অনলাইন ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে ভারতের উত্তর সীমান্তে চীনের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি উঠে আসে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে সামরিক প্রযুক্তি সহায়তাসহ চারটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
একই দিন জানানো হয়, চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে শক্তিশালী এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা শুরু করেছে মস্কো। তবে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র নেওয়ায় ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে কি-না, সেটিই দেখার বিষয়। খবর দ্য হিন্দু, এএফপি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের
পুতিন-মোদির বৈঠকের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গণমাধ্যমকে ব্রিফিং করেন। এ সময় ভারতের প্রশংসা করে পুতিন বলেন, ‘ভারত একটি মহান দেশ। আমাদের বন্ধুত্ব স্নায়ুযুদ্ধের আমল থেকে পরীক্ষিত। মোদিকে তিনি বলেন, বৈশ্বিক ইস্যুতে আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব। বৈশ্বিক পর্যায়ে মাদক পাচার, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় যুগপৎ লড়াই করে যাব।’ আফগানিস্তানে চলমান পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পুতিন বলেন, এ বিষয়ে ভারতের সহযোগিতা চায় রাশিয়া।
রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমেই আরও জোরদার হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘গত কয়েক দশকে বিশ্ব অনেক ঘাতপ্রতিঘাত দেখেছে। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অটুট আছে।’
রুশ প্রেসিডেন্টের এই সফরে জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও সামরিক খাতকে প্রাধান্য দিচ্ছে দেশ দুটি। সামরিক এবং সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতাবিষয়ক ভারত-রাশিয়ার আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিশনের (আইআরআইজিসি) ২০তম বৈঠকে গতকাল চারটি চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় উত্তরপ্রদেশের আমেথির একটি কারখানায় ছয় লাখ একে-২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেল উৎপাদন করা হবে। এগুলো ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর জন্য তৈরি হবে। এর আর্থিক মূল্য পাঁচ হাজার কোটি রুপি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, দুই দেশের ১০ বছর মেয়াদি সামরিক সহায়তা চুক্তি।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল সার্গেই সৌজু। এ সময় উভয় দেশের সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনসহ কৌশলগত সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তারা।
উভয় পক্ষ কালাশনিকভ সিরিজের ছোট অস্ত্র তৈরির বিষয়ে সহযোগিতা-সংক্রান্ত চুক্তি সংশোধনের বিষয়েও একটি চুক্তি করেছে; যা ২০১৯ সালে দুই পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত হয়েছিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০তম আইআরআইজিসি-এমঅ্যান্ডএমটিসির কৌশল নিয়ে চতুর্থ চুক্তিটি হয়েছে।
পুতিনের সফরের আগে গত রোববার রাতে দিল্লি পৌঁছান রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সৌজু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ওই বৈঠকে ল্যাভরভও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠককে ‘ইন্ডিয়া-রাশিয়া দুই প্লাস দুই মিনিস্টারিয়াল ডায়ালগ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন রাজনাথ। তিনি বলেন, রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের বিশেষ ও কৌশলগত অংশীদার, যাদের সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এটি বিশ্বাস, পারস্পরিক বোঝাপড়া, বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নতি এবং বহুত্ববাদের সাধারণ স্বার্থের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে।
কোয়াড নিরাপত্তা বৈঠকের মাধ্যমে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যখন ভারতের সুসম্পর্ক হচ্ছে, তখন সোভিয়েত যুগের পুরোনো মিত্রদেশে পুতিনের সফর গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়। তবে এই সফরে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সৌজু ‘অকাস চুক্তি’ ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক প্রতিরক্ষা নিয়ে চলমান বিষয়াদি সম্পর্কে তাদের তথ্য জানা নেই বলে উল্লেখ করেন। এ চুক্তির বিষয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, ওমিক্রনের সংক্রমণে যখন বিশ্বব্যাপী অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে, তখনও ভারত সফর বাতিল করেননি পুতিন। অথচ করোনার অজুহাতে জি২০ এবং জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৬-এ অংশ নেননি এই রুশ নেতা। করোনার মহামারির পর গত জুনে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন পুতিন।
দিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন থিঙ্কট্যাঙ্কের গবেষক নন্দন উন্নিকৃষ্ণান বলেন, এসব কারণে এই সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। রাশিয়া যখন চীনের দিকে এবং ভারত যখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে, পুতিনের এই সফরকে বিশেষ বার্তাবহ বলে মনে করা হচ্ছে।