২১ বছর বয়সী রোহিঙ্গা যুবক হামিদ হোসেন নিজের মুঠোফোনে দেখছিলেন ‘রোহিঙ্গা টিভি’। কী দেখছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘আঁরার দেশর রোহিঙ্গা কুমের হবর চাইর দে।’ (টিভি দেখছি। আমাদের খবরাখবর দেখছি।)
রোহিঙ্গা টিভি অনলাইনভিত্তিক একটি টিভি চ্যানেল। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এ রকম ১০টির মতো টিভি চ্যানেলের নাম জানা গেছে।
সূত্রমতে, দেশের বাইরে থেকে বেশির ভাগ চ্যানেল পরিচালিত হয়। আর এর জন্য কিছু ফুটেজ পাঠানো হয় রোহিঙ্গা শিবির থেকে। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে এসব টিভি চ্যানেলের একধরনের জনপ্রিয়তা তৈরি হয়েছে।
গত বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, মধুরছড়া ও টেকনাফের নয়াপাড়া, জাদিমোরা শিবির ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের অনলাইনভিত্তিক কিছু চ্যানেলের মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। শিবিরে সাড়ে পাঁচ লাখ লোকের হাতে মুঠোফোন থাকার তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গত মঙ্গলবার বিটিআরসি রোহিঙ্গা শিবিরে ১৩ ঘণ্টা ইন্টারনেট সংযোগ সীমিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়।
শিবিরে সক্রিয় যে অনলাইন টিভিগুলোর নাম জানা গেছে তার মধ্যে আরও রয়েছে, ‘রোহিঙ্গা পিস টিভি’, ‘রোহিঙ্গা নিউজ আরকান টিভি’, ‘আরাকান আর ভিশন’, ‘আরাকান টাইমস’, ‘রোহিঙ্গা নিউজ’, ‘আরাকান টাইম টুডে’, ‘রোহিঙ্গা টিভি’, ‘আরকান নুর’, ‘এএনএ’ টিভি। এসব টিভিতে খবর ও অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় রোহিঙ্গা ভাষায়। সরাসরি ওয়েবসাইটে গিয়ে অথবা ইউটিউবে এসব চ্যানেল দেখা যায়। এ ছাড়া অনেক টিভিরই ফেসবুক পেজ রয়েছে। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব চ্যানেল পরিচালিত হয়। আর রোহিঙ্গা শিবির থেকে এসব চ্যানেলের জন্য কিছু ফুটেজ পাঠানো হয়। এসব ফুটেজ আবার বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে শেয়ার করেছে রোহিঙ্গারা। এসব ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে প্রবাসী রোহিঙ্গা ও শিবিরে থাকা কিছু যুবক। এসব তথ্য প্রথম আলোকে দিয়েছেন রোহিঙ্গা শিবিরের এক সাবেক নেতা।
রোহিঙ্গারা জানায়, এসব চ্যানেলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের নানান খবর, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা রোহিঙ্গাদের তথ্য, বিভিন্ন ইস্যুতে মিয়ানমারের ‘মিথ্যাচার’, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিভিন্ন ‘অপপ্রচারের’ জবাবসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে, গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দ্বিতীয় বার্ষিকীতে উখিয়ায় বড় সমাবেশের খবর গুরুত্ব দিয়ে দেখানো হয়েছে।
হামিদ হোসেন বলেন, ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কী কারণে সফল হয়নি, তা নিয়ে প্রচারিত অনুষ্ঠান তিনি দেখেছেন। প্রতিটি খবরেই মূলত রোহিঙ্গাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা ও কোনো অবস্থাতেই শর্ত না মানলে মিয়ানমার না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
অনলাইন টিভি প্রসঙ্গে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস সংগঠনের সভাপতি দাবিদার মুহিব উল্লাহ বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে স্বদেশের খবরাখবর দেখার সুযোগ নেই। তবে কিছু শিবিরের ভেতরে ডিশ অ্যান্টেনার মাধ্যমে টিভিতে বাংলা ভাষায় খবর ও বাংলা সিনেমা দেখে রোহিঙ্গারা। বাংলা খবর বুঝতে সমস্যা হওয়ায় প্রবাসী কিছু রোহিঙ্গা আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় একাধিক অনলাইন টিভি চালু করেছে।’ তবে এসব চ্যানেলে কোনো ধরনের গুজব বা মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে কি না, সে বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা দরকার বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের টেকনাফের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন।
NB:This post is copied from prothomalo.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা