অনলাইন ডেস্ক
প্রেসিডেন্টের বাসভবনে বিক্ষোভকারীদের হামলাচেষ্টার জেরে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত বাসভবনের কাছাকাছি এলাকায় জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর রাতেই কারফিউ জারির ঘোষণা দেয় পুলিশ। খবর: আল জাজিরা।পুলিশের মহাপরিদর্শক সিডি বিক্রমরত্নে এক বিবৃতিতে বলেছেন, কলম্বোর বেশিরভাগ জেলায় ‘পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত’ কারফিউ অব্যাহত থাকবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার চলছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। এর মধ্যে টানা ১৩ ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় লোকজন সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশটির প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছাকাছি এলাকায় জড়ো হন শত শত বিক্ষোভকারী। এসময় তাঁরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এরপর রাতেই কারফিউ জারির ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষুব্ধ লোকজনের ওপর গুলি চালায়। তবে, তারা লাইভ রাউন্ড বা রাবার বুলেট ব্যবহার করেছিলো কি না, তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি। এছাড়া প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিকারী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দলের কর্মীরা মশাল হাতে এই বিক্ষোভে অংশ নেন। এসময় তাঁরা রান্নার গ্যাস, কেরোসিনসহ অন্যান্য পণ্যের ঘাটতির নিন্দা জানান।
বিক্ষোভকারীরা কলম্বোর মিরিহানা আবাসিক কোয়ার্টারে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের বাড়ির দিকে যাওয়ার গলিতে দাঁড় করানো একটি সেনাবাহিনীর বাস এবং পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীরা পাশের একটি বাড়ির প্রাচীরও ভেঙে ফেলেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। এই ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
শ্রীলঙ্কার সরকারি সূত্রের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, হামলার সময় রাজাপাকসে বাড়িতে ছিলেন না। তবে, সামরিক কর্মকর্তারা দেশটির সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য রাজাপাকসের বাড়িতে বৈঠক করেছিলেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বিদেশি মুদ্রার অভাবে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। দাম পরিশোধ করতে না পারায় জীবন রক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে সিমেন্ট পর্যন্ত সব গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। লোকজনকে জ্বালানির জন্য দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে। কাগজের অভাবে স্কুলের পরীক্ষা ও দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংকটে এমনকি সড়কবাতিও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান বিভাগ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগের তুলনায় মার্চ মাসে খুচরো মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৮.৭ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৩০.২ শতাংশ ছুঁয়েছে। ফার্স্ট ক্যাপিটাল রিসার্চের গবেষণা প্রধান দিমান্থা ম্যাথিউ বলেন, গত কয়েক দশকের মধ্যে মূল্যস্ফীতির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে।