অনলাইন ডেস্ক
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। ফলে যে কোনো দেশই এতে অংশ নিতে পারে।
তবে একই বিভাগের দুজন কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন একটি কোম্পানি প্রায় ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাবের পর ভূ-রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে বঙ্গোপসাগর। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের নামে কার্যত বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে একক প্রভাব প্রতিষ্ঠাতা করতে চায়। এ অবস্থায় বিনিয়োগ প্রস্তাবসহ চীনের কোম্পানি বঙ্গোপসাগরে আগ্রহী হলে, তাতে অনুসন্ধান কার্যক্রম ও ভূ-রাজনীতিতে ভারসাম্য আসবে।
এদিকে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে গত বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীন ও বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের এই বৈঠককে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দীর্ঘ চার বছর পর তাদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হলো।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে তেল-গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত অনুসন্ধানে আগামী মাসে চীন বাংলাদেশকে আগ্রহপত্র পাঠাবে। এতে খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ছাড়াও সাগরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টিও থাকবে। আগ্রহপত্র পাঠানোর পর চীনা দূতাবাস থেকে বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে বিস্তারিত পরিকল্পনার একটি উপস্থাপনা (প্রেজেন্টশন) পেট্রোবাংলার কাছে পেশ করা হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ প্রক্রিয়াটি অবশ্যই দরপত্রের মাধ্যমে হওয়া উচিত। কোনো একক প্রস্তাব থাকলে, কোনো বিকল্প না থাকলে, প্রস্তাব খারাপ হলেও তখন ছাড় দিতে হয়। একাধিক প্রস্তাব থাকলে ভালো। তখন প্রতিযোগিতামূলক হয়।’
২০০৯ সালে ভারত আর ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণের পর গভীর সমুদ্রে এখনো খনিজ অনুসন্ধান শুরু করা যায়নি। বর্তমানে স্থলভাগের কাছাকাছি অগভীর সমুদ্রে মাত্র একটি ব্লকে ভারতীয় কোম্পানি ওএনজিসি জরিপ এবং অনুসন্ধানের কাজ করছে। এরই মধ্যে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করেছে। কিন্তু সেখানে কিছু পাওয়া যায়নি। আরও দুটি কূপ খনন করার কথা আছে। কবে নাগাদ সেটি করা হবে—তা এখনো অনিশ্চিত। একাধিক কোম্পানি বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের আগ্রহ দেখালেও, উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) আকর্ষণীয় না হওয়ার কারণে পিছিয়ে গেছে।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের অংশকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগভীর সমুদ্রে ১১টি এবং গভীর সমুদ্রে ১৫টি ব্লক রয়েছে। পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ২০১১ সালের ১৬ জুন সমুদ্রের ১০ ও ১১নং ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য পেট্রোবাংলার পিএসসি করে। মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস ব্লক দুটিতে দ্বিমাত্রিক জরিপ শেষে ২০১৪ সালে জানায় গ্যাসের দাম বাড়ানো না হলে তারা কাজ করবে না। শেষ পর্যন্ত তারা কাজ না করেই চলে যায়।
সর্বশেষ ২০২০ সালে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছিল বলে জানান পেট্রোবাংলার ওই কর্মকর্তা। সভায় কনকো ফিলিপস, ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম, এক্সজোনমোবিল ইন্টারন্যাশনালের মতো কোম্পানি অংশ নিয়েছিল। সে সময়ও তাদের কাছে যে পিএসসি উপস্থাপন করা হয়েছিল সেটি পিএসসি-২০১৯-এর সংশোধন করা। এ বিষয়ে সেই সময় কোম্পানিগুলো এই পিএসসি সংশোধন করে আরও আকর্ষণীয় করার পরামর্শ দিয়েছিল।
এসব বিবেচনায় সরকার এরই মধ্যে পিএসসি সংশোধন করেছে। গত ২৬ জুলাই অর্থনৈতিকবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি সংশোধিত পিএসসি অনুমোদন দেয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী এটি অনুমোদন করেন।
সংশোধিত পিএসসিতে গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়নি। বরং ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের (অপরিশোধিত জ্বালানি তেল) দামের ১০ শতাংশ গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম হ্রাস-বৃদ্ধির আনুপাতিক হারের সঙ্গে গ্যাসের দাম বাড়বে-কমবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারের অপরিশোধিত তেলের দাম ১০০ মার্কিন ডলার হলে গভীর সমুদ্রের গ্যাসের দাম হবে ১০ ডলার, যা আগে (পিএসসি-২০১৯) গভীর সমুদ্রের জন্য ছিল (প্রতি হাজার ঘনফুট) সোয়া ৭ ডলার। আর অগভীর সমুদ্রের জন্য ছিল সাড়ে ৫ ডলার।
এ ছাড়া সংশোধিত পিএসসিতে কন্ট্রাক্টর হিসেবে আসা বহুজাতিক কোম্পানি ও পেট্রোবাংলার মধ্যকার মুনাফা ভাগাভাগিতেই পরিবর্তন করা হয়েছে। আগের পিএসসি অনুযায়ী বিনিয়োগ ও পরিচালন খরচ তুলে নেওয়ার পর মুনাফা ভাগাভাগি করত দুই সংস্থা। এতে গ্যাস উৎপাদনের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে ৫৫ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফা পেত পেট্রোবাংলা। উৎপাদন বাড়লে পেট্রোবাংলার মুনাফার হার বাড়ত। এ ক্ষেত্রে সংশোধন করে গ্যাসক্ষেত্র থেকে আয় করা মোট রাজস্বের ওপর ভাগাভাগি করা হয়েছে। এতে ৩৫ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্বের ভাগ পাবে পেট্রোবাংলা। শুরুতে ঠিকাদার কোম্পানির বিনিয়োগের খরচ তোলার সময় পেট্রোবাংলার আয়ের ভাগ কম থাকবে। ধীরে ধীরে খরচ কমে আসবে আর পেট্রোবাংলার আয় বাড়বে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা