি আমাদের শহরে-গ্রামে ছড়িয়ে পরবে, অন্যান্য উচ্চতার বাংলাদেশ গড়তে কারিগর হিসেবে কাজ করব।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা