অনলাইন ডেস্ক
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে পারে ৫, ৮ কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি। এই তিনটি তারিখকে চূড়ান্ত করে ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই তারিখগুলোর যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে কমিশন সভায় আলোচনা করা হবে। কমিশন চাইলে ১০ ও ১১ ফেব্রুয়ারিকেও বেছে নিতে পারে। তবে ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা ৫, ৮ ও ১২ ফেব্রুয়ারিকে উপযুক্ত মনে করে কমিশন সভায় উপস্থাপন করবেন।
তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময়
গত ১২টি নির্বাচনের তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সর্বনিম্ন ৩৭ দিন থেকে সর্বোচ্চ ৬৮ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই যদি এবারের ভোটগ্রহণ ৫ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হয়, তাহলে তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ হতে পারে ৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বরে মধ্যে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জানিয়েছে, নভেম্বরের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ অন্যান্য প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব হবে। তাই ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল দেওয়া হতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাবিত তারিখ
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা ভোটের সম্ভাব্য পাঁচটি তারিখের বিষয়ে কমিশনকে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন। এই পাঁচটি তারিখ হলো ৫, ৮, ১০, ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি।
এই তারিখগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের ১২টি সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিনকে কিছুটা আমলে নেওয়া হয়েছে। বিগত ১২টি নির্বাচনের মধ্যে ৪টি হয়েছে রোববার, ৪টি বুধবার, ২টি সোমবার ও ২টি বৃহস্পতিবারে। শুক্র, শনি ও সোমবারে কোনো ভোট হয়নি। আগামী বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি রোববার, ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি বুধবার এবং ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার। এই তারিখগুলোর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবারকে ভোটগ্রহণের জন্য আপাতত সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে ইসিতে।
রোজার আগে ১০ দিন হাতে রাখতে চায় ইসি
এক প্রশ্নে ইসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের পর রোজার আগে অন্তত ১০ দিন সময় হাতে রাখতে চায় নির্বাচন কমিশন। কারণ, ভোটের দিন অনিয়ম, মারামারি বা হানাহানির কারণে যেসব কেন্দ্রে বা আসনে ভোট বন্ধ অথবা স্থগিত করা হবে, সেসব কেন্দ্র বা আসনে এক সপ্তাহের মধ্যে ভোট শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। সেটা যেন রমজানে গিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে চায় কমিশন। এ ছাড়া নির্বাচনের গেজেট প্রকাশের পর যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পাবে তাদের সরকার গঠন করতেও সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে। সেটাও যেন রমজানের আগে সম্ভব হয় সে সুযোগও রাখতে চায় ইসি।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে আগামী বছর পবিত্র রমজান মাস শুরু হতে পারে ১৯ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচন কমিশন যদি ১০ দিন হাতে রাখতে চায় তাহলে ৮-৯ তারিখের মধ্যে ভোট নিতে হবে। এদিকে শবে বরাতের সম্ভাব্য তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি। সরকার অন্তত এর আগে নির্বাচন দেবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই শবে বরাতের পর থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের (১৫ তারিখ) মধ্যেই ভোট দিতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি ৫ তারিখ বৃহস্পতিবার শবে বরাতের বন্ধ পড়ে যায় তাহলে এর পরের সপ্তাহের যেকোনো দিন (৮-১২ ফেব্রুয়ারি) ভোট নিতে হবে।
যা বলছেন ইসি সচিব
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন রোজার আগে ভোট হবে। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হবে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যেই ভোট হবে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।
এদিকে, শনিবার রংপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোট হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কী বলেছেন, সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আগামীকাল রোববার সিইসির সাথে আলোচনা করলে হয়তো জানতে পারব। আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তবে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
পূর্বের ১২ সংসদ নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত চিত্র
দেশে এর আগে ১২টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, বিএনপি ৪ বার ও জাতীয় পার্টি ২ বার জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে; বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়। সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দ্বাদশ সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। তবে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ তাদের মেয়াদকাল পূরণ করেছে।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভোট
জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি (৮৭%) ভোট পড়েছিল। অন্যদিকে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে কম (২৬.৫%) ভোট পড়ে।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা