যুবলীগ নেতা ও এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (জব্দ) করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সোমবার দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে এসংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চাহিদার ভিত্তিতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে রিমান্ডে থাকা খালেদ ও জি কে শামীম তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। খালেদ ঢাকায় ৬০টি ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে পুলিশের কাছে শীর্ষস্থানীয় সাত যুবলীগ নেতাসহ ২৫ জনের নাম বলেছেন, যার মধ্যে তিনি নিজেও রয়েছেন।
জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে ব্যাংকে তাঁর ৩০০ কোটি টাকার তথ্য। আর খালেদের আছে শতকোটি টাকার ওপরে। সূত্র জানায়, সেই সঙ্গে তাঁরা জানিয়েছেন, যুবলীগের শীর্ষপর্যায়ের কোন কোন নেতা তাঁদের কাছ থেকে কত টাকার ভাগ পেতেন। টাকার বিনিময়ে কয়েকজন মন্ত্রীও তাঁদের সহযোগিতা করেছেন বলে তাঁরা দাবি করেন। একজন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রীর নামও তাঁরা বলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং তাঁর স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী ও ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নামে কোনো হিসাব অতীতে বা বর্তমানে পরিচালিত হয়ে থাকলে সেই হিসাবের যাবতীয় তথ্য জরুরি ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বরের (আজ মঙ্গলবার) মধ্যে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি জি কে শামীম এবং গ্রেপ্তার ও বহিষ্কৃত হওয়া যুবদল নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (স্থগিত) করার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘চিঠিতে বলা হয়েছে, জি কে শামীম, তাঁর স্ত্রী ও মা-বাবার নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাব স্থগিত রাখতে হবে। খালেদের নামে থাকা সব ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করতে বলা হয়েছে। এসংক্রান্ত সব তথ্য পাঁচ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান জানান, ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর যাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ থেকে মামলা হয়েছে, তাঁদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করতে ব্যাংকগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর বেশি বলতে তিনি রাজি হননি।
এদিকে জি কে শামীমের ব্যাংক হিসাবে ৩০০ কোটি টাকা আছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত রবিবার সকালে শামীমের হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য বড় অঙ্কের কয়েকটি চেক ব্যাংকে জমা পড়ে। এরপর ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করে পরামর্শ চাওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক দুপুরের মধ্যেই নির্দেশনা জারি করে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার র্যাব সদস্যরা জি কে শামীমের অফিসে অভিযান চালিয়ে সাত দেহরক্ষীসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁর অফিস থেকে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্রসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও মদের বোতল জব্দ করা হয়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়।
আরো ১০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব
যুবলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এমপি, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ছাড়াও আরো ১০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাব তলবের তালিকায় থাকা ওই ১০ জন হলেন ফারজানা চৌধুরী, প্রশান্ত কুমার হালদার, আফসার উদ্দীন মাস্টার, আয়েশা আক্তার, শামীমা সুলতানা, শেখ মাহামুদ জোনাইদ, মো. জহুর আলম, এস এম আজমল হোসেন, ব্রজ গোপাল সরকার ও শরফুল আওয়াল।
২৫ জনের নাম বলেছেন খালেদ
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ ক্যাসিনোর নিয়ন্ত্রক হিসেবে যাঁদের কথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে প্রথমে এসেছে যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নাম। অন্যরা হলেন যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, সহসভাপতি সোহরাব হোসেন স্বপন, সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ, নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন এবং ইমরানসহ ২৫ জন।
খালেদকে জিজ্ঞাসাবাদকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁদের গ্রেপ্তার করতে এরই মধ্যে আমাদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে এঁদের মধ্যে কারো কারো বিষয়ে সরকারের ওপর মহল থেকে চাপ আছে। এ কারণে ঢাকায় তাঁদের দু-একজনের অবস্থান জানার পরও গ্রেপ্তার করতে দেরি হচ্ছে।’
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা