বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং অবিভক্ত ঢাকার শেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকা কে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে সর্বস্তরের মানুষ।বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি অনেকে ব্যক্তিগতভাবে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এসময় সাবেক তথ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সায়ীদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি গিয়েছিলেন, সেই লড়াই চালু রেখেছেন তিনি। মানুষের প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন তিনি, মানুষও তাকে সেই সম্মান এখন দিচ্ছে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দুটি কারণে ঢাকাবাসী তাকে দীর্ঘদিন মনে রাখবেন। একটি হলো, তার সময়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ আক্রমণ থাকলেও তিনি অল্প সময়ে ও অল্প খরচে সেটা দূর মোকাবেলা করতে পেরেছেন। আরেকটি হলো- ঢাকার বিভিন্ন সড়ক তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নামে করে দিয়েছেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের উদ্দেশ্যে বুক পেতে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, গুলি কর, আমার এখানে গুলি কর। তার জোরালো কণ্ঠের ফলে পুলিশ তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর পুরান ঢাকায় হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দির রক্ষায়ও তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গাজী মাজহারুল আনোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, । সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন রাজনীতিকের যে ভূমিকা থাকা দরকার, আমরা তার মধ্যে সেটা দেখেছি।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর খোকার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বাবার জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেন, আমার বাবা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। আজকে আমরা ভুক্তভোগী। গত পাঁচ বছরে আমি বাবার সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। তার থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে পেরেছি।
তিনি বলেন, তিনি সব সময় আমাদের বলতেন, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল একটি গণতন্ত্র রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আজকে আমরা যেটা দেখছি একটি হানাহানির রাজনীতি চলছে দেশে। এই রাজনীতির জন্য আমার বাবারা দেশকে স্বাধীন করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ইশরাক বলেন, ”আপনি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের যে বাধাগুলো রয়েছে সেগুলো এবং প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দূর করেন।
তিনি সবাই তার বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসায় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি যেটা দেখলাম, দল-মত-নির্বিশেষে এখানে সবাই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন। যেটি আসলে একটি অনুকরণীয় বিষয়।
সারাদিনে সাদেক হোসেন খোকার দুটি জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে সংসদ ভবনে সাবেক এই সংসদ সদস্যের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে।এরপর তাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয়। এরপর তাকে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেয়া হলে তৃতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাদেক হোসেন খোকা বাংলাদেশ সময় সোমবার ( ৪ নভেম্বর) দুপুর একটায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
আরও পড়ুন : সাংসদ মঈন উদ্দীন খান বাদল আর নেই
তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হয়ে পড়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি ছিল । কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ছেলে ইশরাক হোসেন। এরইমধ্যে তিনি চলে গেলেন।
২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। ২৯ নভেম্বর ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা ১০ বছর বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনামলে ঢাকা মহানগরের মেয়র ছিলেন তিনি।
পুরান ঢাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে দুই প্রধান দলের দুই প্রভাবশালী নেতা ছিলেন হানিফ ও খোকা। হানিফ ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি; খোকা ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি।
খোকা ১৯৯১ সালে সূত্রাপুর-কোতোয়ালি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার ১৯৯১ সালের সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন তিনি।
২০১৪ সাল থেকে চিকিৎসার জন্য স্বপরিবারে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন সাদেক হোসেন খোকা। ২০১৭ সালে সাদেক হোসেন খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত আরার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়।
ভিজিট করুন :
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা