ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার বিধ্বংসী ব্যাটিং-এ সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করলো সফরকারী বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের কাছে ৮ উইকেটে হারলো টাইগাররা। ফলে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা আনলো ভারত।
নিজের ১শতম ম্যাচে ব্যাট হাতে ৪৩ বলে ৮৫ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলেন রোহিত।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ২৬ বল বাকী রেখেই জয় তুলে নেয় ভারত। সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৭ উইকেটে জিতেছিলো বাংলাদেশ।
রাজকোটের সৌরাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেন এ ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক শততম টি-২০ ম্যাচ খেরতে নামা ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। প্রথমে ব্যাট করার সুযোগে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করেন লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাইম।
ইনিংসের প্রথম ওভারে ভারতের পেসার দীপক চাহারের প্রথম পাঁচ বল থেকে মাত্র ২ রান নেন লিটন-নাইম। তবে শেষ বলে লিটন বাউন্ডারি আদায় করলে প্রথম ওভারে ৬ রান পায় বাংলাদেশ।
মাশরাফি, সাকিব, তামিম সর্বোচ্চ কর দিয়ে পাচ্ছেন ট্যাক্সকার্ড
দ্বিতীয় ওভারের শুরুতেই আগ্রাসী হন নাইম। বল হাতে ছিলেন ভারতের বাঁ-হাতি পেসার খলিল আহমেদ। প্রথম তিন বল থেকেই তিনটি চার মারেন নাইম। ঐ ওভার থেকে ১৪ রান আসে। তৃতীয় ওভার থেকে মাত্র ৪ রান পায় বাংলাদেশ। চতুর্থ ওভারে ১টি চারে ৭ রান তুলেন লিটন-নাইম। পঞ্চম ওভারে নাইমের দু’টি চারে ১০ রান পায় বাংলাদেশ। তবে ষষ্ঠ ওভারে জীবন পান লিটন। জীবন পেয়ে দু’টি চার আদায় করে নেন লিটন। ফলে পাওয়া প্লেতে বাংলাদেশের স্কোরে জমা পড়ে বিনা উইকেটে ৫৪ রান। এসময় লিটন ৪টি চারে ১৭ বলে ২৬ ও নাইম ৫টি চারে ২০ বলে ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন।
পাওয়ার প্লে’তে চার বোলার ব্যবহার করেও বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক রোহিত। অবশেষে অষ্টম ওভারে বিচ্ছিন্ন হন লিটন-নাইম। রান আউটের ফাঁদে পড়ে ফিরে যান লিটন। ২১ বলে ২৯ রান করেন তিনি। ভেঙ্গে যায় লিটন-নাইমের ৪৪ বলে ৬০ রানের জুটি।
লিটন ফিরলে ক্রিজে নাইমের সঙ্গী হন সৌম্য সরকার। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় ছিলেন তারা। কিন্তু জুটিতে ১৯ বলে ২৩ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি নাইম-সৌম্য। ৩১ বলে ৩৬ রান করা নাইমকে বিদায় দেন ভারতের স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর।
১১ তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ৮৩ রানে আউট হন নাইম। এরপর ব্যাট হাতে নামেন আগের ম্যাচের হিরো মুশফিকুর রহিম। মুশফিককে সেট হবার সুযোগ দেননি ভারতের আরেক স্পিনার যুজবেন্দ্রা চাহাল। বাংলাদেশের স্কোর শতরানে পৌঁছানোর আগে মুশফিক নিজের রনামের পাশে ৪ রান রেখে ফিরেন।
১৩তম ওভারের প্রথম বলে মুশফিক তুলে নিয়ে ভারতকে খেলায় ফেরানোর পথ তৈরি করেন চাহাল। আর ঐ ওভারের শেষ বলে আবারো উইকেট তুলে নেন চাহাল। এবার চাহালের শিকার হন উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া সৌম্য। উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্প হন সৌম্য। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ২০ বলে ৩০ রান করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান। ফলে ১৩ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১০৩ দাঁড়ায় বাংলাদেশের স্কোর। তাই দুর্দান্ত শুরুর পর ইনিংসের মাঝপথে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় ছিলো বাংলাদেশ। দলকে স্বপ্ন দেখান অধিনায়ক মাহমুদুুল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন। রয়েসয়ে এগোতে থাকেন তারা। ৪৩ রানের ব্যবধানে ৪ ব্যাটসম্যানকে হারানোর পথে রুখে দাঁড়ান মাহমুদুল্লাহ-আফিফ। ১৪ থেকে ১৬ ওভার পর্যন্ত কোর উইকেটের পতন হতে দেননি তারা। তবে ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে বিদায় ঘটে আফিফের।
ভারতের খলিলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাট-বলের সংযোগটা ভালোভাবে ঘটাতে পারেননি আফিফ। তাই কভারে সহজ ক্যাচ লুফে নেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত। ৮ বলে ৬ রান করেন আফিফ। মাহমুদুল্লাহ’র সাথে ২১ বলে ২৫ রান যোগ করেন তিনি।
দলীয় ১২৮ রানে আফিফের বিদায়ের পর ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুড়ে দেয়ার প্রত্যাশায় ছিলো বাংলাদেশ। কারন তখন উইকেটে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। অন্যপ্রান্তে ১৪ বলে ১৯ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি। ইনিংসের শেষ ওভার পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ খেললে, চ্যালেঞ্জিং সম্ভব ছিলো বাংলাদেশের।
কিন্তু ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ভুল শট খেলেই বিদায় নিতে হয় মাহমুদুল্লাহকে। ভারতের পেসার চাহারের বাউন্সার উইকেট ছেড়ে থার্ড ম্যান দিয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন টাইগার দলপতি। ফলে ইনিংসের ৯ বল বাকী থাকতে দলীয় ১৪২ রানে মাহমুদুল্লাহকে হারায় বাংলাদেশ। ৪টি চারে ২১ বলে ৩০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।
এরপর শেষ ৯ বল থেকে মাত্র ১১ রান পায় বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান করে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক হোসেন ৯ বলে ৭ ও আমিনুল ইসলাম ৫ বলে ৫ রান নিয়ে ইনিংস শেষ করেন। ভারতের চাহাল ২টি, সুন্দর-খলিল-চাহার ১টি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১৫৪ রান লক্ষ্যে খেলতে নেমে উড়ন্ত সূচনার আভাস দেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত ও শিখর ধাওয়ান। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৬৩ রান যোগ করেন তারা। এরমধ্যে বিধ্বংসী রুপে ছিলেন রোহিত। ২১ বলে ৪৬ রান করেন তিনি। অন্য প্রান্তে রোহিতকে স্ট্রাইক দিতেই বেশি মনোযোগি ছিলেন ধাওয়ান। তাই তার রান ছিলো ১৫ বলে ১৩ রান।
পাওয়ার-প্লে শেষেও মারমুখী মেজাজ অব্যাহত রেখেছিলেন রোহিত-ধাওয়ান। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে বাংলাদেশের স্পিনার আফিফ হোসেনকে ছক্কা মেরে টি-২০ ক্যারিয়ারে ১৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রোহিত। আর নবম ওভারেই ভারতের রানকে শতরানের কোটা স্পর্শ করান রোহিত-ধাওয়ান জুটি। ওই ওভারে বাংলাদেশের স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেনকে প্রথম তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন রোহিত। ফলে ১০ ওভারে ১১৩ রান পেয়ে যায় ভারত। আর তাতেই নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে দখলে নিয়ে নেয় টিম ইন্ডিয়া।
এ অবস্থায় ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙ্গেন বাংলাদেশের লেগ-স্পিনার আমিনুল ইসলাম। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে ধাওয়ানের উইকেট উপড়ে ফেলেন আমিনুল। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ধাওয়ান। ৪টি চারে ২৭ বলে ৩১ রান করেন ধাওয়ান। আর মাত্র ৬৫ বলে উদ্বোধনী জুটিতে ১১৮ রান যোগ করেন রোহিত-ধাওয়ান।
ধাওয়ানের বিদায়ে লোকেশ রাহুলকে ক্রিজে পান রোহিত। কিন্তু রাহুলের সাথে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। আমিনুলের দ্বিতীয় শিকার হন রোহিত। নীচু হয়ে যাওয়া ১৩তমও ওভারের দ্বিতীয় বলটি ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন রোহিত। ৬টি চার ও ছক্কায় ৪৩ বলে ৮৫ রান করেন রোহিত।
রোহিত যখন আউট হন, তখন জয় থেকে ২৯ রান দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো ভারত। দলের বাকী প্রয়োজন মিটিয়েছেন রাহুল ও শ্রেয়াস আইয়ার। রাহুল ৮ ও আইয়ার ১৩ বলে ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের আমিনুল ২৯ রানে ২ উইকেট নেন।
আগামী ১০ নভেম্বর নাগপুরে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস-ভারত) : বাংলাদেশ : ১৫৩/৬, ২০ ওভার (নাইম ৩৬, সৌম্য ৩০, মাহমুদুল্লাহ ৩০, লিটন ২৯, চাহাল ২/২৮)। ভারত : ১৫৪/২, ১৫.৪ ওভার (রোহিত ৮৫, ধাওয়ান ৩১, আমিনুল ২/২৯)।
ফল : ভারত ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : রোহিত শর্মা (ভারত)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা