শামীম মাশরেকী
প্রকাশনায় মাসিক জনপ্রশাসন এর ২৩ বছর হলো। জন্ম থেকে পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক আমার মেজো ভাই মো. নঈম মাশরেকী। অন্যান্য পত্র-পত্রিকার যেভাবে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ডিক্লারেশন নেয়। ঠিক একই নিয়মকানুনে মাসিক জনপ্রশাসন এর ডিক্লারেশন ২৩ বছর হলো ঢাকা জেলা প্রশাসক থেকে নেয়া হয়েছে।
কিন্তু এই পত্রিকার ডিক্লারেশন পাওয়ার পূর্বে এর নামকরণ এবং সংশ্লিষ্ট দলিলি কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই ও সরেজমিনে তদন্তের নেপথ্যে রয়েছে হয়রানি আর অপ্রাসঙ্গিক জবাবদিহিতা। আর হয়রানি ও অপ্রাসঙ্গিক জবাবদিহিতার কাহিনী আজ বলতে গেলে প্রশাসন কতটুকু লজ্জা পাবে জানি না, তবে পাঠকসমাজ বিস্মিত হবেন একথা নিশ্চিত করে বলা যায়। সেই প্রশাসনের নোংরা আচরণগুলো না বলে কীভাবে আজ এপর্যায়ে মাসিক জনপ্রশাসন এসেছে, তাই বলার প্রয়োজন বোধ করি।
নব্বই দশকের শুরুর দিকে কথা। মেজো ভাই দৈনিকে সাংবাদিকতা করার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতেন। সেসময় তিনি কোমলমতি শিশু-কিশোরদের এবং দেশবরণ্য ব্যক্তিত্বদের জন্য একটি সংগঠন করার তাগিদ অনুভব করেন। ১৯৯২ সালে প্রায় পাঁচ শত শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মৃতি পরিষদ ব্যানারে শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে মো. নঈম মাশরেকী আয়োজন করেন চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতায় বিষয়বস্তু তিনি নির্ধারণ করে দেন আমাদের দেশমাতৃকা। ফলে খুদে চিত্রশিল্পীদের তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে জেগে ওঠে দেশাত্মবোধ। অঙ্কিত হয় আমাদের প্রিয় স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য, নদী, হাটবাজার ও জীবন-জীবিকার শাশ্বত জনপদের তথ্যচিত্র। সত্যিই এই খুদে শিল্পীদের শানিতপ্রতিভা দেখে আমরা শুধু বিস্মিত হইনি, খুঁজে পেয়েছিলাম একেকটি আগামীর জয়নুল। সেদিনের অনুষ্ঠানের মূল অতিথি ছিলেন তখনকার বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। তিনিও প্রশংসা ও অনুপ্রাণিত করেছিলেন আমাদেরকে। এধরনের শিশুদের প্রতিভা বিকাশে ব্যতিক্রম ও উৎফুল্লধর্মী অনুষ্ঠান আয়োজক কবি আবদুল হাই মাশরেকীর পুত্র মো. নঈম মাশরেকী তা জেনে প্রথম এগিয়ে এসেছিলেন চিত্রশিল্পী এ কে এম আবদুর রউফ (বাংলাদেশ সংবিধান হস্তলিপিকার), চিত্রশিল্পী আবদুর রাজ্জাক, চিত্রশিল্পী আবদুল বাসেত, চিত্রশিল্পী গোলাম কিবরিয়া, চিত্রশিল্পী প্রাণেশ কুমার মণ্ডল, চিত্রশিল্পী মতলুব আলী, চিত্রশিল্পী সৈয়দ লুৎফুল হক প্রমূখ। এই গুণী শিল্পীরা একদিন ঢাকার বিজয়নগরের একটি রেস্টুরেন্টে মিটিং ডেকে উপস্থিত সকলের সম্মতিতে মো. নঈম মাশরেকীকে পরিষদের চেয়ারম্যান করে একটি ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে দেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মৃতি পরিষদের কার্যক্রম দেখে মিসেস জাহানারা আবেদিন সন্তোষ প্রকাশ করে বিগত দিনের কিছু অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
সাংগঠনিক কার্যক্রমে এক পর্যায়ে মেজো ভাইয়ের পরিচয় হয় তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব (সিএসপি) হাসিনুর রহমানের সঙ্গে। সচিব হাসিনুর রহমান কবি আবদুল হাই মাশরেকীর পুত্র নঈম মাশরেকী তা জেনে কাছে টেনে নেন। এক পর্যায়ে সংগঠনের কর্মকা- শিল্পাচার্যের জীবন, আদর্শ ও চিত্রকলার তাৎপর্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা এবং ছোট ছেলে-মেয়েদের মেধাবিকাশের এই পরিষদ জেনে, তিনিও উৎসাহিত হলেন একাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে। সচিব হাসিনুর রহমানের সম্পৃক্ততার কথা শুনে পাট মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব (সিএসপি) জানিবুল হক এপরিষদে জড়িত হওয়ার মত প্রকাশ করেন।
পর্যায়ক্রমে এপরিষদের সামিয়ানার নিচে এলেন সাবেক মুখ্য সচিব (সিএসপি) ড. কামাল সিদ্দিকী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুর কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সচিব (সিএসপি) ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সচিব (সিএসপি) আকতার হোসেন, সচিব (সিএসপি) এ. এস. এম শওকত আলী, সচিব (সিএসপি) সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, সচিব (সিএসপি) মাহে আলম, সচিব (সিএসপি) আকমল হোসেন, সাবেক উপসচিব (ইপিসিএস) খন্দকার আবুল বাসার, বীজ প্রত্যয়ের সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ গিয়াস উদ্দিন মিলকী, সচিব (ইপিসিএস) হেলাল উদ্দিন, সচিব (ইপিসিএস) মো. আবুল কালাম আজাদ, সচিব (ইপিসিএস) মো. নূরুল আবেদিন, যুগ্মসচিব (ইপিসিএস) নাজমুল আলম, এম জেড রহমান, ব্যাংক বীমা শিল্প ডাইজেস্ট এর সম্পাদক গোলাম কাদের, জনতা ব্যাংকে এমডি আবু তাহের, ডিএমডি আগা কোহিনূর আলম, এডিএম রোকেয়া খাতুন, ব্যাংকার আশরাফ আলম কাজল।
এছাড়া তখনকার অনেক বিসিএস জুনিয়র কর্মকর্তাও একই সারিতে এসেছিলেন। এখন অনেকেই সচিব, সিনিয়র সচিব কিংবা চুক্তিভিত্তিতে আছেন এবং অবসরে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে বর্তমানে পিএসসির চেয়ারম্যান (বিসিএস) ড. মোহাম্মদ সাদিক, সাবেক সচিব (বিসিএস) কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী, সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) মো. আইয়ুবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) আবুল হোসেন মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) প্রণব চক্রবর্তী, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইউসুফ, ড. ইঞ্জিনিয়ার এন. এম কামরুল হাসান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেজিস্টার তাজনাহার নাজমুল প্রমূখ।
মেজো ভাই, সচিব (সিএসপি) হাসিনুর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে তিনি একটি বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতেন। তা হলো বিশ্বের সবকটি দেশের মাদার মিনিস্ট্রির নাম Ministry of Public Administration অর্থাৎ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেখানে শুধু আমাদের দেশে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (Ministry of Establish) এটা কী করে হয়? এর প্রতিদিনকার কর্মকাণ্ডের সাথে জনগণের যে সম্পৃক্ততা রয়েছে, নামে তা একটুও প্রকাশ পায় না।
মো. নঈম মাশরেকীর এবিষয়ে আক্ষেপের রেশ ধরেই সচিব হাসিনুর রহমান বহিঃবিশ্বের প্রশাসনের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতেন। চিত্রশিল্পী আবদুর রউফ দীর্ঘসময় ইংল্যান্ডে বসবাস ও চাকরির অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলতেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাজকর্ম তৃণমূল জনগণের দোরগোড়ায় এখনও পৌঁছেনি, এটা আমার বড় দুঃখ।
১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে মেজো ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন, একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করার। যা নামকরণ হবে জনপ্রশাসন। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, এধরনের পত্রিকা বাংলাদশে প্রথম ও ব্যতিক্রম হবে। পত্রিকা প্রকাশে পরিচিত কয়েকজন সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মৌখিক সম্মতি নিলেন মেজো ভাই। চিত্রশিল্পী আবদুর রউফ উৎসাহিত করলেন পত্রিকার ডিক্লারেশন নিতে। কিন্তু তিনি বললেন, এ বিষয়ে সাপ্তাহিক বের করা এর ব্যয়ভার কঠিন হয়ে পড়বে।
রেডিয়েন্স প্রিন্টিং থেকে পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত অটুট রেখে শুধুমাত্র সাপ্তাহিক পরিবর্তে মাসিকভাবে বের করার ফরমপূরণ করে মেজো ভাই ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেন। দুমাস অতিবাহিত হওয়ার পর জানা গেল একটি চিঠি নামের ছাড়পত্রের জন্য ডিএফপিতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করলে ডিএফপির কর্মচারিদের কত তালবাহানা, কত যে গড়িমসি, কত যে ইশারার প্রলাপ দেখেশুনে আরও ৩ মাস অন্ধকার গহ্বরে চলে গেল।
সেসময় চিত্রশিল্পী আবদুর রউফ ডিএফপির পরিচালক ছিলেন। এমন দুর্গতির কথা জেনে নি¤œ কর্মকর্তাকে নিয়মমাফিকভাবে ছাড়পত্র দিতে বললেন। যেহেতু এনামে কোনো পত্রিকা নেই, সেখানে জনপ্রশাসন নামে ছাড়পত্র দিতে কোনো বাধা নেই।
ছাড়পত্র দেয়ার পর ডিসি অফিস থেকে ফাইল চলে যায় এসবিতে। এসবি থেকে আবার ফাইল চলে যায় সিটিএসবিতে। তদন্ত কর্মকর্তা সকল প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র খুঁটিয়ে দেখে এবং মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে ওকে করলেও সিটিএসবির এসপি ফাইলটি বন্দী করে রাখেন। পরে এসপির সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিক, তাই প্রশাসনের ওপর পত্রিকা বের করা মানেই আমরা সরকারি কর্মকর্তারা হুমকির মুখে থাকবো। আমরা এসপিকে জানালাম, এই মাসিক জনপ্রশাসন এর সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে থাকছেন কয়েকজন সচিব পর্যায়ের ব্যক্তি। সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি হবে কেন? এরপরও তিনি মানতে না রাজ। বিষয়টি নেতিবাচক নেয়াতে এধরনের চিন্তা ওই কর্মকর্তার ভেতরে। সুন্দর সত্য কথাটি বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে শরণাপন্ন হলাম যুগ্ম সচিব জানিবুল হকের কাছে (সাবেক আইজিপি রকিবুল খন্দকারের মেয়ের জামাই)।
মন্ত্রণালয়ে সাক্ষাতে যুগ্মসচিব জানিবুল হক প্রথম দর্শনেই বললেন, সিটিএসবির এসপি ফোন করে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছে। আমি বলে দিয়েছি এরা ভালো সাংবাদিক, এছাড়া একটি ব্যতিক্রম সৃষ্টিশীল কাজে হাত দিয়েছে, আমাদের সহযোগিতা করা দরকার। পরের দিন সিটিএসবিতে যাওয়ার পর কোনো প্রশ্নের মুখোমুখি হইনি। আমার সম্মুখে এসপি সাহেব ক্লিয়ারেন্স পত্রে স্বাক্ষর করে পাঠিয়ে দিলেন ডিসি অফিসে।
ডিসি অফিস থেকে আবার ফাইল চলে যায় এসবিতে। সেখানে ব্যাংক একাউন্টসহ কিছু প্রফেশনাল তথ্য তলিয়ে দেখেন তদন্ত কর্মকর্তা। আর এ দেখার মধ্যেই চলে যায় কয়েকমাস। সেখান থেকে ডিসি অফিসে ফাইল চলে আসলে এখানেও গড়িমসিতে চলে কয়েকমাস। অবশেষে মাসিক জনপ্রশাসন আলোর মুখ দেখলো ৩৭/৯৬ স্মারকে ১৯৯৬ সালের ১১ আগস্ট।
ডিক্লারেশন পত্র পাওয়ার আনন্দে দেশ ও জাতির কথা বলে স্লোগানে মাসিক জনপ্রশাসন রঙিন অবয়ব নিয়ে প্রকাশিত হলো বিসিএস একাডেমির ওপর একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন দিয়ে। তা হলো এর কোনো আইন আছে কিনা? তারই সঙ্গে ছিল সঙ্কটকালীন ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, গণতন্ত্রায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রস্তাবনা এবং তৎকালীন ঢাকা জেলা প্রশাসক মোবারক হোসেনের একটি সাক্ষাৎকার ইত্যাদি। এছাড়া পরবর্তী সময় সংখ্যাগুলোতে এলো দৃষ্টিনন্দিত প্রচ্ছদ প্রবন্ধ বাংলাদেশ: প্রশাসনের ২৫ বছর। প্রবন্ধটি লিখেছিলেন প্রশাসনের এক পণ্ডিত ব্যক্তিত্ব নাজমুল আলম (ইপিসিএস, যুগ্মসচিব)। আরো সংখ্যার প্রচ্ছদ কাহিনীতে এসেছে বিচারকের নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বাংলাদেশ সরকার ও পৌরসভা, ভবিষ্যতে আদৌ জনপ্রশাসনের সংস্কার হবে কি-না? অফিস : কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্ক, গ্রাম পরিষদ: সম্প্রসারিত আমলাতন্ত্র, দুর্নীতি দূরীকরণে প্রশাসকদের দিক নির্দেশনা, প্রশাসনের আরেক প্রথিতযশা প্রাবন্ধিক ও সাবেক সচিব (সিএসপি) ড. কামাল সিদ্দিকীর ডিসফোর্স বাংলাদেশে গ্রামীণ দারিদ্রের রাজনৈতিক অর্থনীতি বিষয়, নগর ভবনে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ, ঢাকা জেলা রেজিস্টার আবদুল করিম সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, ইত্যাদি।
১৯৯৯ সালের নভেম্বর সংখ্যায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ম্যাসেজ দিয়ে একটি প্রচ্ছদ রির্পোট ছাপানো হয়েছিল, তা হচ্ছেÑপ্রধানমন্ত্রী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেও কেউ কেউ ভুল তথ্য দিয়ে সত্য গোপন করেন। তবে সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের খানপুর হাসপালের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে কিছু ডাক্তারের প্রতি ঘৃণা জন্মে। প্রচ্ছদ কাহিনী করেছিলাম- দুর্নীতি মডেল নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতাল। এই হাসপাতালে প্রতিটি ডাক্তার তার পোস্টিং সাবজেক্টের বিপরীতে। যাকে বলে অ্যাগেইনস্ট দ্য পোস্ট। আর প্রশাসনকে উৎকোচ দিয়ে চিকিৎসার দুর্নীতির মডেল দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে রেখে ছিল সেখানকার ডাক্তার। আলোর নিচে অন্ধকার যখন নারায়ণগঞ্জবাসী জানতে পারলো, তখন বের হয়ে এসেছিল অর্থলোভী ডাক্তারদের নানান কর্মকাণ্ডের কাহিনী।
মাসিক জনপ্রশাসনএ একটি মজার পাতা থাকতো প্রতিটি সংখ্যায়, পাতাটির নাম ছিল প্রশাসনের সদরে অন্দরে। এখানে প্রাধান্য পেত প্রশাসনের ভেতর ভিন্ন ভিন্ন ঘটনা। সুচারুরূপে লিপিবদ্ধ হতো- উৎকোচ, উদাসীনতা, প্রমোশন বাগিয়ে নেয়া, ব্যয়-অপব্যয়, স্বজনপ্রীতি, বঞ্চিত কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ইত্যাদি কথা। আরো ছিল আইন জানা মেনে চলা। সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের আইন জ্ঞাত করার জন্য মূলত এপাতাটি নিয়মিত ছাপা হতো। তবে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা ও উন্নয়নের অগ্রদূত শেখ হাসিনা ওপর বেশ কয়েকটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। যা এখন তা একেকটি ডকুমেন্টারি।
মাসিক জনপ্রশাসনএ নিয়মিত লিখতেন এদের মধ্যে সাবেক মুখ্য সচিব (সিএসপি) ড. কামাল সিদ্দিকী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুর কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সচিব (সিএসপি) ও সাবেকসচিব (সিএসপি) এ জেড শামসুল আলম, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা, সচিব (সিএসপি) মাহে আলম, কৃষিবিদ গিয়াস উদ্দিন মিলকী, সচিব (ইপিসিএস) হেলাল উদ্দিন, সচিব (ইপিসিএস) মো. আবুল কালাম আজাদ, সচিব (ইপিসিএস) মো. নূরুল আবেদিন, যুগ্মসচিব (ইপিসিএস) নাজমুল আলম, সাবেক সচিব শফিকুল আলম মেহেদী (বিসিএস), ড. ইঞ্জিনিয়ার এন. এম কামরুল হাসান।
সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) মো. আইয়ুবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) আবুল হোসেন মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) প্রণব চক্রবর্তী, সাবেক উপসচিব (বিসিএস) ও রাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ আহসান উল করিম, ড. ইঞ্জিনিয়ার এন. এম কামরুল হাসান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেজিস্টার তাজনাহার মিলি, আমাদের সফলতার যাত্রায় মাসিক জনপ্রশাসনে আরো এলেন সচিব (বিসিএস) সুবীর কিশোর চৌধুরী, সচিব (বিসিএস) বেলায়েত হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) খন্দকার রাকিবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (বিসিএস) মো. রকিব হোসেন, এনডিসি, যুগ্ম প্রধান (বিসিএস) মো. জাকির হোসেন প্রমূখ।
বলার অপেক্ষা রাখে না একটি পত্রিকা সমাজ বদলে দিতে পারে। বদলে দেয়ার তারুণ্যের স্বপ্ন থেকেই মাসিক জনপ্রশাসন এর ডিক্লারেশন নেয়া। সেই থেকে নানান ঘাত-প্রতিঘাত, টানাপোড়েনে পত্রিকার বয়স বেড়ে আজ তেইশে পড়েছে। সবকিছু অনুকূলে না থাকলেও প্রতিকূলের উজান ঠেলে চলা তারুণ্যের স্বভাব। এই পথচলায় অসহযোগিতার কথা স্মৃতিঘরে জমা রেখেই যাঁরা সহযোগিতা করেছেন তাদের বেধে রেখেছি শ্রদ্ধার বাঁধনে। সংগ্রামে-সাফল্যে-অর্জনে মাসিক জনপ্রশাসন এর ২৩ বছরে ইনস্টিটিউটএ রূপ নিয়েছে।
এই ২৩ বছরে মাসিক জনপ্রশাসন শুধু লিপিবদ্ধ কাজে সফলতায় অতিক্রম করেনি। পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজেও ছিল বদ্ধপরিকর। মাঠর্পযায়ে অসহায় মানুষের পাশে মাসিক জনপ্রশাসন এর কর্মীবৃন্দ ছুটে গিয়েছেন। উদ্ধার করেছেন প্রশাসনের কালো মেঘাচ্ছন্ন গহ্বর থেকে সাধারণ মানুষকে। সবচেয়ে বড় কথা মাসিক জনপ্রশাসন এর জন্মলগ্ন থেকে একটি প্রস্তাব ও দাবি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান করে আসছিল সংস্থাপনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হিসেবে রূপ দেয়া। কাঙ্খিত প্রস্তাব ও দাবি বিগত সরকারে সময় কর্ণপাত না করলেও বর্তমান সরকারের সময় সংস্থাপনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় রূপ দিয়ে ৫৭ টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিয়ে তার কার্যকারিতা শুরু করে। ২৩ বছরের হিসাবে এটাও মাসিক জনপ্রশাসন এর বড় প্রাপ্তি।
২৩ বছরে মাসিক জনপ্রশাসন এর বড় সফলতা হচ্ছে তার পথকে সুনাম ও ইমেজের সাথে সামনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তার নিজস্ব গতিতে চলাতেই সে হারিয়ে যায়নি পাঠকসমাজের কাছ থেকে। হোক এ পাঠকসমাজ ছোট আকারের। কিন্তু এই পাঠকেরা রাষ্ট্রের মেধাবী চালিকা।
লেখক : সম্পাদক সাপ্তাহিক খোলাকথা
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা