একটি দেশের সমাজ কতটা সভ্য সেটি নির্ভর করে দেশটির নারীরা কতটা নিরাপদ এবং তাদের অধিকার কতটা সুরক্ষিত তার উপর। বর্তমানে দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কোনো সভ্য সমাজের নিদর্শন হতে পারেনা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর – ১০ ডিসেম্বর) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, ২০১৯ পালন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, ১ ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী একথা বলেন।
এবছর আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের প্রতিপাদ্য প্রজন্ম সমতা: ধর্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান- এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষের শেষ দিন উদযাপন করছে। এদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, ১ ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচি ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়।
রেখা চৌধুরী বলেন, যদি নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয় তবে কেবল ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। অন্যদিকে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং বিচার বিলম্বিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি দূর করতে হবে।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৯৭০ সাল থেকে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।
তিনি বলেন, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধের জন্য যেসকল আইন প্রণয়ন করা হয়েছে সেগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানান। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন নাগরিক সমাজ, সরকার ওরাষ্ট্রকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনের সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান ও ১৯৯৩ সনে ভিয়েনাতে মানবাধিকার সনদ গৃহীত হওয়ার পরও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। কেননা নারীদের সমঅধিকার অর্জিত হয়নি। নারীদের চলাচলে নিরাপত্তা , শিক্ষায়, চাকুরীতে, মতামত প্রকাশে ও সিদ্ধান্তগ্রহণে সমতা নিশ্চিত হয়নি।
তিনি বলেন, নির্যাতনকারী প্রভাবশালী হওয়ায় এখনো সহিংসতার শিকার নারী ন্যায়বিচার পায় না। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে ধর্ষনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনের পরিমার্জন করতে হবে, যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্টের আইন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক সালমা বেগম বলেন, পত্রিকার খবর অনুযায়ী নারী নির্যাতন বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। অভিবাসী নারীসহ সকল শ্রেনীর নারীর মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে। এবছরের মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য ‘‘ আসুন মানবাধিকারের পক্ষে দাড়াই’’- এর সাথে সংহতি প্রকাশ করে তিনি বলেন আজকে যে নারী নির্যাতন হচ্ছে সেটি বন্ধ করতে হবে। নারী কেবল নারী নয় একজন মানুষ হিসেবে তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক, নারী নির্যাতন বন্ধ হোক।
লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আখতার লাইলী বলেন সংবিধান অনুসারে নারী-পুুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবে সেটি হচ্ছে না। নারী ও কন্যা শিশুর প্রতি বৃদ্ধি পাওয়া সহিংসতার ঘটনায় এটি স্পষ্ট যে নারী ও কন্যা শিশুরা ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তিনি সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য আহ্বান জানান তিনি।
পাশাপাশি তিনি বলেন যতদিন নারীর মানবাধিকার, নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না ততদিন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস বলেন নারীর প্রতি সহিংসতা দূর করতে হলে নারী-পুরুষ কে একত্র হয়ে কাজ করতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা দূর করতে হবে। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার অভাব এখন দেখা যায়। এটি দূর করতে হবে। তিনি নারীর নিরাপত্তার জন্য নারী-পুরুষ সকলকে সম্মিলিতভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগর কমিটির লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিন বলেন নির্যাতনের ঘটনায় যারা দৃঢ়ভাবে সাহসিকতার সাথে বিচার চায় তারা বিচার পায়। নুসরাত তার দৃঢ় অবস্থানের কারণে বিচার পেয়েছে। যারা নির্যাতন করছে তাদের অপরাধ সংঘটনের কারণ খুঁজে বের করে এর প্রতিকার করতে হবে। নারীরা আজ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসছে তবুও নারীরা সমাজে মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
তিনি নারীকে তার ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির জন্য সকলকে এগিয়ে আনার আহ্বান জানান।
অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠনের সহ- সভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মাােলকা বানু, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম সহ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, কর্মী এবং সংগঠকসহ ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. দীপ্তি সিকদার । এসময় একটি র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা