এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিশ্বময় আইসিটির বিকাশের ফলে আমাদের বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা, বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা কাজ অনেক সহজ হয়ে যাচ্ছে। লোকেশন ডাটা এর মধ্যে অতি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রাখে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে যখন সকল সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে সরকার বন্ধ ঘোষণা করলো, মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে দেশের পথে তাদের পরিবারের কাছে ফিরলো। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন এখানে বড় একটি ভুল হয়ে গেছে। গনপরিবহন বন্ধ না করে ছুটি দেয়া উচিত হয়নি। এর ফলে সংক্রমণ এর সম্ভাবনা অনেক গুন বেড়ে গেছে।
যেটা হয়ে গেছে সেটাতো আর ফেরানো যাবে না। আইইডিসিআর ও আশংকার কথা শিকার করে ঘোষণা দেয়, যারা ঢাকা থেকে বাড়ি গেছেন তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে ১৪ দিন। কিন্তু এখন মুশকিল হলো, কে কে ঢাকা থেকে দেশে গেছে তাদের খুঁজে বের করা। যেখানে এয়ারপোর্ট থেকে ছেড়ে দেয়ার পরে অধিকাংশ এনআরবি(নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশী) কে রাখা যায়নি হোম কোয়ারেন্টিনে, পাওয়া যায়নি হদিস। পুলিশ, আর্মি, প্রশাসনিক কর্মকরতারা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তাদের ধরতে, কাউকে কাউকে পেলেও পায়নি অধিকাংশকে। সেই তুলনায় ঢাকা থেকে কারা কারা গেছে এটাতো বের করা আরও অসম্ভব।
কিন্তু যখন এটা তথ্য ও যোগাযোগ প্রাযুক্তি, তখন এরই যেনো আছে সরল ও সহজ লভ্য সমাধান। তার ফলাফলও আমারা দেখেতে পেলাম। মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে বের করে ফেলা হলো ঠিক কতোগুলো মানুষ ঐ সময় ঢাকা ত্যাগ করেছিলো। সরকার চাইলে এখন এদেরকে রবোটিক ভয়েসে কল করে তার বার্তা পাঠাতে সক্ষম, তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে ইউএসএসডি কল থেকে তার তথ্য নিতে পারে। তার তথ্য স্থানীয় প্রশাসনকে জানাতে পারে। অবস্থা অনুযায়ী তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে পারে। আইটি না থাকলে এই নির্ভুল কমিউনিকেশনের কাজ গুলো করতে সরকারের কত সময় ও কতো টাকা লাগতো তা খুব সহজেই অনুমেয়। আর আইটি ব্যবহার ছাড়া এই ক্ষেত্রে নির্ভুল ডাটা পাওয়াতো প্রায় অসম্ভব অন্তত এই দুর্যোগের সময়। নির্ভুল বলার আরেকটি কারন হলো বেশ কিছুদিন আগে সরকার একটি ভালো কাজ করেছে, সকল মোবাইল নম্বরের সাথে এনআইডি ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক করে। তাই এই ডাটাকে মোটামুটি বিশুদ্ধ ডাটা বলা যায়।
লোকেশন ডাটা এই দুর্যোগে আরেকটি চমৎকার কিছু কাজ করতে সক্ষম। যা আমারা এখনো ব্যবহার না করলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করেছে। এই ডাটা থেকে আমারা জানতে পারি কোন এলাকা কেমন ঘনবসতি, আর কাদেরকে বেশী সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সেই অনুসারে আমরা বার্তা পাঠাতে পারি এবং পর্যবেক্ষণও করতে পারি আসলেই কারা সরকারের বাসায় অবস্থান করার নির্দেশ মানছে, আর কারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিটির কোনোই বিকল্প নাই।
আমাদের দেশে যেমন ডাটা আছে, তেমন আছে দেশে বিদেশে কাজ করা অভিজ্ঞ আইসিটি কোম্পানি। বেসিসের সদস্যই আছে ১৪০০ এর মতো। আমাদের অতি দ্রুত লোকেশন ডাটা নিয়ে গভীর ভাবে কাজ করে এনালাইটিকেল তথ্যর মাধ্যমে এই রোগের প্রাদুর্ভাবকে রুখতে হবে। যেমন করেছে ইসরাইল, ইউএসএ, ইউকে, তাইওয়ান ও অনান্যরা।
এর মধ্যে তাইওয়ান একটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে। তারা যাদের হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ দিয়েছে তারা ঘর থেকে বের হলে বা ফোন অফ করলে এলার্ট যাচ্ছে পুলিশে কাছে। অনেকে এই সার্ভিলেন্স পদ্ধতিতে প্রাইভেসি লঙ্ঘন এর সম্ভাবনার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর ফলে তাইওয়ান খুব ভালো ভাবেই এই দুর্যোগের মোকাবেলা করতে পারছে। এখন ভেবে দেখার বিষয়, কোটি কোটি মানুষের জীবন গুরুত্বপুর্ন না প্রাইভেসি। আর দুর্যোগ কালীন কোনো ব্যবস্থাই স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। সবার স্বার্থে, কোটি মানুষের জীবনের স্বার্থে মানুষের এতটুকু প্রাইভেসি ছাড় মেনে নেয়া উচিত বলেই অধিকাংশ মনে করেন।
ইতিমধ্যে এটুআই এর নেতৃত্বে বিগ ডাটা নিয়ে কিছু কাজ শুরু হয়েছে, আর দেরি না করে সরকারের উচিত আইটি ইন্ডাস্ট্রির প্রাতিনিধিদের যুক্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া এবং প্রমান করা আমারা আসলেই ডিজিটাল বাংলাদেশ। তথ্য প্রাযুক্তির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রামান করা আমারা প্রযুক্তি ব্যবহারে সবচেয়ে আধুনিক।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা