“আমাদের সবার মনে এই একটাই ভাবনা ঘুরছে, কালকে আমারও রোগ দেখা দিতে পারে। সবাই ভাবছে আমরা কবে নিরাপদ হবো – কবে বাড়ি যেতে পারবো।”
নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে আটকে আছে ডায়মন্ড প্রিন্সেস নামে একটি বিশাল প্রমোদতরী। এই জাহাজে ২০০ জনেরও বেশি লোকের করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এখনো আরো কিছু নতুন সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়েছে।
এই ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজটিতে শেফের কাজ করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুরের বিনয় সরকার। জাহাজ থেকেই তিনি বর্ণনা করেছেন ভাইরাস আক্রান্ত জাহাজে আটকে থাকা অবস্থায় কীভাবে কাটছে তাদের দিন।
“তিন হাজার ৭শ আরোহী নিয়ে আমাদের জাহাজটি এখন এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে। অনেক কড়াকড়ি করা হচ্ছে।”
“যারা খাবার পৌঁছে দেবার কাজ করছেন তারা মুখোশ, গ্লাভস, প্লাস্টিকের এ্যাপ্রন ইত্যাদি পরে এ কাজ করছেন। জাহাজে ক্রু আছেন ১ হাজার ৪৫ জন।”
“জাহাজের বাইরে ৫০টি এ্যামবুলেন্স রেডি আছে। ডাক্তারদের দল, উদ্ধারকারী দল তাদের ভালো হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।”
“মোট ৫৬টি দেশের ২ হাজার ৬শ’রও বেশি যাত্রী আছেন এ জাহাজে। সব যাত্রীকেই এখন আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাদের কেবিনে তিন বেলা খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।”
“মানসিকভাবে তাদের ভালো রাখার জন্য অনেক কিছুই করা হচ্ছে। এই যাত্রীরা পুরো ভ্রমণের জন্য যত টাকা খরচ করেছেন সব ফেরত দেয়া হবে।”
“ওয়াইনের মতো পানীয় ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। যে ওয়াইন এক বোতল কিনতে ভারতীয় মুদ্রায় ৮-১০ হাজার রুপি খরচ হতো – সেই ওয়াইন তাদের ঘরে ঘরে দেয়া হচ্ছে।”
“বেশির ভাগ যাত্রীই শান্ত আছেন। তারা অপেক্ষা করছেন ১৯শে ফেব্রুয়ারির জন্য যেদিন কোয়ারেন্টিনের ১৪ দিন পুরো হবে। তার পর সবাই বাড়ি যাবেন, এই অপেক্ষায় আছেন তারা।”
“কিন্তু এর পরও যদি মেয়াদ আরো বাড়ানো হয় তাহলে সত্যি বলছি এই জাহাজে এক বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হবে।”
“সবাই পাগল হয়ে যাবে। কী হবে এটা ভবিষ্যৎই বলতে পারে।”
“অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বা ইসরায়েলের মতো দেশের কিছু যাত্রী অসন্তুষ্ট হয়ে আছেন। তারা জাহাজ থেকে সোশাল মিডিয়াতে ক্রমাগত লিখছেন, ‘আমরা এখানে আটকা পড়ে আছি, উই নিড টু গো।”
“জাপানের ডাক্তার এবং সেনাবাহিনীর প্রায় ৫০ জন এখন জাহাজে অবস্থান করছে। ইতিমধ্যে ৬শ যাত্রীকে পরীক্ষা করেছেন তারা।”
“ডাক্তাররা যাত্রীদের বলে দিয়েছেন কারো শরীরে এই করোনাভাইরাস ঢুকে থাকলে ১৪ দিনের মধ্যে তার লক্ষণ দেখা যাবে। কারো যদি জ্বর-শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায় তাহলেই তাদের পরীক্ষা করা হবে।”
“যাদের ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে তারা খুবই ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন। আমি শুনেছি আমাদের জাহাজের তিন জন ক্রু করোনাভাইরাস পজিটিভ ছিল, তাদের বয়স কম ছিল। চিকিৎসার পর তারা এখন নেগেটিভ হয়েছে অর্থাৎ ভালো হয়ে গেছে।”
“তবে এটাও শুনেছি যে দুই থেকে তিন জন প্যাসেঞ্জার ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছে, হয়তো তারা মারাও যেতে পারে দু-একদিনের মধ্যে। কারণ তাদের বয়স ৭০এর ওপরে।”
“আসলে কেউই ভালো নেই। যতই সুবিধা দেয়া হোক, আপনি চিন্তা করুন, এ অবস্থায় আপনার মনে হবে কালকে আমারও রোগ হতে পারে।”
“ক্রু থেকে শুরু করে প্যাসেঞ্জার পর্যন্ত সবাই মানসিক চাপের মধ্যে আছেন।” “আমাদের সবার মনেই এই একটাই ভাবনা ঘুরছে আমরা কবে নিরাপদ হবো কবে বাড়ি যেতে পারবো।”
জাপান বলেছে ইয়োকোহামা বন্দরে ডায়মণ্ড প্রিন্সেস নামে যে প্রমোদতরীটি আটকে রাখা হয়েছে সেখানে আশির ওপর যাদের বয়স, তারা সংক্রমিত নয় সেটা নিশ্চিত করা গেলে তাদের জাহাজ থেকে নামার অনুমতি দেওয়া হবে।
চীনের বাইরে একক কোন জায়গায় সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে এই জাহাজেই।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেছেন, আশি-উর্ধ্ব যাত্রীদের স্থলে কোয়ারেন্টিন অবস্থায় থাকার অনুমতি দেয়া হতে পারে। বিবিসি।
Like & Share our Facebook Page: Facebook
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা