বক্তব্য রাখছেন বানাসাস সভাপতি নাসিমা সোমা
বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও পাক্ষিক অনন্যা’র সাবেক নির্বাহী সম্পাদক দিল মনোয়ারা মনু জীবনের শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত লিখে গেছেন সুবিধা-বঞ্চিত মানুষের কথা।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি (বানাসাস)’র উদ্যোগে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে দিল মনোয়ারা মনুর স্মরণে শোক সভা ও দোয়া মাহফিলে একথা বলেন সংগঠনের সভাপতি নাসিমা সোমা।
বানাসাস সভাপতি নাসিমা সোমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী, অর্থ সম্পাদক ইশরাত ফারহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মারিয়া সালাম, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক লাবিন রহমান, নির্বাহী সদস্য ফাতিমা মুন্নি, সেভ দ্যা রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র’র সদস্য এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তাসকিনা ইয়াসমিন, সদস্য হালিমা খাতুন প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন সহ সভাপতি কারনিনা খন্দকার, সদস্য ফ্লোরা নাজনীন, রারজানা সুলতানা, শাহীন আরা ইয়াসমীন, সানিয়া সুলতানা প্রমুখ।
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক সমিতি (বানাসাস) সভাপতি নাসিমা সোমা তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ সাংবাদিকতার জীবনে বরাবরই নীরবে-নিভৃতে কাজ করতে ভীষণরকম ভালবাসতেন দিল মনোয়ারা মনু। জীবনের শেষ দিনটিতেও তেমনটি ছিলেন। কলম হাতে সজাগ ছিলেন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। লিখেছেন নারীর পক্ষে, মানুষ আর মানবতার পক্ষে। বঞ্চনা আর বৈষম্যের বিপক্ষে। বরাবরই তার কলম উচ্চকিত থেকেছে এদেশের নিপীড়িত-বঞ্চিত নারীর পক্ষে। সুন্দর সমাজ নির্মাণের পক্ষে।
সাধারণ সম্পাদক আনজুমান আরা শিল্পী বলেন, দিল মনোয়ারা মনু সর্বজন প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। মনু আপাকে ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি ছিলেন এক প্রতিবাদী কণ্ঠ। মনু আপা লাঠিতে ভর করেও প্রতিটি প্রতিবাদ, আন্দোলনে যোগ দিতেন। তার অভাব হয়তো পূরণ হওয়ার নয়। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নারীর অধিকার সুরক্ষায় কাজ করেছেন নিবেদিত হয়ে। বেগম সুফিয়া কামাল, নুরজাহান বেগম, ড. নীলিমা ইব্রাহীমের আদর্শ সবসময় নিজের মধ্যে ধরে রেখেছেন। তাদের স্নেহধন্য হওয়ায় নিজের জীবনের প্রতিটি স্তরে তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে সেই সুবাসকেই তিনি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন জাগতিক সব চাওয়া-পাওয়া ভুলে।
দিল মনোয়ারা মনু ১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাবা আলী আহমেদ খান ও মা জাকেরা আলীর ঘরে ফরিদপুরের ভাঙায় জন্মগ্রহণ করেন। ইডেন কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। স্কুল জীবন থেকেই দিল মনোয়ারা মনুর লেখালেখি শুরু। দৈনিক বাংলার বাণী প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে সেখানে নিয়মিত ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। লেখালেখির এ সূত্র ধরে ১৯৭৪ সালে ‘বেগম’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগম ও কবি সুফিয়া কামালের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে তিনি যোগ দেন ‘পাক্ষিক অনন্যা’য়। ২৫ বছর সেখানে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ প্রিন্ট মিডিয়ায় তিনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে লেখালেখি করেছেন।
দিল মনোয়ারা মনু নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির গণমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলাসহ বেশকিছু সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নারী আন্দোলনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ-আন্দোলনে তার সরব উপস্থিতি ছিল। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও তিনি নারী ও মানবাধিকার ইস্যুর আন্দোলনে শামিল হতেন।
সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় দিল মনোয়ারা মনু বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, ফেডারেশন অব ইউমেন, ইনার হুইল ক্লাব, পাক্ষিক অনন্যা, নন্দীনি সাহিত্য সংসদ, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা প্রভৃতি সংগঠন থেকে বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত হয়েছেন।
গত ১৩ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২ টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তাকে ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।
অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন তাকে আজীবন সম্মাননা দিয়ে এক বিরল সম্মান জানান। নিজ প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন মেধা, শ্রম ও একনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করার জন্য কাউকে সম্মানিত করার এমন ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ইতিহাসে প্রায় বিরল।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা