তাসকিনা ইয়াসমিন
১৯৭১ সালে আমরা যারা ছাত্র ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম। ঐ সময় মুজিব নগর সরকারের অধীনে কিছু আর্মির রিক্রুটমেন্ট হয়। সেই রিক্রুটমেন্টের অধিকাংশ যোদ্ধাই ছিল ছাত্র। বিশেষ করে ফার্স্ট বেঙ্গল, থার্ড বেঙ্গল এবং এইট বেঙ্গলেই এদের নয় হাজারের মতো রিক্রুটমেন্ট ছিল। এদের মধ্যে নাইনটি পার্সেন্ট মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ৭২ সালে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু তাদের নাইনটি পার্সেন্ট মুক্তিযোদ্ধার কোন গেজেট বা সরকারি দলিল হয়নি। ১৯৭২ সালে যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিল বা পাকিস্তান থেকে যারা ফেরত আসল তাদের গেজেটে নাম উঠল। আজও নর্থ বেঙ্গলে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে তারা আজও নাম উঠাতে পারেনি। ২/১ জন আছে যারা ভাতা পায়না। এবং তাদের নামে গেজেটও হয়নি।
বিশেষ করে ২০০৩ সালে যে গেজেট হয়েছে। সেই গেজেটে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের যে চার ডিজিটের সিপাহি নাম্বার ছিল সেটা ডুপ্লিকেট করে অনেক জায়গায় ডুপ্লিকেট মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছে। বিশেষ করে বগুড়ার নন্দীগ্রাম। যেখানে ২৮ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ২৬ জনই ভূয়া। এই একটা সমস্যার মধ্যে এখন মুক্তিযোদ্ধারা আছে। ইবিআরসির যে তালিকাটা আছে আবার কোন তালিকায় নাম আছে নাম্বার নেই, আবার নাম্বার আছে নাম নেই।
যারা আমরা দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখি করে আসছি- এগুলো বলছি। আমি ফার্স্ট বেঙ্গলের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আমার সিপাহী নম্বর ছিল ৫৩৪৬।
৭১ এর বিজয় দিবসের সময় আমরা সিলেটের পাহাড়ের টিলায় অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলাম। ১৬ ই ডিসেম্বরের পরে যখন জানলাম দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে তখন আমরা সিলেটে আসলাম। ওখানেই আমরা ক্যাম্প করে থাকলাম। তারপরে হবিগঞ্জ হয়ে আমরা ঢাকায় আসলাম। আমাদের ক্যাপ্টেন ছিল কর্ণেল জিয়া উদ্দিন, বীরউত্তম। এখনও বেঁচে আছেন। আমার ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান শহীদ হয়ে গেছেন ২৩ নভেম্বর। মেজর হাফিজ ছিল। তারপর ক্যাপ্টেন লিয়াকত আলী, বীর উত্তম বেঁচে আছেন এখন। আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ রমনা রেসকাের্স ময়দানে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গার্ড অব অনার দিয়ে আমি চাকরি থেকে ইস্তফা দেই। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, যে আমি বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দিতে পারলাম। তারপর আমি চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে গেলাম।
এখনকার বিজয় দিবসগুলোতে অনেক সময় গর্বিত মনে হয়। আবার অনেক সময় যখন দেখি আমার থানায় যে রাজাকার, আমার বাড়িঘরে যে আগুন দিয়েছে সেও মুক্তিযোদ্ধা তখন খুবই খারাপ লাগে। এটাই সবচেয়ে বড় কষ্টের। যে আমার ঘরে আগুন দিতে এসেছিল। যে আমার বাড়িতে অত্যাচার করেছে সেও আজ মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আমার সাথেই বিজয় দিবস পালন করছে। এটা খুবই খারাপ লাগে। আজ মুক্তিযোদ্ধা হারিয়ে যাচ্ছে অথচ অমুক্তিযোদ্ধা এসে প্রতিনিধিত্ব করছে। এটা খুব কষ্টের ব্যাপার।
# মুক্তিযোদ্ধা, সদস্য একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা, লেখক।
# সিনিয়র স্টাফ রিপাের্টার, লাল সবুজের কথা ডটকম।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা