অনলাইন ডেস্ক
এ সময় প্রকৃতিজুড়ে শুরু হবে রঙ-বেরঙের খেলা। প্রান্তরজুড়ে সরিষার ক্ষেতে কাঁচা হলুদ রঙের মাতামাতি থাকবে। যেন প্রকৃতি কন্যা সেজে আছে ‘হলুদবরণে’! শীত নিয়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন- সকালের এক টুকরো রোদ্দুর/এক টুকরো সোনার চেয়েও মনে হয় দামি।/ঘর ছেড়ে আমরা এদিক ওদিকে যাই/এক টুকরো রোদ্দুরের তৃষ্ণায়।’
বাংলা সাহিত্যে পৌষের রোদমাখা মিষ্টি সকালের এমন লোভনীয় বর্ণনা সত্তে¡ও আধুনিকতার ধকল এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পরিবেশ আর প্রকৃতির রূপরেখার পটপরিবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হারিয়ে যাচ্ছে সময়ের ব্যস্ততায় শৈশবের গল্পমালার সেই সুখস্মৃতি। ক্রমেই যেন আমরা ভুলে যাচ্ছি মনের গহিনে সযতনে লালিত পৌষের রোদমাখা সেই দিনগুলোর কথা।
পৌষের প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত। মাঝে মধ্যেই হয় রূপের পালাবদল। সূর্যালোকের দেখা মেলে না। ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারপাশ। রাতে শিশির ঝরে বৃষ্টির মতো। প্রকৃতির এ রূপ বর্ণনা করেই জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন ‘শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;/নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/উড়ে গেল কুয়াশায়, -কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো।’ কিংবা কবি সুফিয়া কামালের- ‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে/আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।’
মূলত পৌষে কৃষকের ফসল ঘরে তোলার কাজ শেষ হয়ে যায়। হাতে তেমন কাজ থাকে না। সবাই উৎসব-আনন্দে মাতে। নতুন ধান থেকে পাওয়া চালে ঘরে ঘরে চলে পিঠাপুলির আয়োজন। পৌষের শেষদিনে ব্যাপক আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় পৌষসংক্রান্তি। শীতের পিঠার গোড়াপত্তন গ্রামে। এক সময় শীতের পিঠার জন্য শহর থেকে গ্রামে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল। গ্রাম-বাংলার সেই রসাল পিঠা-পায়েস আর পরিবারের সবাই মিলে সে পিঠা খাওয়ার উৎসব রীতি এখন অনেকটাই ম্লান। বাড়ির আঙিনায় মাটির চুলার ওপর মাটির হাঁড়িতে পিঠা বানানোর যে দৃশ্য, তা এখন কালেভদ্রে চোখে পড়ে। এছাড়া পৌষের এক অনন্য সংযোজন খেজুরের কাঁচা রস। কিন্তু নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের কারণে বাঙালির ভাগ্য থেকে উঠে গেছে খেজুরের রস। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা খেজুরের কাঁচা রস পান থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দিয়েছে।
গ্রামীণ পরিবেশে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে শীতকাল। দিন যায়, দিন আসে। বয়স বাড়ে, ম্লান হতে থাকে শৈশবের শত স্মৃতি। নগরবাসীরা এখন ইচ্ছা করলেও শীতে ঘাসের ডগায় ঝিলিক দেওয়া শিশির বিন্দু স্পর্শ করতে পারে না। দেখা হয় না দিগন্ত বিস্তৃত হলুদের গালিচায় সোনা রোদের লুকোচুরি। সময়ের ব্যস্ততা আর আধুনিকতার ধকলে ধীরে ধীরে বিলীনের তলানিতে মিশে যাচ্ছে শৈশবের এসব সুখস্মৃতি। তবুও মনের গহিনে সযতনে লালিত হয় পৌষের রোদমাখা সেই দিনগুলোর কথা।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা