অনলাইন ডেস্ক
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে যে লকডাউন পরিস্থিতি চলছে, তাতে করে শুরু থেকেই বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। একমুঠো খাবারের সন্ধানে তাদের অনেকেই ভীড় করছেন শহরের সড়কগুলোতে।
লকডাউনের মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানোর পর এসব মানুষের খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চললেও সেটা পৌঁছাচ্ছে না সবার কাছে।
রামপুরার একটি বস্তি এলাকার বাসিন্দা মাহমুদা আক্তার বাসাবাড়ির কাজ হারিয়েছেন, পরিবহন শ্রমিক স্বামীও বেকার।
পেটে যখন খাবার জুটছে না তখন সন্তানের দুধের খরচ জোগাবে কে এমন প্রশ্ন মাহমুদার।
তিনি বলছিলেন, “আমরা তো কারো কাছে হাত পাততে পারি না। স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই এখন ঘরে বসা। কাজ নাই। আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। সরকার যদি সাহায্য না করে তাহলে বাঁচার কোন কায়দা নাই। আমরা খুবই কষ্টে আছি।”
তিনি বলছেন, এখন প্রতিদিন ডাল-ভাতই তাদের প্রধান খাবার। সেটাও দুইবেলা জোটে না।
“বাচ্চারা আর ডাইল-ভাত খাইতে চায় না। ছোট বাচ্চাটার দুধের টাকা নাই। এইজন্যে ডাবল করে পানি মিশায় খাওয়াইতেছি। আমি তো মা। এই দুঃখ কই রাখি!”এই বস্তিতেই আরো অনেকেই আছেন, যারা চক্ষুলজ্জায় হাত পাততে পারছেন না। সঞ্চয় ভেঙ্গে কয়েকদিন চালিয়ে নিলেও এখন সেটাও শেষ। অগত্যা উপায় একবেলা কিংবা দুই বেলা অভুক্ত থাকা। কিন্তু সেটাওবা কতদিন সেই দুঃশ্চিন্তাও আছে।
“এইভাবে আর কতদিন চলবো, কতদিন থাকবে, আগের মতোন কবে হবে সেইটাই এখন টেনশন। টিভিতে দেখাইতেছে সরকারিভাবে নাকি বাসায় বাসায় দিয়া যায় চাউল-ডাল, আমাদের এইখানে তো কিছুই দিয়া যায় নাই।”
মানিক মিয়া এভিনিউ’তে রিকশাচালক মোকসেদুল ইসলাম বলছিলেন, ঘরে খাবার না থাকায় পাঁচ দিন পর রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন তিনি।
“যেইখানে যাই সেইখানেই পুলিশের দৌড়ানি। ধানমন্ডি ২৭ রোডে গেছি, মাইরও খাইছি। পরে আইসা পড়লাম। কি করমু? পেটে ভাত নাই। রিকশা চালায়া তো ভাত খাই। সংসার চালাইতে হইবো না?”
এটুকু বলার পরই ফুপিয়ে কেঁদে উঠেন মোকসেদুল।
রাস্তার মোড়ে মোড়ে অভাবী মানুষের ভীড়
ঢাকা শহরে কিছুক্ষন ঘুরলেই মোড়ে মোড়ে কিংবা রাস্তার ধারে অসংখ্য মানুষকে দেখা যাচ্ছে, যারা মূলতঃ খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে এসেছেন পথে।
লাজ-লজ্জা, করোনা আতংক সবকিছু ছাপিয়ে ক্ষুধা নিবারণই এখন তাদের কাছে মূখ্য বিষয়।
খাদ্য সহায়তা দেখলেই তাতে হুমড়ি খেয়ে পড়া। খাবার নেই, অপেক্ষার শেষ নেই, অভিযোগেরও যেন অন্ত নেই।
খাবার নিয়ে যারা আসছেন, তারাও হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দুয়েকজনকে ত্রাণ দিয়েই আবার দ্রুত সরে পড়ছেন। ফলে কেউ পাচ্ছে, আবার বেশিরভাগই পাচ্ছেন না।
মিরপুর এলাকায় এরকমই একজন বলছিলেন, “পরপর তিনদিন রাস্তায় দাঁড়াইলাম, কেউতো দেয় না। বাড়িতেও দেয় না, রাস্তাতেও পাই না। তাইলে চলমু ক্যামনে?”
“যারা ভোট দিছে, মিছিল করছে তারাই পাইতেছে। আমরা এইখানকার ভোটার না। আমার নামও নাই লিস্টে। কিছুই পাই নাই।”
এরকম অভিযোগ অবশ্য ঢাকার আরো অনেক এলাকা থেকেই পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু হতদরিদ্র হয়েও সাহায্যের তালিকা থেকে অনেকের বাদ পড়ার ঘটনা কিভাবে ঘটছে এমন প্রশ্নে ঢাকা উত্তরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা বলছেন, সাধ্যমতো সবাইকেই দেয়া হচ্ছে। তিনি বলছেন,
“প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে চাল-ডাল, আলুসহ খাদ্যের ৫শ প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। নারী কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আরো ১শ প্যাকেট দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়ী কিংবা সামর্থ্যবান মানুষেরাও এগিয়ে এসেছেন।”
তিনি বলছেন, “মোটামুটি চতুর্দিক থেকে যেভাবে দেয়া হচ্ছে, মানুষ কিন্তু হাহাকার করবে। যে একাধিকবার পেয়েছে সেই কিন্তু হাহাকার করবে, আরো চাইবে। এরকমটা হচ্ছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি নিজ নিজ এলাকায় অভাবী মানুষ যেন খেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে।”
তবে বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশন এইডে’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলছেন, অনেকের কাছেই যে ত্রাণ পোছাচ্ছে না তার মূল কারণ ত্রাণ কার্যক্রমে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় নেই।
যে যার মতো বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছে।
এছাড়া সামাজিক দূরত্বও বজায় থাকছে না।
তিনি বলছেন, “এখানে যে ত্রাণ কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রেই সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে পরিচালনা করতে পারছে না। এখানে অবশ্যই একটা সমন্বয় দরকার এবং গাইডলাইন দরকার। এখানে এলাকাভিত্তিক কমিটি থাকতে হবে। যেখানে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি থাকবেন। তাহলে তালিকা নিয়ে আস্থাহীনতা থাকবে না।”
তিনি বলছেন, সব পক্ষ যদি কেন্দ্রীয়ভাবে ত্রাণ বিতরণ করে তাহলে একসঙ্গে অনেক মানুষকেই এর আওতায় আনা যাবে। বিবিসি।
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা